মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নীরবতার কাছে // নির্মল হালদার

নীরবতার কাছে // নির্মল হালদার




নীল গল্প করছিল।
কার সঙ্গে গল্প করছে?
রঙ্গনের সঙ্গে।

সকালে উঠেই নীল দেখেছে, গাছে ফুটে আছে দু তিনটে রঙ্গন।
তার কি বাহার! এবং নীরবতা।

এই নীরবতার সঙ্গেই নীল গল্প করছে।

গল্পের বিষয় রঙ্গনের পাতা।

দেবী প্রতিমার চোখের মতো রঙ্গনের পাতা। হাত দিলেই টলমল করে উঠবে জল। 
চোখের জল।

এই জল নিবেদন করা যাবে না কোথাও। শুধু চোখেই থাকবে।
শুধু চেয়ে থাকতে হবে।

নীল গল্প করতে করতে অপরাজিতার কাছে যায়। এইতো সবে ফুটছে অপরাজিতার রঙ। এখন কথা বলা যাবে না। সে মাধবীলতার কাছে আসে।
গাছে অজস্র ফুল।

নিবেদিত হয়ে আছে আলোর কাছে।

নীল কোথায় নিবেদিত?

সে একবার রঙ্গিলার প্রেমে নিবেদিত হতে চেয়েছিল। কিন্তু রঙ্গিলা বেশিদিন
থাকলো না। নীলের মনে হয়েছিল তখন, সম্পর্কে যে বিশ্বাস রাখতে হয়, রঙ্গিলা জানতো না।
আর প্রেম করলে যে, সমস্ত কিছুতেই অধিকার থাকবে,
এও সঠিক নয়।

আমরা অধিকারের ভুল প্রয়োগ করে থাকি-------একথা নীল বন্ধুদের বলে।
মা-বাবাকেও বলেছে।
তার বাবা কথায় কথায় বলে, তুমি জানোনা তোমার ওপর আমার সব অধিকার আছে। তুমি আমার সন্তান।

নীল তর্ক করেনা।

সে বরং বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

তার মায়ের কাজ শুধু ছেলেকে খাওয়ানো। সকাল থেকে রাত অবধি
কেবল বলবে---------খা খা। না খেলে কি হয়। না খেলে কি শরীরে পুষ্টি হয়?
যেনবা খাওয়ালেই, মায়ের অধিকার
ফলানো যাবে।

রঙ্গন মাধবীলতা অপরাজিতা টগর
শিউলি শালুকের কোনো অধিকারবোধ নেই। তাই তারা নীরবে থাকতে পারে। 
তাই তারা অধিকার প্রয়োগ করে না নীলের উপর।

নীলও সহজ স্বাচ্ছন্দে ওই ফুলেদের কাছে কথা বলতে পারে। খুব দুঃখ কষ্টের কথাও বলতে পারে। সকালবেলা চায়ের কথাও সে বলে।

বিশেষ করে যেদিন নীল ভোরে ওঠে
সেদিন সে  রংগন কে বলবেই, কি চা
খাওয়াবে নাকি?
রঙ্গন হাওয়ায় দুলতে দুলতে বলে-----
একটু দাঁড়াও-------চা আসছে।


নীলের মা ছাদের বাগানে চা নিয়ে আসে।

বাগান আর কতটুকু, ৭/৮টা ফুলের টব। নীলের কাছে সাধের বাগান।
কথা বলার বাগান। কি সকাল কি রাত্রি একবার না একবার নীল বাগানে আসবেই। 
সে দেখবে রঙ্গনের  নীরব ভাষা।

নীল দেখে  রঙ্গনের চোখের মতো পাতা। যা নিটোল। যা গভীর।যা সৌন্দর্যময়।

রঙ্গিলা চলে গেলেও নীলের মনে পড়ে। বিশেষ করে রঙ্গনের পাতা দেখলেই। কেননা, সে তো চোখের ছায়ায় ঘুমিয়ে ছিল অনেকদিন। রঙ্গিলার প্রতি আস্থা রেখেছিল বলে পথ হেঁটে ছিল অনেকটাই।

নীল নিজেকে প্রশ্ন করেও উত্তর পায়না--------কেন পথ ভেঙ্গে যায়?
কেন পথ টুকরো টুকরো হয়ে যায়?
ভালোবাসা তবে কি?

ভালোবাসা যদি অপরাজিতার মত
মাধবীলতার মত টগরের মত শিউলির মত নীরব হতো?
কেমন হতো?
নিশ্চয়ই দেওয়া---নেওয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠতো না।

দেওয়া-নেওয়ার ভেতরে বিশ্বাস অবিশ্বাস। এবং সন্দেহ। যা সম্পর্ককে
তিক্ত করে। এই তিক্ততা অন্ধকার বৈ কিছু নয়।

নীল মাঝেমধ্যেই একা একা নিজের ঘরে প্রশ্ন করে-------অন্ধকার
এতো অন্ধকার কেন?

রঙ্গিলা সামনে এসে দাঁড়ালেও সে কথা বলে না। কারণ সে জানে
রঙ্গিলা আজ মিথ্যে।
সে জল খায়। ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। ঘুম আসে না। 

ফুলের কোনো অন্ধকার নেই।
নীল বাগানে যায়। সে  কথা বলে সবার সঙ্গে। মনে মনে শুশ্রূষা পায়।

শুশ্রূষা ফুলের। শুশ্রূষা গাছের।
পাতার। সৌরভের।
হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠে। নীল দেখতে পায়,মা এসে দাঁড়িয়েছে। তার পিঠে হাত রেখে জানতে চায়----------
কীরে ঘুম আসছেনা?
চল্ ঘুমোবি চল্---------আমি মাথায়
হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

নীল ঘুমোবে না।

সে মাকে ছেড়ে আরেক ছাদে চলে যায়। কথা বলতে চায়-----------তারাদের সঙ্গে।

নীরবতার সঙ্গে।

------৮ আশ্বিন ১৪২৮
-----২৫-----৯---২০২১




ছবি : রেখা সহিস

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ