দুলিয়া এক প্রেমিকা প্রকৃতির কাছে
--------------------------------------------
আশ্রম কন্যা? চঞ্চল বালিকা?
কবি? প্রজাপতির উড়াল?
কী যে বলবো তাকে?
আমার কাছে সে শুধু নদীর জল খেলানো বন্ধু। আমার কাছে সে শুধু দুলিয়া।
দুলিয়া মানে সংঘমিত্রা ঘোষ।
বোলপুর শান্তিনিকেতনে গুলু নামেই তার পরিচিতি অথবা খ্যাতি।
তার খ্যাতির দিকে আমি কি যাবো? আমি শুধু যেতে চাই তার কাছেই।
মানুষ সংঘমিত্রা ঘোষের কাছে। আমি যেতে চাই, দুলিয়ার কাছে।
কথা বললেই, ঘাসের কোমলতা।
কবে কোন্ যুগে চিত্রকর পার্থপ্রতিম দাস আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। এবং আলাপের সঙ্গে সঙ্গে আমি বলেছিলাম, সংঘমিত্রা নামটা তোর চেহারার সঙ্গে মানায় না। আমি বলেছিলাম, তুই দুলিয়া।
তো পুরুলিয়ার সবার কাছে
সে দুলিয়া। আমার তরুন বন্ধুরা
তাকে বলে---- দুলিয়াদি।
এখানে আমার একটা কথা আছে,
দুলিয়া কারোর দিদি নয়। কারোর পিসি নয়। দুলিয়া শুধু এক প্রেমিকা প্রকৃতির কাছে।
প্রকৃতিও এক প্রেমিকা।
দুলিয়াও এক প্রেমিকা। এক সৌন্দর্য। তাকে মানায় না কোনো চাকরি।
সে তো কবি। যদিও তার কবি চরিত্র কোথাও প্রকাশিত নয়। তাকে কবিতার বই করতে বললে,
সে নিজেকে আড়াল করে। কখনো-সখনো সে সোশ্যাল মিডিয়াতে বীরভূম বিষয়ে লেখালেখি করে। এই বিষয়েও
সে কোথাও চিৎকার করে না।
তার রূপ--সৌন্দর্যের মতই তার কাজকর্ম শান্ত। চুপচাপ।
পুজোর সময় আমি তার কাছে
ও তার বন্ধু বাদশার কাছে পুরুলিয়ার নাচনি শিল্পীদের জন্য শাড়ি চাই।
দুজনেই উদারতার সঙ্গে আমাকে দেয়। এবং প্রচার করতে মানা করে।
২০০৮ থেকে দুলিয়া চাকরী করলেও এক পয়সাও তার সঞ্চয় নেই। কারণ, সে বিলোয়। ঘুরেও বেড়ায়।
তার ঘুরে বেড়ানোর সঙ্গী আমি কখনোই হতে পারিনি। অথবা বলতে পারি, ভ্রমণ করার যোগ্যতা আমার নেই।
আমি যে তার বন্ধু হয়েছি, এ আমার প্রাপ্তি অবশ্যই। উপরওয়ালা কখনো কখনো কিছু
জুটিয়ে দেয়। যা পথ চলতে চলতে গাছের ছায়ার মত। ঝোরার মত।
আমার তৃষ্ণা নিবারণ হয়।
তৃষ্ণা যদিও সব সময়।
দুলিয়া স্কুটি উড়িয়ে নিয়ে গেলে
ধুলো ওড়ে। আমার তৃষ্ণা আরো বেড়ে যায়।
আমার শান্তি নিকেতন তাই শুধু রবীন্দ্রনাথের জন্য নয়। কোপাইয়ের জন্য নয়। আমার শান্তিনিকেতন দুলিয়ার জন্যেও।
এই দুলিয়া অবশ্যই কৃপণ। আমার বন্ধু রামানুজ মুখোপাধ্যায় বলে---- গুলুদি আমাদের মত
গরিব--গুরবোদের কবিতা দেয় না বা দেখায় না।
তাকে শুধু দেখতে পায় লালমাটির মানুষ। যাদের কাছে সে মেয়ে নয়। একটি মানুষ।
নানুরের পাশে রয়ান দুলিয়ার গ্রামের বাড়ি। সে ভুলে যায় না। আর তাই শিকড় তার সঙ্গে সঙ্গে চলে। কখনোই সে মাটিকে ভুলে যায় না। বিশ্বভারতী শিক্ষাসত্রে দুলিয়ার
শুরু। মাস্টার্স অবধি করে পিএইচডি করে, সে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে তার ভালোবাসার স্কুটি কিংবা ঘোড়ায় উঠে কোপাইয়ের পাড়ে গুনগুন করে কবিতা। রবীন্দ্রনাথের গান।
রবীন্দ্রনাথের গান?
কোথাও কোনো আড্ডায় সে
গান করে না। কোনো ভাবেই নিজেকে প্রকাশিত করে না। এই যে আমার আড়াল করা বন্ধুর মুখ, বিজ্ঞাপন থেকে দূরে থাকা বন্ধুর মুখ, আজকের দেখানেপনা সময়ে আমার জোনাকি।
মনের আনন্দে নাচে। আলো দেয়।
আমি দুলিয়ার কাছে হাত পেতে আছি-------সে আমাকে ভিক্ষা দেবে এক মুঠি আলো বাসা।
আমিও যে যুগের পর যুগ মাধুকরীতে।
-------৮ আষাঢ় ১৪২৯
-----২৩-----৬----২০২২
-------নির্মল হালদার
ছবি : সংগৃহীত












কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন