বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২

সুজিত এক আশ্রয়



সুজিত এক আশ্রয়
--------------------------

সুজিত সরকার আমার সতীর্থ। আমার বন্ধু।

সতীর্থ না বন্ধু কোন্ দিকে আমার পাল্লা ভারী? 

কবি সুজিত সরকার স্বতন্ত্র এক ধারা। কারোর কবিতার সঙ্গেই তার কোনো
যোগ নেই। আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, তার কবিতার সঙ্গে অন্য কারোর প্রভাব নেই।

সে কোনোদিকে না তাকিয়ে নিজের কাব্য দর্শনের দিকে হেঁটে যায়।
 
কবি কালীকৃষ্ণ গুহর ভাষায় সুজিত হলো একজন বিশুদ্ধ মানুষ। 

এই বিশুদ্ধ কবি ও মানুষটির সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সখ্য। সে যখন 
কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে,
তখন থেকেই তার সঙ্গে আমার ও সৈকতের পরিচয়।

সুজিতকে দেখলেই মনে হয়, সে একটি ভরসার জায়গা।

আমি ও সৈকত কলকাতা গেলেই
বিশেষ করে দুপুর দিকে তাকে ইনভারসিটির ক্লাস থেকে ডেকে কলেজ স্ট্রিটে আমাদের আড্ডা। কবিতা। খাওয়া দাওয়া। 

বিকেল হলেই সুজিত বাড়ির দিকে রওনা দিতো। তার বাড়ি হাওড়া। কদমতলা।

সুজিত কলেজে চাকরি পাবার 
পরও তার সঙ্গে যোগাযোগ,
বিশেষ করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ অক্ষুন্ন ছিল। আমি কলকাতা গেলেই যেকোনো একজন বন্ধুর বাড়িতে আমার ঝোলা রেখে, যত্রতত্র রাত্রি কাটাতাম।

সুজিতের বাড়ি যেদিন যাবো
স্থির করেছি, তার আগের দিন রাত্রে প্রসূনের কাছে থাকা ।
রাত্রিবেলা।
সুবিধে ছিল একটা, বাগবাজার থেকে লঞ্চে হাওড়া। তারপর হাওড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে সুজিতের বাড়ি কদমতলা।

আমি যখন পৌঁছোলাম তার কাছে সে তখন টিউশনিতে ব্যস্ত। আমি অপেক্ষা করেছি।
 
সুজিত আমার কাছে আসবার আগেই মাসিমা আমাকে চা দিয়ে যেতেন। সুজিতের টিউশনি শেষ হলে আমাদের আড্ডা।

চাকরি এবং বিয়ের আগে থেকেই
সুজিতের এই রুটিন।

সুজিতের ছিল রাত্রিকালীন কলেজ। সে তাই দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর কলেজের জন্য রওনা হয়ে যাবে। আমিও তার সঙ্গে বেরিয়ে যাবো।

আমি মনে মনে স্থির করে নিয়েছি,
আজ কোথায় যাবো।
ঝোলা তো পড়ে আছে বাগবাজারে। থাকুক গে। কোনো
এক বন্ধুর কাছে গেলেই হবে।

সবার দুয়ার আমার জন্য অবারিত। 

আমরা দু'জন দুদিকে যাবো
তার আগেই সুজিত আমাকে
কিছু টাকা দিয়েছে। এই টাকা দেবার বিষয়টি সুজিতের বরাবরের অভ্যেস।

জবার সঙ্গে বিয়ের আগে ও পরে
সে একই রকম ছিল। এখানে বলতেই হবে, সুজিতের মা-বাবাও আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করতেন। তার দাদা বৌদিও ভালোবাসতেন বৈকি। 

না ভালোবাসা পেলে, এতদুর কি হেঁটে আসা যায়? 

সুজিতের প্রথম যৌবনের পত্রিকা
"শোণপাংশু " র আমি নিয়মিত লেখক। এবং"শোণপাংশু"
থেকেই আমার  ও সৈকতের প্রথম বই।
সুজিত খুবই সহযোগিতা করেছিল।
আমার দ্বিতীয় কবিতার বইটিও
সুজিতের সহযোগিতায়
" শোণপাংশু " থেকে প্রকাশিত।

"শোণপাংশু" বন্ধ করে সুজিত নতুন উদ্যমে আরও একটি পত্রিকা  "কবিকৃতি "প্রকাশ করতে থাকে নিয়মিত।

"শোণপাংশু" ছিল ছোটখাটো কাগজ। কবিকৃতি সেই তুলনায় বিপুল। অসম্ভব সুসম্পাদিত একটি পত্রিকা। এখানেও আমি লিখেছি। 

সুজিত প্রথম থেকেই কোনো ভিড়ে ছিল না। কোনো দলেও ছিল না। মুক্ত মনের এই মানুষটির সান্নিধ্য অথবা এই বন্ধুটির সঙ্গসুধা আমাকে ঋদ্ধ করেছে। 

এই সেদিনও কালীদা আমার কাছে তার প্রশংসা করছিলেন।
প্রশংসা করছিল আমাদের আরেক বন্ধু ও সতীর্থ হেমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।

সুজিতের সঙ্গে গল্প করলে মনে এক আরাম পাওয়া যায়।
"আরাম "শব্দটি না বলে বলা যায়
আশ্রয় পাওয়া যায়।

আমার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। অথচ মাঝেমধ্যেই তার কথা মনে পড়ে।
যেমন দৈনন্দিন জীবনে সব ফুলের কথা মনে পড়লেও রক্তকরবীর কথা মনে পড়ে না।

আমি যা বুঝেছি তা হলো,
রক্তকরবী বাজারের নয়। সুজিতের এখানেই জিৎ। 

 " সুভদ্র " শব্দটি সুজিতের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবেই মানানসই।  সে শাল গাছ না হয়েও শাল গাছের ঋজুতা  যা আমাকে আকৃষ্ট করে। 

সুজিতকে দেবার মত আমার কাছে কিছুই নেই। যদি আমার সঞ্চয়ে থাকতো একমুঠো চাল
তাকে দিয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করতাম।

সুজিত তো  হাত পাতেনি আমার কাছে। আমারই মনে হয়েছে কেবল, সুজিতকে   আমি ভালোবাসাও দিতে পারিনি। কিন্তু আমার ব্যাপারে সে কোনো কার্পণ্য করেনি।কেন না, তার আকাশ যে বড়।

আমি শুধু ঝরা পাতা কুড়িয়ে কুড়িয়ে বলে যাই--------
ঝরা পাতা গো, আমি তোমারি দলে---


--------১০ শ্রাবণ ১৪২৯
-------২৭----৭----২০২২
------- নির্মল হালদার









ছবি : সংগৃহীত 




















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ