শুধু অন্ন বস্ত্র বাসস্থান নয় / নির্মল হালদার
রু বলছিল-----বাইরে কেন বর্ষা হয়? বর্ষা হবে ভেতরে। ঘরের মধ্যে। একঘর বর্ষা হলে, ঘরের মলিনতা ধুয়ে যায়। ঘরের মধ্যে কত কালিঝুলি । কত ধুলো-ময়লা। ঘরের মধ্যে বর্ষা হোক। সব ভিজে যাক। সব মলিনতা ধুয়ে যাক। পরের দিন একঘর রোদ এসে শুকনো করে যাবে। একঘর বর্ষা হোক।
রেহানা বললো-----বাইরে বৃষ্টি না হলে চাষবাস হবে না। তুই বল, বাইরে বৃষ্টি হোক ঘরেও হোক। একবার বাইরে হলে, আরেকবার হবে ঘরে। রু বলে ----- তোর কথার যুক্তি আছে। কিন্তু প্রকৃতি কি আমাদের কথা শুনবে? রেহানা হাসতে হাসতে বলে----- তা অবশ্যই ঠিক। তারপরও একটা কথা, তোর স্বপ্নের কি হবে? রু বলে-----আমার স্বপ্ন তো অনেক। তুই দেখেছিস নিশ্চয়ই, হাঁস ও মুরগি অনেক জায়গায় অনেক সময় একই সঙ্গে খেলা করে। আশ্চর্যের বিষয়, মুরগি কিন্তু জলে সাঁতার কাটে না। যদি একই সঙ্গে সাঁতার কাটতো ? হাঁসের সঙ্গে? রেহানা বলে------তোর অলীক কল্পনা। আমি শুনতে শুনতে পাগল হয়ে যাব। কাল যদি বলিস, গাছ থেকে মেঘ পাড়বো? পরশু যদি বলিস, ধান ফুলে মালা গাঁথবো? রু তখন জানায়----- না না আমি ঘোড়ার ডিম চাইবো না। আমি চাইছি না, সাপের পাঁচ পা। আমি শুধু আপাতত একঘর বর্ষা চাইছি।চাইলে হবে না------রেহানা বলে। রেহানা বলে ----- স্বপ্ন বা কল্পনার একটা সীমা আছে। তুই রু সীমানা ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছিস। আর তাই, তোর স্বপ্নেরা তোকে রোগা করে। কেননা, তোর স্বপ্নের মধ্যে কল্পনার মধ্যে কোনো পুষ্টি নেই। হয়তো দেখবো একদিন, তোর হাড়--পাঁজর।
এখন রু সাইকেল নিয়ে চুনারডি যাচ্ছে। বোঙাবাড়ি রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সামনে। যেতে যেতে দেখছে লাগানো হচ্ছে ধান। যারা ধান রুইছে তাদের মাথায় প্লাস্টিকের চাদর। রঙিন। তারা ধান রুইতে রুইতে কথা বলছে নিজেদের মধ্যে। পাশের জমিতে দাঁড়িয়ে আছে এক হাল গরু।
গরু এত নিরীহ কেন? এই প্রশ্ন রুয়ের মনে আসতেই সে সাইকেলটি দাঁড় করিয়ে গরু দুটির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। শুধু দাঁড়ালো। একটিও কথা বললো না।
আবার সে সাইকেলের কাছে।
চুনারডি। প্রভাস মাহাতর বাড়ি। প্রভাস অনেকদিন ধরে যেতে বলছে। যাবো যাবো করে যাওয়া হয়ে উঠছিল না। আজ সময় হয়েছে।
আকাশে মেঘ। যেকোনো সময় বৃষ্টি আসবে। প্রভাস বলেছিল, রুকে দেখাবে , ঘরের ভেতরে ধান রুইছে।এক ফোঁটা জল লাগবে না। ধান হবে দিব্যি।
কতটা সত্যি দেখতে যাচ্ছে রু।
সেতো এও চাইছে, আকাশকে মাঝেমধ্যে ঘরের মধ্যে টাঙ্গিয়ে রাখতে।মেঘ এসে বাজনা বাজাবে। ফুটবে তারাও । অসংখ্য। সেতো এও চাইছে, কোনো দিকেই মানুষের কোনো অভাব থাকবেনা। মানুষ যখন যা চাইবে, পেয়ে যাবে হাতের সামনে। শুধু অন্ন বস্ত্র বাসস্থান নয়, মানুষ যদি চায় সমুদ্রে সাইকেল চালাবে, চালাতে পারবে। মানুষ ইচ্ছে করলেই, আকাশ নামাবে নিচে। মাটিকে পাঠাবে উপরে। হ্যাঁ হ্যাঁ এরকমই হবে । স্বপ্ন শুধু নয়। কল্পনা শুধু নয়। মানুষ তার বাঁচার জন্য ভালো থাকার জন্য যখন খুশি যা খুশি চাইতে পারে।এতে কোনো দোষ নেই।
রুয়ের মনে পড়লো, প্রভাস বলেছিল-----তাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করতে। কিন্তু খাবেনা সে। সেতো এই বিশুদ্ধ বাতাস খেতে খেতে চলেছে। তার
সঙ্গে তার সাইকেলও হাওয়া খেয়ে চলেছে। দুজনেরই ভরে গেছে পেট।
রু আপন মনে হাসে। একবার সে হেসে উঠলো জোর। আর দেখতে পেলো সামনে এক মাঠ। খেলা করছে মাছেরা। সে সাইকেল দাঁড় করিয়ে নেমে গেল মাঠে। শুরু করলো খেলতে। খেলবে কি, তার সারা গায়ে উঠে যাচ্ছে মাছেরা।
সে যখন মাঠ থেকে উঠলো, সারা গায়ে বর্ষার কাদা। সে হাসছে। হাসতে হাসতে প্রভাসদের বাড়ি।
প্রভাস প্রভাস---- রু দূর থেকেই ডাকতে শুরু করে।
প্রভাস তাকে দেখে অবাক।
বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। প্রভাস রুকে ধরে ছাদবিহীন একটা ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। বলে, বৃষ্টি পড়ছে। এই ঘরে তুমি তোমার কাদা ধুয়ে নাও।
রু নাচতে নাচতে বলে------এই তো আমার এক ঘর বর্ষা।
----২৩ আষাঢ় ১৪২৮
-----৮---৭---২০২১
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন