শিল্পের অন্তরালে
-----------------------------
এক ঝুড়ি শাক ।
মাথায় করে নিয়ে এসেছে বুড়ি।
বাজারে। শহর বাজারে।
এক আঁটি শাকের দাম ৫ টাকা।
একটা ছেঁড়া গামছা বুড়ির মাথায়।
রোদ আড়াল করবে।
খালি পা।
বুড়ির মাথার চুল শনের মত।
তেল নেই। পরনে আধা ময়লা ধুতি।
ব্লাউজের হাতা ছেঁড়া।
বুড়ির গ্রামের নাম পিঁড়রা----চাকিরবন। শহর থেকে
প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা।
সেই গ্রাম থেকে খালি পায়ে হেঁটে এসেছে।
বুড়ির কাছে কে কে থাকে?
তার স্বামী যে নেই, তাকে দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়। আমি শুধু ধারণা করতে পারি বুড়ির উঠোনে একটি তুলসী গাছ আছে। থাকতেও পারে
একটি সজনে গাছ।
যেহেতু সজনে শাক বারো মাস পাওয়া যায় এবং খাওয়া যায়। ঘরে কাঁচা সবজি না থাকলে কিংবা নিজেরা
শাকসবজির চাষ না করলে, ভাতের সঙ্গে শুধু সজনে শাক সেদ্ধ অথবা
ভাজা খাওয়া যেতে পারে।
বুড়ির ঘরে ধান যদি হয়ে থাকে, তবে তা ছ মাসের। হয়তোবা। যদি ছেলেপিলে থাকে, তাহলে তারা হয়তো
শহরে কাজ করে। দিনমজুরের কাজ।
এখন বুড়ির ভাবনা------শাক গিলান
না বিকালে তেল--নুন কীসে হবেক?
রোদ বাড়ছে চড়চড় করে।
মাথায় তাত লাগছে।
একজন খদ্দের এসে দর দার করে
বললো,৩ আঁটি শাক ১০ টাকায় দিলে
নিতে পারে।
বুড়ি দিয়েও দিলো।
শাক তো আর ঘরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। যদি না বিকায় দিয়ে যেতে হবে বাজারের গরুকে।তার চেয়ে ভালো কাজ, যা বিক্রি হয়-----যেটুকু পয়সা পাওয়া যায়।
বুড়ি আরো ভাবলো তাকে তো
ছেলা ভুলাও নিয়ে যেতে হবে।
হয়তোবা বুড়ির নাতি-নাতনি আছে।
ছোট। তারা তার ঠাকুমার কাছে
আবদার করে। তাদের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে যেতেই হয়।
জল তেষ্টা পেয়েছে।
বুড়ি টিউ কলের কাছে গিয়ে
পাম্প করে আঁজলাতে নেয় জল।
প্রথমে মুখ চোখ ধুয়ে দু তিন আঁজলা
জল খায়।
মিটে যায় তৃষ্ণা।
তারপরেও বুড়ির চোখে মুখে লেগে থাকে জীবনের তৃষ্ণা।
যা শিল্পে প্রকাশ করা যাবে না।
------১৯ মাঘ১৪২৮
-----২---২---২০২২
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন