এই আমি / নির্মল হালদার
পালকের সঙ্গে দুপুরে দেখা হলো। আজ সকালে দেখা হয়নি। আমি কোথায় ছিলাম?
পাহাড়ে যাইনি। সমুদ্রেও না। আমি কোথায় ছিলাম?
আচ্ছা আচ্ছা এবার মনে পড়লো, আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল শৈলেন কুন্ডুর। অনেকদিন বাদে দেখা। কথা ফুরোয় না। দেরিটা সেখানেই। ফলে, অযোধ্যার আঙুর বাগানে যেতে দেরি হয়ে গেল। আরও দেরি, শেয়ালের জন্য। সে যে থাকবে আমার ভাবনার বাইরে ছিল।
ভাগ্যিস ছিল, তাই টক আঙুর মিষ্টি আঙুর চিনতে পেরেছি। পালকের পছন্দের মিঠে আঙুর একটা একটা তুলে ভর্তি করেছি আমার ঝুলি।
পালককে কিছু না দিলে সারাটা দিন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কালকে তো গেছলাম কমলালেবুর বাগানে।
কি রঙ।কি সুগন্ধ। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। পালকও খুশি হয়। সে যে কোনো ফল ভালোবাসে।তার জন্য কলা বনেও যাই। দেখা হয়ে যায় হাতির সঙ্গে।
আজ শৈলেন বাবুর সঙ্গে দেখা হলো কেন? তার সঙ্গে তো আমার কোনো সম্পর্কই নেই। এমনতো হতে পারে, তিনি শৈলেন বাবু ছিলেন না, ছিলেন মৃন্ময় বাবু। কিংবা আশুতোষ বাবু। যিনি হাত দেখাতে পছন্দ করেন। হাতের রেখা চেনেন খুব বেশি করে। ভাগ্যের প্রতি অগাধ বিশ্বাস।
কিন্তু শৈলেন বাবু মৃন্ময় বাবু হতে যাবেন কেন? অথবা আশুতোষ বাবু কেন হবেন? আমার সঙ্গে শৈলেন বাবুরই দেখা হয়েছিল। এই শৈলেন বাবু কোনো ভাবেই মুখোপাধ্যায় নন। এই শৈলেন বাবু, শৈলেন কুন্ডু। আপাদমস্তক ভদ্রলোক।
কি কথা বলছিলাম, যে, আমার দেরি হয়ে গেল পালকের কাছে পৌঁছোতে? জুতোয় তো পেরেক ছিল না। পথে কোনো কষ্ট ছিল না। তবে?
রাস্তায় রাস্তায় ভিড় ছিল না। গাড়িঘোড়ার জটিলতা ছিল না। আমি তো হাঁটছিলাম। আমি সমুদ্রে গেলেও হেঁটে যাই। নিজের পায়ের শব্দ শুনতে শুনতে হেঁটে যাওয়া খুব সুখের। মনে হয়, আমার একজন সঙ্গী আছে।
শৈলেন বাবু কি বলছিলেন মনে পড়ছে না তেমন। একটাই কথা মনে পড়ছে শুধু, তিনি বলছিলেন এই শ্রাবণ মাসে অনেকের সঙ্গে দেখা হবে। তাই তিনি বেশ আনন্দে আছেন।
আমার সঙ্গে তো কারো দেখা হয় না। একই ঘরে থেকে পালকের সঙ্গে দেখা করতেও আমার তো দুপুর হয়ে যায়।
দুপুরটা খুব খাপছাড়া। কোথাও মসৃণতা নেই। খচখচে লাগে। তখনই মনটা বেসামাল হয়ে ওঠে। মনে হয়, পালকের সঙ্গে খেলাধুলা করি।ওর কাছে নানা রকম পুতুল। দু'জনে পুতুল খেলবো।
আমরা পেয়ারা বাগানও যেতে পারি। গাছে উঠে পেয়ারা ফুল খুঁজে খুঁজে আমরা সহজেই জেনে
যাবো, ক'টা পেয়ারা হবে।
এখনো আশ্চর্য লাগছে, শৈলেন বাবু আমাকে চিনতে পেরেছেন ঠিকই কিন্তু আমার নামটা ভুলে গেছেন। আমি নীলেন্দু না নিমাই তিনি মনে করতে পারছিলেন না। আমি হাসতে হাসতে বললাম, আপনি যা ইচ্ছে নামে ডাকতে পারেন। আপনি আমাকে ভোদাই বললেও খুশি হবো।
একথা সে কথার পর আমরা চায়ের দোকানে গেলাম। আমার মন যদিও ছটফট করছিল, কখন দেখা হবে পালকের সঙ্গে।
পালকের জন্য আঙুর। পালকের জন্য পেয়ারা।পালকের জন্য কলা।
কেবল কাছে যেতে হয়। হাত পাততে হয়।
হাতটা আমি বড়োই করেছি। আকাশের কাছে হাত পেতে পেতে হাতটা এত বড়ো হয়ে গেছে যে এখন আর কারোর কাছে হাত পাততে সমস্যা হয় না।
কখনো কখনো হাত না পেতেও বৃষ্টি পেয়েছি। বৃষ্টির রঙ বৃষ্টির আনন্দ পেয়েছি। শৈলেন বাবু জানেন না, আমি ধুলায় ধুলায় শুয়ে পড়তে পারি। শৈলেন বাবু জানেন না, আমি ভালোবাসার কাছে শতবার নত হতে পারি।
শৈলেন বাবুর সঙ্গে দেখা হলো কেন? এ প্রশ্নটাও আজ আমার মধ্যে ঘুরছে। দীপক বাবুর সঙ্গেও দেখা হতে পারতো। যে দীপক বাবু আমাকে বলেছিলেন--------
কারো সঙ্গেই দেখা হয় না হে------কেবল দিনরাত্রির সঙ্গে দেখা হয়।
আমার সঙ্গেও শৈলেন বাবুর দেখা হয়নি। অযথা কিছু বিভ্রম আমাকে আজ পীড়িত করছে। আমি আজ পালকের সঙ্গে কথা বলিনি একটাও।
-----৫ শ্রাবণ ১৪২৮
----২২----৭----২০২১
----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন