সোমবার, ২০ জুন, ২০২২

যে তপন প্রকাশিত হয়নি




যে তপন প্রকাশিত হয়নি 
------------------------------

মানবাজার অনেকদূর হলেও অনেক কাছে। মানবাজার থেকে সারাদিন অনেক বার ফোন।

তপনের ফোন।

দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করলাম কিনা একমাত্র তপন খোঁজ করে। প্রতিদিন।

প্রতিদিন সকালেও তপনের ফোন। তার ফোন না পেলে আমারও ফাঁকা ফাঁকা লাগে।

তপনের ফোন পেলে আমি মামাবাড়ির গন্ধ পাই।

মানবাজারেই আমার মামার বাড়ি। আমার মায়ের নাড়ি মানবাজারেই পোঁতা আছে।
সেই মানবাজারেই তপন, তপন পাত্র থাকে।

তপন কি অধ্যাপক? তপন কি কবি? তপন কি লোকসংস্কৃতিবিদ?

তপনের যে কি পরিচয় দেবো, আমি খুঁজে পাইনা। খাপরা শাকের উৎপত্তি কোথায় তপনের কাছে জানতে চাইলে, সে সহজেই
বলে দেয় ‌। চন্দ্রমল্লিকা কোন্ মাটিতে বিকশিত হয়ে উঠবে, তপনের কাছে জানা যাবে। গাঁদাল পাতার উপকারিতা বিষয়ে সে তিন পাতা বলে দিতে পারবে।

পুরুলিয়া তথা মানভূমের ভাষা নিয়ে তার বিশ্লেষণ একটি তথ্যধর্মী বই হতে পারে। মানভূমের লোক ছড়া, খেলাধুলো, নাচনি নাচ ,ছো নাচ, আদিবাসী বিবাহ সম্পর্কেও তার বিশদ জ্ঞান পুরুলিয়ার মানুষ জানতে পারেনি। তার কারণ, এই সমস্ত বিষয়ে তার কোনো রেকর্ড নেই। কিংবা বই নেই।

তপনের অনেকগুলি কবিতার বই থাকলেও লোক সংস্কৃতি বিষয়ে একটিও বই নেই।

পুরুলিয়া জেলায় লোক সংস্কৃতির নামে অনেক অনেক ভুল তথ্য প্রকাশিত হয়ে থাকে। সেইখানে তপন উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে এলে এবং বই করলে, সঠিক ইতিহাস
জানতে পারবে সবাই।

সলাবত মাহাত ও সিন্ধু বালা দেবীর সম্পর্কেও তপনের কাছে ইতিহাস আছে বৈকি।

যে ইতিহাস কথা বলে।

যে ইতিহাসকে দমন-পীড়ন করে চেপে রাখা যায় না। কেননা, পুরুলিয়া জেলায় সলাবত মাহাত ঝুমুর গানের একটি ইতিহাস।
নাচনি নাচের ক্ষেত্রে সিন্ধু বালা দেবীও একটি ঘরানা।

লোকজীবনের আদি ও অকৃত্রিম
বিষয়গুলি তপনের কাছে সংরক্ষিত। কিন্তু সে সামাজিক কর্মে সব সময় ব্যস্ত। চক্ষু শিবির থেকে রক্তদান শিবিরে তপন হাজির।

মানবাজারে রবীন্দ্র জয়ন্তী নজরুল জয়ন্তী ও ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন তপন ছাড়া কেইবা করবে!

মানবাজারে যারা কবিতা চর্চা করে, তাদের একত্রিত করে কবি সম্মেলন তপন ছাড়া কেই বা করবে!

কে হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছে না, তপন ছুটে গেল। মেয়ের বিয়ের টাকা জোগাড় হচ্ছে না, তপন ছুটে গেল।

তপন সমাজকর্মী?

অধ্যাপনার চাকরি করেও তপনের মধ্যে অধ্যাপক সুলভ আচরণ লক্ষ্য করা যায় না। সে সবসময় উপকার করার জন্য তৈরি হয়ে থাকে।

কোনো তরুণ কবির বই প্রকাশে তপনের সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন হয়।

মানবাজারের মানুষও তপনকে ভালোবাসে খুব। তপনের যেকোনো অনুষ্ঠানে সবাই উপস্থিত থেকে তপনকে উৎসাহিত করে। এবং তপন কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করলে কারোর কাছ থেকেই এক পয়সা
অনুদান নেয় না। সমস্ত ব্যয় ভার তপন নিজেই করে।

এই এক তপনের সঙ্গে বা তপন পাত্রর সঙ্গে আমার যে পরিচয় আছে বন্ধুত্ব আছে, এ আমার প্রাপ্তি।

ঘরের উঠোনে একটা নিমগাছ থাকার মত । কেন না, নিম গাছের হাওয়া নিরাময় করে। এবং নিম থেকেই নিমাই। প্রেম বিলিয়ে থাকে।

তপনের তাপও আমাদের বাঁচায়।


--------৫ আষাঢ় ১৪২৯
-------২০----৬----২০২২
-------নির্মল হালদার



তপন পাত্রের এই পান্ডুলিপিগুলি এখনো প্রকাশিত নয়।


(১) লোকসংস্কৃতি লোকযান ( মানভূমের সারা বৎসরের সমস্ত লোকযাপনের আলোচনা)

(২) বারো মাসে তের পরব( সাঁওতালদের ১২ মাসের সমস্ত পরবের বর্ণনা)

(৩) মানভূমের লোকাচার

(৪) মানভূমের অন্তরে কৃতজ্ঞতার সংস্কৃতি

(৫) বাঁধনা : বন্দনার উৎসব

(৬) মকর : মানভূমের জাতীয় উৎসব

(৭) মানভূমের লোকক্রীড়া

(৮) ছো নাচের ইতিবৃত্ত

(৯) পশ্চিম সীমান্ত বাংলার লোকসাহিত্য

(১০) লোকসাহিত্যে কৃষিকর্ম কৃষিধর্ম

(১১) ইঁদ্-ছাতা , করম-জিতা

(১২) মানভূমের লোকনৃত্য

(১৩) জগৎ কবিরাজ: জীবন ও সাহিত্য

(১৪) ললিত কিশোর : জীবন ও সাহিত্য

(১৫) ভাদু : একটি সামগ্রিক চিত্র

(১৬) আমার প্রিয় পঞ্চাশ ( মানভূমের ৫০ জন গুণী ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা )








ছবি : সন্দীপ কুমার ও অন্যান্য















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ