ফাগুন--চৈত্রে জঙ্গলে জঙ্গলে যেতেই হবে। অথবা নির্জনতার কাছে। মাঠে মাঠে। রাস্তায়।
গাছে গাছে নতুন পাতা আসছে।
কুসুমের পাতা নতুন হলেও লাল।
চেয়ে থাকতে হবে।
চেয়ে থাকতে হয় পলাশের দিকে।
ফুলে ফুলে লাগিয়েছে মাতন।
চেয়ে থাকতে হয় মহুলের দিকে।
চেয়ে থাকতে হয় মহুলের মনের দিকে।
যে মন নীরব। নিঃশব্দ। যে ঝরে ঝরে পড়ে রাত থেকে ভোর।
সেই ভোরের ডাকে আমাদের অভিজিৎ মাজী ক্যামেরা কাঁধে জুরাডি ---তুম্বা--ঝালদা--কাঞ্চনপুর-রলাডি--মজিরামডি--রূপাপ্যাতা--পুড়িহাঁসা চলে যায়। আর মহুলের মনের দিকে চেয়ে তার রূপ তার মাদকতা তার গন্ধ ক্যামেরায় ধরে রাখার চেষ্টা করে।
সেইসঙ্গে শ্রমজীবী মানুষের ছবিও। যে শ্রমজীবী মানুষ এই চৈত্রদিনে মহুল কুড়িয়ে ঘরে নিয়ে যায়। তারপর মহুল শুকিয়ে গ্রামের হাটে হাটে বিক্রি।
মহুল থেকেই মদ।
মহুল থেকে কচড়া। অর্থাৎ ফল।
সেও তরকারি হয়ে থাকে।
মহুলের বীজ থেকে তেল হয়।
অর্থাৎ মহুল গাছ নানা ভাবেই আমাদের উপকার করে।
মহুল গাছের ছাল থেকে আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি হয়ে থাকে।তো সেই মহুল এই চৈত্রে
এক মহোৎসব। তার ধ্বনি কেউ কেউ শুনতে পায়। তাদের মধ্যে একজন আমাদের অভিজিৎ।
সেও গ্রামেরই ছেলে। প্রকৃতির সঙ্গে থাকতে থাকতে সে প্রকৃতির মধ্যে খুঁজে পায় কাব্য সুষমা। দেখতে পায় ফুল ও ফলের হৃদয়।
হৃদয়ের শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর মহুয়া কবিতায় দেখি--------
(তার অংশবিশেষ এখানে রাখা হলো)
মালতীর মল্লিকার
অভ্যর্থনা রচি বারংবার।
রে মহুয়া, নামখানি গ্রাম্য তোর,
লঘু ধ্বনি তার,
উচ্চশিরে তবু রাজকুল বনিতার
গৌরব রাখিস ঊর্ধ্বে ধরে।
আমি তো দেখেছি তোরে
বনস্পতি গোষ্ঠী -মাঝে অরণ্য সভায়
অকুণ্ঠিত মর্যাদায়
আছিস দাঁড়ায়ে,
শাখা যত আকাশে বাড়ায়ে
শাল তাল সন্তর্পন অশ্বত্থের সাথে
প্রথম প্রভাতে
সূর্য অভিনন্দনের তুলেছিস গম্ভীর বন্দন।
অপ্রসন্ন আকাশের ভ্রু-ভঙ্গে তখন
অরণ্য উদ্বিগ্ন করে তোলে,
সেই কালবৈশাখীর ক্রুদ্ধ কলরোলে
শাখা ব্যূহে ঘিরে
আশ্বাস করিস দান শঙ্কিত বিহঙ্গ
অতিথিরে।
বসন্তে কোকিলের ডাক শুনতে পাই। পলাশের ডাক শুনতে পাই।
মহুলের ডাক শুনতে পেয়েও
নীরব থাকি।
মহুল যেন ব্রাত্যজন। তার রুদ্ধসঙ্গীত অভিজিৎ শুনতে পায় বলেই, তার কাছ থেকে পেয়েছি মহুল গাছের প্রাণস্পন্দন।
সঙ্গে পুরুলিয়ার গ্রামীণ মানুষের
জীবন চর্চা।
তার ক্যামেরার মহুল থেকে কেউ কেউ যদি মহুলের মনে প্রবেশ করতে পারে, তবে বন-জঙ্গলের বসন্ত --যৌবন দেখতে পাবে অবশ্যই। দেখতে পাবে , মহুল--কুড়ানিদের মুখের অভিব্যক্তি। যা এই ভারতবর্ষের ।
আগামী দিনেও অভিজিতের কাছ থেকে আশা করবো, এই দেশের শিকড়ের কান্না। সে আমাদের সামনে নিয়ে আসবে।
অপেক্ষায় থাকছি। তার আগে
তাকে আমার শুভেচ্ছা জানাই।
------১৭ চৈত্র ১৪২৮
-----১----৪----২০২২
-----নির্মল হালদার



































কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন