ভারতবর্ষ / নির্মল হালদার
ক্লাস এইট অব্দি পড়াশোনা করে মকরের মনে হলো, দিনমজুরের কাজ করা ঢের ভাল। মায়ের হাতে অন্তত দু চার টাকা দিতে পারবে।
বাপটাও মরে গেছে। বাপও ছিল দিনমজুর। সন্ধ্যা হলেই, বাংলা মদ গিলতো। এত গিলতো যে অকালে চলে গেল।
মকরদের চাষবাসও নাই। শুধু একটা একচালা ঘর। খড়ের ছাউনি। মকরের মা একটা ছাগল পুষে ছিল। ছাগল চাষে লাভ হয় নাকি। সে ছাগলও রোগে রোগে
মরলো।
কপাল মন্দ হলে যা হয়। মকরের মা এই কথা বলে, কপাল চাপড়ায়। মকরকে কাজে যেতেই হয়। আর এমন ঠিকাদারের পাল্লায় পড়েছে, রোজ কাজ নাই।
যেদিন কাজ থাকে না সেদিন মকর হাড়াই নদীতে মাছ ধরতে চলে যায়।
মকরের বয়সীরা আজকাল ক্রিকেট খেলে না। ফুটবল খেলে না। শুধু মোবাইলে গেম। দেখা যায় অনেক ছেলেই নদীর ধারে এসে গেম খেলছে। কারণ একটাই, নদীর দিকে টাওয়ার থাকে। মকর তখন চেয়ে থাকে ছিপের দিকে------কখন একটা মাছ লাগবে। অন্তত একটা মাছ। রাত্রিবেলা তাহলে, ভাতের সঙ্গে মাছের তরকারি। দু'মুঠা ভাত বেশি খাওয়া যায়। এমনিতে
প্রতিদিন শাক সিজা। আলু সিজা। ভাত। মকরের নাই ভাল লাগে। সে জানে তাদের পয়সা নাই।তার মা
লোকের ঘরে কাম করে এক থালা ভাত পায়।আর মাসে তিনশো টাকা। এই বৈশাখে যা হলো,ঝড়ে উড়ে গেছলো মকরদের খড়ের চাল।সে যা অবস্থা একটা রাত তো ছাউনি ছাড়াই মা বেটা ঘরে শুয়ে ছিল।
খড় জোগাড় না হলে চাল ছাইবে কী করে? পরের দিন মাহাতদের ঘর থেকে একশো খড় এনে ছাইতে হলো।
মাহাতরা মকরের মায়ের সঙ্গে শর্ত করলো,বেতন ছাড়াই কাজ করে দিতে হবে এক মাস। উপায় ছিল না। মকর মাঝেমাঝে যা রোজগার করে, এক পয়সাও জমে না।
মকরের বাপ কোনো টাকা পয়সা রেখে যায়নি। মকরও লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে তেমন কোনো কাজে
ঢুকতে পারে নাই।
গাঁয়ে থাকে। মকরের আর কোনো আয়--উপায় নাই।সে সময় সুযোগ পেলেই, মাছ ধরে।
হাড়াই নদীতে বারো মাস জল থাকে না। এখন বর্ষাকাল বলে, জল আছে। মাছও আছে। আজ
তাই, ছিপ ফেলেছে আশায় আশায়। যদি চ্যাঙ--গড়ই উঠে আসে।যদি উঠে আসে কয়েকটা পুঁটি। সেই আশাতেই মকর ছিপটা মাটিতে রেখে খৈনি ডলে বাঁ--হাতের তালুতে। আর ছিপটা পড়ে যায় জলে।ছিপটাও নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে যায়। সে দেখতে পেয়েই, ঝাঁপ দেয় জলে। তুলে নিয়ে আসে।
মকরের জেদ বেড়ে যায়, সে আজ মাছ ধরবেই।রুই-কাতলাও ধরতে পারে। সে ভিজা কাপড়েই নতুন করে ছিপ ফেলে। উপর দিকে মুখ করে জোড় হাত করে বলে-----হে ঠাকুর আমার আশা পূরণ করবে। আমি তোমাকে রঙ--বরঙের মাছ দেখাবো। এই নদীতে রঙিণ মাছও ঘুরে বেড়ায়। সবাই জানে না ঠাকুর।
এই এইতো উঠছে একটা মাছ।
সূর্যাস্তের রঙ হাড়াই নদীর জলে খেলা করে।
-----৭ শ্রাবণ ১৪২৮
-----২৪-----৭----২০২১
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন