বাংলাবাজারের তোয়াক্কা না করে,
পাঠকের দিকে না তাকিয়ে,
একটার পর একটা বই,
গল্পের বই, উপন্যাস প্রকাশ করে চলেছেন স্বপন চক্রবর্ত্তী।
স্বপন আদ্যোপান্ত এক সাধারণ মানুষ। আসলে অসাধারণ মানুষ।
আর তাই তার কাছে দাঁড়াতে কোনো জড়তা কাজ করে না।
যে কোনো বিষয়ে অথবা বিপদে
স্বপন চক্রবর্ত্তী। তিনি আছেন।
ভরসা দেবেন বলেই, সব সময় আছেন।
প্রকাশ্যে নয় আড়ালে আছেন।
আড়ালে থাকতেই ভালোবাসেন।
নিজের লেখালেখি নিয়ে কোথাও কোনো দিন তাকে সোচ্চার হতে দেখিনি। কোনো প্রকাশকের কাছে গিয়ে দরবার করেননি যে
আমার বইটা প্রকাশ করুন।
তিনি নিঃশব্দ।
নীরবে তার সৃজন কাজ। নিভৃতে
লেখালিখি। যা নিয়ে কখনো কোনোদিন বাংলাবাজারের বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার দিকে
ছুটে যেতে দেখিনি তাকে।
শুধু কি বাণিজ্যিক কাগজ?
ছোট কাগজের সংকীর্ণতার দিকে
অথবা রাজনীতির দিকেও তিনি ছিলেন না কখনো। আজও নেই।
তিনি বিশ্বাস করেন, অবশ্যই আমার মনে হয় , নীরবে নিজের কাজ করে যাওয়া। এবং সেই তো প্রকৃত কাজ। প্রধান কাজ।
সেইতো সাধনা।
যিনি রবীন্দ্রনাথের গানে সাবলীল।
যিনি রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য গান
নিজের অন্তরে গেঁথে এবং গান গাইতে গাইতে সুরের সৌরভ ছড়িয়ে থাকেন।
তিনি স্বপন চক্রবর্ত্তী।
তার গদ্য শৈলীর কথা নাই বা বললাম, তার গল্প উপন্যাস পড়তে পড়তে কখনো কখনো মনে হয়েছে কবিতা পড়ছি।
তার উদারতার কাছে একটি আকাশ সব সময়। তার উদারতার কাছে এক ভিখারিও সব সময় ।
তিনি ফিরিয়ে দেন না।
আমার মনে হয়, তিনি যখন
কারোর হাতে দান করেন একটি পয়সা, তিনি তখন জানেন
বিনিময়ে ফেরৎ পাবেন একটি
আনন্দময় হাসি। অথবা উজ্জ্বল মুখ।
সে কাজও তো অনুচ্চারিত থাকে।
পুজোর সময় আত্মীয় স্বজন থেকে আরম্ভ করে কাগজের হকার , সবজিওয়ালা মাছওয়ালাকেও নতুন জামা কাপড়ের জন্য সবাইকে কিছু না কিছু অর্থ দিয়ে থাকেন। শুধুমাত্র
সবার হাসিটুকু দেখবেন বলেই।
প্রত্যাশা করেন না।
পাখিতো চেনেন। অনেক অনেক গাছপালা চেনেন। তিথি নক্ষত্র চেনেন। জীবজন্তু কীটপতঙ্গের প্রতিও তার টান লক্ষ্য করেছি।
সবাই ভালো থাকুক তার এই মনোভাব তাকে আরো ঐশ্বর্যবান করেছে। তিনি যে তাকিয়ে থাকেন
প্রকৃতির দিকে।
তার প্রিয় ঋতু গ্রীষ্ম।
পুরুলিয়ার প্রতি সব সময় তিনি আকর্ষণ বোধ করেন।
একসময় পুরুলিয়াতে চাকরি করতে এসে তিনি হয়ে গেলেন পুরুলিয়া প্রেমী।
পুরুলিয়াকে নিজেতো ভালবাসেন
সেই সঙ্গে আরো অনেক বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনকে
পুরুলিয়াতে নিয়ে এসে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরুলিয়া দেখান। পুরুলিয়ার প্রকৃতি দেখান।
এক এক সময় মনে হয়েছে,
স্বপন চক্রবর্ত্তী নিজেও এক প্রকৃতি। শুধু দিতেই ভালোবাসেন।
আমাকে যে কত বই দিয়েছেন।
আমি নিজেও তার কাছে কত বই খুঁজেছি। পেয়েও গেছি।
আবার যে সমস্ত বই পড়া হয়নি আমার তা তিনি পড়িয়েছেন।
যেমন সতীনাথ ভাদুড়ীর অচিন রাগিনী। তারাশঙ্করের কবি'। আরো কত বই সব নাম মনে পড়ছে না।
সম্প্রতিকালে রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন বিষয়ে অনেক বই তার কাছ থেকেই আমার পাওয়া।
আমি নিজে তাকে কিছুই দিতে পারিনি। কেবল নিয়ে থাকি।
তার প্রতি নির্ভর করে থাকি।
হাঁসগুলি করে কোলাহল মনে পড়লেও মনে পড়ছে না প্রথম লাইনটি। স্বপনকে ফোন।
আমি জানি তিনি বলতে পারবেন।
সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ কবিতাটির ছবি
আমার মোবাইলে পাঠিয়ে দিলেন।
উদাহরণ ঢের ঢের।
একটা কথা তো বলতেই হবে, তিনি যখন পুরুলিয়াতে চাকরি
করছেন তখন আমার দিদি বেঁচে।
দিদি স্বপনের কাছে আব্দার করতো, কলকাতা থেকে গঙ্গা জল এনে দিতে হবে।
স্বপন যে কতবার এনে দিয়েছেন।
মনে পড়ে আজ।
তিনি গঙ্গার মতোই বহতা।
দুপারের জনপদ দুপারের ফসল
এবং তার শব্দ চেনেন। পিপাসাও
চেনেন।
সহজেই তার কাছে বলে ওঠা যায় : জল দাও---জল দাও--
------৯ বৈশাখ ১৪২৯
-----২৩----৪----২০২২
------বেলা: ৩---৩৫
------নির্মল হালদার
ছবি : সন্দীপ কুমার
আরও পড়ুন










কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন