শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া





আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া
----------------------------------

স্নেহ ভালোবাসা
------------------------

চেটেপুটে খেলেও
কানা উঁচু থালাতে লটকে থাকে
ভাতের একটি দানা যেনবা বলতে চায় :
পেট ভরেছে তো?



পিপাসা
------------

কত কুয়ো খোঁড়াখুঁড়ি?
কত পুকুর খোঁড়াখুঁড়ি?

নদীতো আর খোঁড়া যাবেনা

সমস্তই,

তোর কানের লতিতে লেগে থাকা
এক ফোঁটা জল।



আলো
----------

হাওয়া আসছে
কেঁপে কেঁপে ওঠে লম্ফর আলো।
কাঁচের আড়ালে থাকে
হ্যারিকেনের সলতে,

জ্বালাও জ্বালাও।

যেমন চশমার আড়ালে চোখ,

জ্বলছেই।


-----১৪ মাঘ১৪২৮
----২৮----১----২০২২


মান
---------------

যতই গর্ত করুক
কপাল তো আর খুঁড়বেনা ইঁদুর।
যতই ধান নিয়ে যাক,
মানতো আর নিয়ে যাবেনা।



বংশধারা
---------------

কীসের ডর?

ঝড় এসে ফিরে গেছে।
ঝড়-বাদলও ফিরে গেছে।
রোদের ঝাঁঝতো আছেই।

ঘরেও আছে একটা টাঙ্গি একটা সাহস

বংশের পর বংশ।


-----১৫ মাঘ ১৪২৮
-----২৯----১----২০২২



হাল
--------

সম্বল বলতে একটা হাল
মাটি থেকে মেঘের চাষ করে।
মন খুলে দিলে, মনেরও চাষ।

বারো মাস।



বড়ি
-----------

রোদে বড়ি শুকোয়

দুঃখেরা শুকোয়

বটুর মায়ের হাতের বড়ি
বিক্রি হবে বাজারে।


------১৬ মাঘ১৪২৮
-----৩০-----১----২০২২


পান থেকে চুন খসলে
পানের আর কি থাকে?
চুনকে থাকতেই হবে লেপ্টে
সঙ্গে একটু খয়ের।

সম্পর্ক থাকবেই,
পানের রসের মতো লাল,

প্রতিদিন।

৩০----১----২০২২



চাষ
-------

চাষের যা হাল খরচ ও দেদার

বরং ছাগল চাষ করলে লাভ আছে

একটা ছাগল ধেনালেই দু তিনটে ছানা
যত বড় করবে করো, আছেই তো
তাততলের হাট

দে বিকে

হাতে আসবে নগদ টাকা।



শিশুর কান্না
------------------

কাঁদে ক্যানে?

অন্নপ্রাশনের থালায় তো আছে,
দুধে ভাতে থাকো।


২২.
থালাতো একটাই
চাঁদের মতো থালা
একবার কামড়ালেই, দুধ।

ছোটটার কান্না থেমে যাবে।

------১৭ মাঘ১৪২৮
-----৩১----১----২০২২


কপাল
-------------

উঠানে গোবর দিতে দিতে
আকাশেও গোবরের টিকা।

আকাশ তো ছেলেরই কপাল।

পুণ্যি হবে।



সাত সকাল
-------------------

পায়রা এসে বকম বকম

সকালবেলা।

সরলার পায়ে পায়ে রোদ নাচে

সকালবেলা।

আজ গাছে গাছে আম মুকুলের মতো সুখ

বুকে ভরে উঠছে দুধ।



কামিন
-------------

কুলির সাথে কামিনের কাজ
হাড়ভাঙ্গা খাটুনি।
ঘরে এসেও চুলা জ্বালানো।
জিরাবার মত ফুরসৎ কই?

শিল - নোড়ারও বিশ্রাম নাই।


------১৮ মাঘ ১৪২৮
-----১---২----২০২২



মাটি
---------

মাটির হাঁড়ি ছেঁদা হয়ে গেছে।

চোখের জলে ছেঁদা হয়ে গেছে মাটিও।

কেউ শোনে না।



সঙ্কট
--------

কয়লাকে কয়লা বললে, শুনছে না কেউ।

দুধকে দুধ বললে, শুনছে না কেউ।

কাজ চাইলেও দোষ।

কী কপাল করেছিরে!

ভাজা মাছ ছলকে যায় জলে।


-----১৯ মাঘ১৪২৮
-----২----২--২০২২



খুঁট
-------

মেঘের খুঁট খুললেই জল।

আমি কোল পুছা
প্রাচীন মায়ের শাড়ির খুঁটে বাঁধা আছি,

আজও।



ঝুল
--------

রাঁধনা শালে ঝুল জমেছে।

ইঁদুর লাফায়।

তেলের ভাঁড় উল্টে গেছে
হলুদ উল্টে গেছে নুনে।

ইঁদুর লাফায়।

রাঁধুনির মুখে ঝুল জমছে।



চাকা
-------

মাটিতে গেঁথে গেছে গরুর গাড়ির চাকা

গাড়োয়ান নেই।
কোথাও গাড়োয়ান নেই, শুধু

গরুর পায়ের তলায় তাপ।

-----২০ মাঘ ১৪২৮
-----৩----২---২০২২



ছেঁড়া কাঁথা
-------------------

যতই বৃষ্টি পড়ুক
যতই বীজ মরে যাক
মাঘ মাসের ঠান্ডায় যতই শীত করুক
ছেঁড়া কাঁথার মত মেঘ
ঘুরে বেড়াবে।



ভাব অভাব
-------------------

থালা-বাটি যেমন আছে
ঘরে একটা জামবাটিও আছে
তার পেট ভরাতে দুধ মুড়ি না হোক
মাড়ভাত চাই।


ঘরে একটা বালতিও আছে
গরুর দুধে না ভরুক
আকাশ থেকে দুইতে হয়
মেঘ-বৃষ্টি রোদ।

ঘরে একটা কুড়ুলও আছে

গাছের রক্ত লাগাই না।

------২১ মাঘ১৪২৮
-----৪----২----২০২২


শ্রম
---------

সারি সারি পিঁপড়ে
টেনে নিয়ে যাচ্ছে মুড়ি।
সারি সারি পিঁপড়ে
টেনে নিয়ে যাচ্ছে আলো।



বঁটি
-------

আঁশ বঁটির কাছে রোদ এসে
স্থির হয়ে আছে।
মাছ এসেও স্থির, নিষ্পলক।


২.
মাছি ওড়ে

মন দেবার মত আহার নেই।

ঘরে নেই বাইরে নেই, শুধু

বঁটিতে লেগে আছে মাছের রক্ত।


-----২২ মাঘ১৪২৮
-----৫-----২----২০২২
----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ