বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০২১

বাঁশি / নির্মল হালদার

বাঁশি / নির্মল হালদার
__________________


লিখন বাঁশিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে মনে করে, বাঁশিটা একমাত্র মনসংযোগের উপাদান।

আজ সারা দিন মনটা উড়ু উড়ু। কোনো বিষয়ে মন দিতে পাচ্ছেনা। তখনই তার মনে পড়লো,বাঁশিটা টাঙানো আছে দেয়ালে। চেয়ে থাকলে মন শান্ত হবে। মন স্থির হবে। মন স্থির না হলে, সে যেতে পারবে না সোনাঝুরির কাছে। কাল রাতে বেদম তর্ক হয়েছে তার সঙ্গে। তর্কের কারণ তুচ্ছ একটা বিষয়ে। ধুলোর রঙ কী? প্রশ্নটা ছিল লিখনের। সোনাঝুরি প্রথমে বলেছিল -----জানি না। পরে আরও বলেছিল---- প্রশ্নটা ইন্টারভিউর মত। উত্তর দিতে পারবো না। জটিল প্রশ্ন। ধুলো কালো হয়ে থাকে। ধূসর হয়ে থাকে। কিন্তু কখনোই লাল নয়। লিখন বলেছিল----- যেকোনো একটা বলতে হবে। সঠিক বললে সম্পর্ক থাকবে। ভুল বললে, কাল থেকে তোর সঙ্গে আমি নেই। সোনাঝুরি রেগেমেগে লিখনের জামার বোতাম ছিঁড়ে দিয়ে বলেছিল -----সামান্য একটা বিষয় উত্তর দিতে না পারলে, সম্পর্ক থাকবে না? তার মানে তুই সম্পর্ক কী বুঝিস না। কিংবা বলতে পারি, আমাদের কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। লিখনের উত্তর ছিল-----হ্যাঁ আমাদের কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। গড়ে উঠলে ধুলোর রঙ কী, তুই বলতে পারতিস। তখন সোনাঝুরি পাল্টা প্রশ্ন করে, আকাশের রঙ কি বলতে পারবি?
তুই এখুনি বলবি, আকাশের রঙ নীল। আর আমি বলবো লাল। মানবি তো?

রঙ নিয়ে দুজনের তর্ক চলতেই থাকে। কেউ কারোর কাছে নত হবে না। শেষে লিখন সোনাঝুরির মাথার চুল টেনে মাথাটাকে ঠুকে দেয় দেয়ালে। রক্ত দেখা যায়।

আড্ডাতে আরো বন্ধুরা অবাক হয়ে দু'জনকেই চুপ করতে বলে। সোনাঝুরি আর কিছু না বলে বাড়ির দিকে চলে যায়।

লিখন রাত্রিতে আর ঘুমোতে পারে না। সামান্য একটা বিষয় নিয়ে মাথা গরম করা উচিত ছিল না। পরে সে ভেবে দেখেছে, এবারেও এস এস সি তে তার হলোনা। সেই হতাশা থেকেই বোধহয়, সোনাঝুরির সঙ্গে বাকবিতন্ডা। ঝগড়াও বলা যায়।

আজ সকালে উঠে সে চা--ও খেলো না। কেবল ভাবছে কখন দেখা হবে সোনাঝুরির সঙ্গে। দেখা হলেই, মার্জনা চেয়ে নেবে।

একেকবার ভাবছে, কেন মার্জনা চাইবে? সোনাঝুরির সঙ্গে তার ক্ষমা চাওয়ার মত সম্পর্ক নয়। তর্ক-বিতর্ক হতেই পারে, তা আবার আপনা আপনি মিটেও যায়। অকারণ দীর্ঘায়িত করে, মন কষাকষি করে কী লাভ!

সাতসতেরো ভাবতে ভাবতে লিখনের মন আরো অশান্ত হয়ে উঠছে ।সে তাই বাঁশিটার দিকে তাকিয়ে আছে। সে জানে বাঁশির নীরব রূপ তাকে সহযোগিতা করবে। এর আগেও অনেকবার বাঁশি তাকে শান্ত করেছে। 

বাঁশি চুপচাপ থেকেও প্রতিটি মুহূর্ত একটা সুর প্রবাহিত করে ঘরের মধ্যে। লিখন শুধু দেখতে পায়। শুনতেও পায় সুরের তরঙ্গ।

সে মনে মনে বাঁশির ভেতরে শুয়েও থাকে। তার ঘুম আসে। স্বপ্ন আসে। বাঁশি তার একান্ত আপন। একান্ত প্রিয়।

সেই কবে সংক্রান্তির মেলা থেকে বাঁশিটাকে নিয়ে এসেছিল । এখনো তার সঙ্গেই আছে। এই এখন যেমন বাঁশিটা বলছে-----"বাঁশির ভিতর দিয়ে হাওয়া বয়ে যায় সারাদিন। লিখন, তোমার ভেতর দিয়েও সোনাঝুরি বয়ে যাচ্ছে। সে তোমার সঙ্গেই আছে।
তোমার সঙ্গেই থাকবে।"

লিখন বাঁশির পরিপূর্ণ কথা শুনে ঠিক করে, সে এবার থেকে বৃথা তর্ক করবে না। মাথা গরম করবে না। প্রেম একবারই আসে। তাকে ধরে রাখতেও হয়। আর বাঁশি প্রেমের এক নিঃশব্দ রূপ। সেই আজ তাকে রক্ষা করেছে।

লিখন বাঁশিকে নিয়েই সোনাঝুরির দিকে যায়।

----১১ শ্রাবণ ১৪২৮
----২৮---৭---২০২১
----নির্মল হালদার











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ