তার শিল্পসৃষ্টির কাছে সরস্বতী বীণা বাজিয়ে চলেছেন
-------------------------------------------------------------------
পুরুলিয়ার প্রকৃতি পুরুলিয়ার সংস্কৃতি পুরুলিয়ার মানুষকে
বাইরের মানুষ প্রথম দেখতে পেলো সন্তোষ রাজগড়িয়ার ফটোগ্রাফিতে।
কুদরুং একটি উপেক্ষিত ফল।
যা থেকে টক বা চাটনি হয়ে থাকে। যা শীতের সময় পুরুলিয়ার রুখা টাঁড়--টিকরে
তার লাল রঙ শোভা পায়। যা
সন্তোষ বা সন্তু প্রথম নিয়ে এলো
মানুষের সামনে।
একটি গাছের গায়ে একটা সিঁড়ি
ঠেসানো আছে। খালি চোখে কোনো অর্থ বহন করে না। যখনই সন্তুর ছবিতে দেখতে পেলাম, মনে হলো ,ওই সিঁড়ি দিয়ে আমার অভিমান উঠে গেছে উপরের দিকে। আর মেঘ হয়ে গেছে। অথবা কাঁসাইয়ের বালি খুঁড়ে এক রমণী জল খুঁজছে, পাশেই দেখা যাচ্ছে এক সারি রমণীর মাথায়
হাঁড়ি। যেনবা এই রমণীরা অনন্ত কাল ধরে জল অন্বেষণে।
নদীর বালিতে চিকচিক করছে তৃষ্ণা।
হ্যাঁ সন্তুর ছবি তৃষ্ণা জাগিয়ে দেয়।
ছবির পর ছবিতে যেতে যেতে
এক ভ্রমণ।
মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সঙ্গে
জীবনযাপনের সঙ্গে ভ্রমণ।
যে মহিলাটি ঝুড়ি বুনতে বুনতে
চেয়ে আছে একটি হাঁস এবং একটি রাজহাঁসের দিকে , মনে হচ্ছে আমিও শুনতে পাচ্ছি তাদের কথোপকথন। কিংবা মনে হচ্ছে,
ঝুড়ি বুননের পরিশ্রম লাঘব করতে এসেছে দুটি হাঁস।
এ রকম অনেক ছবি দেখেছি তার। তার শিল্পসৃষ্টির কাছে বারবার শিল্প-সরস্বতী বীণা বাজিয়ে চলেছেন। সে সুর শুনতে পাই, সন্তুর অনুরাগী হিসেবে।
মৃদু ভাষী এই মানুষটির কাছে গিয়েও বলতে পারিনি--------
তোমাকে কুর্নিশ।
তোমার শিল্পসৃষ্টির কাছে আমার কুর্নিশ। তুমি সেই বটবৃক্ষ যে ঝুরি নামিয়ে মাটির কথা শোনো। গভীরের কথা শোনো। নিজেকে বারবার সৃষ্টি করো ।
কাশবনে শিশুরা বেলুন ওড়ালে
সন্তোষ রাজগড়িয়া দেখতে পায়
আলোর কণা। অথবা বলতে পারি, রঙিণ নিশান।
এগিয়ে চলার পথ।
নতুনের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এগিয়ে চলার পথ।
ফটোগ্রাফির সীমানায় এই সমস্ত
বাঁচার ছবি আমরা কি আগে পেয়েছি? এবং সেই বাঁচা গ্রামীণ জীবনের পটভূমিতে রব হয়ে উঠেও নীরব।
নীরবতাও কথা বলে।
সন্তুর ছবি দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। তার বেদনার ছবিও জ্যান্ত জীবনের মুখরতায় প্রকাশ পেয়ে থাকে।
ভারতবর্ষ ও ভারতবর্ষের বাইরে থেকে তাকে সম্মানিত করেছে অনেক পুরস্কার। তারপরও সে
মাটিতে পা রেখে চলে।
প্রকৃত শিল্পীর এই পরিচয় তাকে
মহত্ব দান করে। সে জানে, সাফল্যের চূড়ায় উঠেও মেঘ তার সঙ্গী হতে পারে। কিন্তু কখনোই
মেঘ তার নয়।
ফটোগ্রাফির জমিতে সন্তোষ রাজগড়িয়া একটি নাম। একটি প্রতিষ্ঠান।
সন্তোষ রাজগড়িয়ার ছবির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের অনেক ফটোগ্রাফার পুরুলিয়াতে
ছুটে এসেছেন। এখনো ছুটে আসেন।
তার ধারা বহন করছে পুরুলিয়ার
এক ঝাঁক আলোকচিত্রী। আশা করবো তারাও একদিন নিজের নিজের জায়গায় নিজের সৃষ্টিকে
প্রতিষ্ঠা করবেন।
পুরুলিয়ার তরুণ আলোকচিত্রীদের মধ্যে বরুণ রাজগড়িয়া ব্যতিক্রমী একজন।
সে শুধু পুরুলিয়ার আনাচে কানাচে ঘুরে পাখিদের ছবি ক্যামেরায় ধরে রাখে।
তার পাখিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার
আমার একটা ইচ্ছে-----তীব্র হয়ে আছে।
পাখি মানেই সৌন্দর্যের এক সংজ্ঞা। যেমন কুদরুং ফল
সন্তুর ক্যামেরায় সৌন্দর্যের সীমানা ছাড়িয়ে দিগন্তের কাছে।
সন্তুর ক্যামেরা একটি চরিত্র। আর সন্তু নিজে আরেকটি চরিত্র। দু'জন মিলে যে রসায়ন তৈরি করে , তার
তুলনা খুঁজতে কোথাও যাবো না। বরং সন্তুর ললাটে আঁকি জয়তিলক।
সন্তুর কথা বলতে বলতে মনে হলো, আমাদের এই রাজ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান বিষয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ আছে। যাদবপুরেই ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশনের ক্লাস হয়ে থাকে। মানবীবিদ্যার ক্লাস হয়।
তাহলে, পুরুলিয়ার সিধু কানহু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে একদিন কিংবা দু'দিন ফটোগ্রাফির ক্লাস হতে পারে না?
উৎসাহী ছেলেমেয়েরা ফটোগ্রাফি শেখার এবং চর্চার একটা সুযোগ পাবে। যেখানে সন্তোষ রাজগড়িয়ার মত আলোকচিত্রীরা ক্লাস নিতে পারবে।
স্বপ্ন নয় এই সত্যি কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দাবি ভুলে যাওয়া চলবে না।
পুরুলিয়াতে সন্তোষ রাজগড়িয়ার মত একজন গুণী শিল্পী আছে, আমাদের ভুলে যাওয়া চলবে না।
আম পল্লবের ছোঁয়ায় সন্তোষ রাজগড়িয়া তো এগিয়ে যাচ্ছে তার লম্বা পা ফেলতে ফেলতে।
---------৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
--------২১----৫----২০২২
--------নির্মল হালদার
ছবি : সন্দীপ কুমার
________________________________________________
সন্তোষ রাজগড়িয়ার আলোকচিত্র
























কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন