মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

কবিতা / নির্মল হালদার

কবিতা / নির্মল হালদার



১৭০.
ধানতো হয় চালের জোগান কে দেবে?

এক মুঠি চালও ফুটতে পারে হাঁড়িতে।
আমাকে ভালোবাসতেই পারে ভাতের গন্ধ।

ভাত যে প্রতিদিনের আলো
প্রতিদিনের ছন্দ
আমার ছোট রাস্তাগুলি বড় হয়ে যায়।
আমি রাস্তার দু'ধারে লাগাই,
মানুষের চারা,যদি অনেক রাস্তা ঘুরেও
দেখতে পাই, সফল একটি মানব জন্ম।



১৭১.
যত যাই করি
মনে হয়, কিছুই তো হলো না।
এইতো ধ্বসে গেল পাহাড়----
কই, কাঁধে কি নিয়ে এসেছি আরেকটা পাহাড়?
এইতো শুকিয়ে ওঠে নদীমুখ
কই, মাথায় কি নিয়ে এসেছি আরেকটা নদী?

কেবলই হা--হুতাশ, হাহাকার

মানুষ থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়
কই, জোড়া লাগাতে পারি?
কই আর হতে পারি একটি গাছের চারা?


----১০ শ্রাবণ ১৪২৮
----২৭---৭---২০২১


১৭২.
যে কোনো ঘরেই একটা বট গাছের প্রয়োজন।
যে কোনো ঘরেই বট গাছের মতো অভিভাবক।
বটগাছ থাকলেই, সলতে পাকানোর মত
একটা মন পাবো। পিদিমের মত হৃদয়।

হৃদয় তো নীরব। শোনেনা মিছে কলরব।



-----১১ শ্রাবণ ১৪২৮
----২৮---২৮----৭----২০২১



১৭৩.
ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার পরও বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ার পরও
রাস্তায় রাস্তায় খুঁজে বেড়াই আমারই প্রাণ-----
আমার উন্মাদ প্রাণ----মানুষের স্রোতে খুঁজেছিল নদী,
নদীর স্রোতে খুঁজেছিল মানুষ।

মানুষ আর মানুষ
ধুলাকে করে সোনা, ঘরকে করে বাহির।
মেঘে মেঘে খুঁজে বেড়ায় মৎস্যকুমারীর মুখ,
বৃষ্টির আগুন থেকে হৃদয়ের ঘ্রাণ

হে আমার উন্মাদ প্রাণ,
যেখানেই থাকো জাগো জাগো
আমার একলা ঘরের বিজন কোণে আমাকে জ্বালাও
আমাকে করো সুরের তরঙ্গ।



১২ শ্রাবণ ১৪২৮
২৯/৭/২০২১



১৭৪.
যেকোনো একটা মুখ আমারই মুখ
আমারই কৈশোর আমারই যৌবন
আমারই বিষণ্ন মুখ আমারই উজ্জ্বলতা।

আমি রেখে যাই সকল মুখের কাছে
মাছধরা মানুষের ধৈর্য ও অপেক্ষা।
আমি রেখে যাই সকল মুখের কাছে
ধান রোয়া হাতের শুশ্রূষা ও সুন্দরতা।

যেকোনো একটা মুখ চেয়ে আছে
আমারই ভাঙ্গা গড়ার দিকে।
যেকোনো একটা মুখ চেয়ে আছে
আমার পথ চলার দিকে।

সকল মুখের কাছে আমি হাত বাড়িয়ে আছি।



----১৩ শ্রাবণ ১৪২৮
----৩০----৭----২০২১



১৭৫.
বৃষ্টি শেষের হাওয়া কি খুঁজছে কাকে খুঁজছে?

উঠোনে শ্যাওলা জমেছে। পিছল হয়েছে খুব।
পা ফেলতে হবে সাবধানে।
ও হাওয়া, আমার হাত ধরো।
কুশল জেনে নাও। আজ আমরা একসঙ্গে যাবো
সূর্যের পথে

সূর্য আমার সখা, আমার প্রতিদিনের সৌন্দর্য।




১৭৬.
কাল বৃষ্টি হয়েছে খুব।
বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ভেঙেছে মাটির ঘর।
ভেসে গেছে সবজির চারা। ভেঙ্গে গেছে
ধান ক্ষেতের আল।

এত জল এত জল
ভেসে ভেসে আসছে মাছ। মাছ ধরছেও
ছেলে ছোকরার দল।আজ
মেঘ ছেঁড়া আলো এসে আমার মুখে।

আমি রোদের মুখ খুঁজি।

রোদে রোদেই খুঁজে পাবো রৌদ্রের প্রবাহ।



-----১৪ শ্রাবণ ১৪২৮
-----৩১---৭----২০২১



১৭৭.
কী থাকবে কী থাকবেনা
আমার জানার কথা নয়, আমি দেখবো
কলসি কাঁখে চলে যায় এক রমণী।
গরুর গলায় ঘণ্টাধ্বনি।
নদী ঘাটে শুকায় ধীবরের জাল।
ঝরে পড়ছে বাবলা ফুলের হলুদ।

কী থাকবে কী থাকবেনা
আমার বলার কথা নয়, আমি দেখবো
মাথায় ঘাসের বোঝা।
ঝোপঝাড়ে প্রজাপতির পাখা।
শান্ত ধুলোবালি।
পাথর ফুঁড়ে আগাছা।

কী থাকবে কী থাকবেনা
আমার শোনার কথা নয়, আমি দেখবো
বাতাস উড়ছে বাতাসেই।
একটি শিশুর হেঁটে যাওয়া।
মেঘ নামছে মাঠে।
ছুটে আসছে একটা মোষ।

আমার নীরব চেয়ে থাকার মাঝে কাঁপছে আকাশ।



১৭৮.
চোখের জল শুকিয়ে গেলেও
অন্তরের কান্না? আমাকে জাগিয়ে আমার বুকে জেগে আছে। আর আমার বুক
সমুদ্রের চেয়ে মহৎ। কেবলই ঢেউ ওঠে
ঝিনুক ওঠে।

ঝিনুকে লুকানো মুক্তার চেয়েও অমূল্য

আমার মন।



----১৫ শ্রাবণ ১৪২৮
----১---৮---২০২১



১৭৯.
যা বলিনি কখনো বলতে চাই,
বাবার হাত ধরে ছেলে মেলায় যাচ্ছে
হইহই করছে রঙ

যা বলিনি কখনো বলতে চাই,
নাগরদোলায় হাসির হল্লা
পাঁপড় ভাজার গন্ধ

যা বলিনি কখনো বলতে চাই,
হাওয়াই লাড্ডু উড়ছে
উজ্জ্বল মুখ

যা বলিনি কখনো বলতে চাই,
শুয়ে আছে কাঠের পুতুল
শুয়ে আছে কাঠের চাকা

যা বলিনি কখনো বলতে চাই,
মেলার পিছনে স্তব্ধ এক গাছ
অন্ধকার এক গাছ

যা বলিনি কখনো বলতে চাই,
গাছ তলায় গুমরে ওঠা কান্না
মায়ের কোলে শিশু

আকাশ ভরা সূর্য তারার আদর



১৮০.
ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে পেঁচা জ্বাললো চোখ

আর অন্ধকার নেই। কথা বলছে গাছ,
নীরব। একাকী। চাঁদ--তারা শোনে।
আমিও শুনতে শুনতে পৃথিবীকে
কাছে পাই


আমার পৃথিবী আমার প্রকৃতি

আমারই কন্যা।



----১৬ শ্রাবণ ১৪২৮
----২----৮----২০২১
----নির্মল হালদার










কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ