রবিবার, ২২ মে, ২০২২

পাহাড় আমাদের সম্পদ



পাহাড় আমাদের সম্পদ
------------------------------

পাহাড় একটি অভিমান।

পাহাড় এক অপেক্ষাও।

আমারতো পাহাড়তলি ঘর।
আলো আসে। হাওয়া আসে।
চেনা অচেনা জীবজন্তুর ডাক আসে।
কোনো কিছু না জানিয়ে 
আকাশ ঢুকে পড়ে ঘরে।

পাহাড় এক ভালবাসা।

পাহাড়তলে হাট বসে। গরুর গাড়িতে গরুর গাড়িতে শাকসবজি আসে। মাথায় মাথায় ঝুড়ি ঝুড়ি কত কিছু আসে।

উড়তে উড়তে একটা কাক
হাটে এসে খাদ্য খোঁজে। চেয়ে থাকে পাহাড়ের দিকে।
উড়েও যায়।

পাহাড়ের গায়ে কুসুম গাছের ডালে বসে কাক।

পাহাড়তলির মাঠে মেলা হয়।
ছো--নাচ হয়।ধামসা-মাদল বাজে।    
এই মাঠেই তো মোরগ লড়াই।
এই মাঠেই তো হঠাৎ কখনো
গভীর রাতে একলা বাঁশি বাজে।

পাতার বাঁশি।

পাহাড়ের চারদিকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গাছপালা। হঠাৎ হঠাৎ পাহাড় থেকে নেমে পড়ে
বড় বড় পাথর। তারপর পড়েই থাকে দিনের পর দিন।

কত পায়ের শব্দ শোনে। নিঃশ্বাসের শব্দ শোনে। কেউ তাকে হাত ধরে পাহাড়ের মাথায়
নিয়ে যায় না। কেউ তাকে হাত ধরে পাহাড়ের কোলের কাছেও নিয়ে যায় না।

সেও নীরব, নিঃশব্দ থাকে।

পাহাড়ের পিছন দিকে একটি জলাশয়। জল শুকায় না বলে, জলে মুখ দেখে পাহাড়।

পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে নিঃসঙ্গ দুপুর সময় কাটায়। রাত্রি এসে ঘুমিয়ে পড়ে  পাহাড়ের কোলে।

পাহাড়ের কোলের নিচেই শুয়ে থাকে মাঠ। এই মাঠেই তো উদাসীনতা ঘুরে বেড়ায় সারাদিন।

কেনাবেচার হাটে কোলাহল। কলহ এসেও  দাঁড়িয়ে থাকে আলু বেগুনের কাছে। মোরগ লড়াইয়ের ছুরির মতো। ধারালো।

পাহাড় উপেক্ষা করে।

পাহাড় চেয়ে থাকে -------পাহাড়ি মেয়েরা কখন ফিরবে! ওরা গেছে পাহাড়ের নিচে। বোঝা বোঝা কাঠ বিক্রি করতে।

এই পাহাড় যে আমাদের কত আপন জন, ঋতুর পর ঋতু আমাদের জন্যেই। কেননা, পাহাড়ের তলে তলে  ধন-সম্পদ লুকানো আছে। যার লোভে ছুটে আসছে থলি থলি টাকা।

প্রাচীন এক পাহাড় অযোধ্যাকে ধ্বংস করে ফেললো লোভ ও লালসা। আজও প্রাকৃতিক সম্পদ যা আছে যেটুকু আছে শেষ করে ফেলবে টাকা।

টাকার পরে টাকা। ক্ষমতা।

জঙ্গল তো ফুরিয়ে আসছে ক্রমশ।

জঙ্গলের ভেতর দিয়েই পাতা হবে, পাতা হচ্ছে রেলের লাইন। এ জন্যই , এই উন্নয়নের (?) জন্য জল জঙ্গল জমি যা আছে যেখানে আছে ধ্বংস করো। ধ্বংস করো।

বাণিজ্যিক কারণে বাগমুন্ডির একটা পাহাড় পাখি পাহাড় হয়ে গেল। হয়তো কাল-পরশু দেখতে পাবো , একটা পাহাড় হয়ে গেছে বাঘ।

মানুষ ছুটে যাবে দেখার জন্য।,

আর যদি সত্যি সত্যি বাঘ করে হালুম ---------তবে?
টাকার থলি হাতে থাকবে তো?

টাকার থলি এসেছিল তিলাবনি 
পাহাড়ের কাছে। স্থানীয় মানুষজন
সেই থলি ছুঁড়ে দিয়েছে।

পাহাড়ের মাথায় যে সূর্যের ঘর।

পাহাড়ের নিচেই তো ফসলের জমি। গরু চরে। ছাগল ভেড়া চরে। এবং পাখিদের ওড়াউড়ি।
পাখিদের কুজন।

পাহাড়ের ছায়াও এক পাহারা।

পাহাড় দেবতাও।

আমাকে কোলে পিঠে বড় করেছে। আমাকে দেখিয়েছে, বাছুর ছুটে যাচ্ছে তার মায়ের পিছনে। শুকর মাতার স্তন্যপান করছে শুকর ছানা। লাফালাফি করছে ছাগ শিশু।

গাছে গাছে কানাকানি-----
এবার ফুল আসছে। ফলের বীজ
ছড়িয়ে যাব ধুলায় ধুলায়। মাটিতে।

আমি গড় করি।


--------৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
-------২২----৫----২০২২
-------নির্মল হালদার
































ছবি : অভিজিৎ মাজী










কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ