পাখির ভুবনে
আমার কাঁধে কার ভার নিয়েছি?
সংসারের হাল তো আমার কাঁধে নেই। আমার কাঁধে নেই একটিও খড়ের আঁটি।
তবে অনেক ভালোবাসা বইতে হয়। দিনের পর দিন। ঋতু থেকে আরেক ঋতু।
বিরহ বেদনাও আমার সঙ্গে।
আকাশের ভার আকাশেই থাকে।
পাখির ভার?
পাখি তো কারো কাঁধেই ভারি হয়ে
ওঠে না। পাখি শুধু উড়াল। পাখি শুধু সৌন্দর্য। যা দেখতে পেয়েছে,
সব সময় দেখে বরুণ ।
বরুণ রাজগড়িয়া।
২০১৩ থেকে সে পাখি দেখতে শুরু করেছে। এখন অব্দি পুরুলিয়া জেলা ও বাঁকুড়া জেলা মিলে সে পেয়েছে ৪৩৬ রকমের পাখি।
বনে বাদাড়ে নদীর পাড়ে পাড়ে
ঘুরে ঘুরে বরুণ আবিষ্কার করেছে
পাখির ভুবন।
পাখি মানেও তো একটা ভোর।
পাখি মানেও তো এক কাব্য।
পাখি মানেও তো এক সৃষ্টি। এবং
সেই সৃষ্টির ভেতর দিয়ে যেতে যেতে বরুণ দেখতে পায় গাছপালা কীটপতঙ্গ। আলো ছায়া। বাতাস। কচি পাতার সঙ্গে শুকনো পাতা।
পুরুলিয়াতে ফটোগ্রাফি চর্চায়
সন্তোষ রাজগড়িয়া একটি ঘরানা।
তাকে বিন্দুমাত্র অনুসরণ না করে,
বরুণ অর্জন করেছে নিজস্বতা।
তার স্বকীয় পথেই সে দেখতে পেয়েছে বকের মুখে মাছ। প্যাঁচাদের বিস্ফারিত চোখ। বাবুই পাখির ঘরে ফেরার আকুতি। নিঃসঙ্গ পাখিও আছে। আর নিঃসঙ্গতা বরুণেরও আছে। সে তাই পাখির সান্নিধ্যে নিজের নিঃসঙ্গতা দূর করার চেষ্টা করে।
পাখি কী সঙ্গ দেয় বরুণকে?
বরুণ রাজগড়িয়াদের পরিবারের প্রতি আমি আত্মীয়তা অনুভব করি। তাদের পরিবারেই একইসঙ্গে চারজন সৃজনশীল মানুষ।
একই পরিবারে এত ঐশ্বর্য সাধারণত দেখা যায় না।
তার সঙ্গে ঢুকে পড়েছে পাখি আর পাখি। পাখির সুরে সুরে অসীমের গান।
পক্ষী বিশারদ সেলিম আলির আত্মা সুখী হবে নিশ্চয়ই। তাঁকে অনুসরণ করেই নতুন প্রজন্ম পাখির পিছনে ছুটছে।
ফটোগ্রাফির জগতে বরুণ পুরস্কৃত হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, সেইসব পুরস্কারের চেয়েও বড় পুরস্কার, সে অনেক রকম পাখির প্রাণের সঙ্গে নিজের প্রাণ সংযোজিত করেছে।
আমাদের গৌরব বরুণ ঘরের ছেলে। তাকে আমি বলবো----কবুতর।
কবুতর উড়ে উড়েও আমাদের ঘরে--দুয়ারে থাকে। ফুর্তিতে থাকে।
পালক ফেলে চলে যায়। আসেও।
ঘরের কার্নিশে একা একা ভেজে।
ভোর হতে হতেই আমাকে ডাকে।
আমাকে বলতেই হয়---আমি শুধু
পাখি আঁকতে পারি। পাখি ছাড়া
কি আঁকার আছে!
-------২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
-----৮---৬---২০২২
-----নির্মল হালদার
পাখির ছবি : বরুণ রাজগড়িয়া





































কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন