মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

একটি গল্পের কেলেঙ্কারি / নির্মল হালদার

একটি গল্পের কেলেঙ্কারি / নির্মল হালদার



পাশের বাড়ির ছাদে শাড়ি ঝুলছে। ব্লাউজ ঝুলছে। সায়া ঝুলছে। এ বাড়ির ছাদ থেকে অলিভ ডাকছে -----কুরচি----কুরচি-------।

কে সাড়া দেবে?

ও বাড়ির ছাদে শাড়ি ঝুলছে। ব্লাউজ ঝুলছে। সায়া ঝুলছে।ঝুলতে ঝুলতে কেঁপে উঠছে হাওয়ায় হাওয়ায়।অলিভ ডাকছে-----কুরচি----কুরচি-----।

কে সাড়া দেবে? রঙিন সায়া ব্লাউজ শাড়ি ঝুলছে।রাস্তাতেও অলিভ পিছন থেকে ডেকে ওঠে------কুরচি----কুরচি---।

কে সাড়া দেবে?

সাইকেল নিয়ে যেতে যেতে একবার একটি মেয়ের ওড়না গা থেকে তুলে নিয়েছিল সে। মনে করেছিল কুরচি। একা একা হাঁটছে। সে ওড়নাটা তুলে নিয়ে
চমকে দিতে চেয়েছিল। কুরচি ছিল না। ছিল অন্য একটি মেয়ে। সে চেঁচামেচি করতেই, রাস্তার লোকজন অলিভকে কিলচড় দেয়। ক্ষমা চাইতে বলে মেয়েটির কাছে।

এই অলিভকে চিনি আনতে বললে নুন নিয়ে আসে।আলু আনতে বললে বেগুন নিয়ে আসে। মা-বাবার চিন্তা খুব। অলিভ আর ছোট নেই। অথচ সে বারবার ভুল করে।

রাস্তায় আরেকবার কুরচি মনে করে একটি মেয়ের পিঠে কিল মেরেছিল অলিভ। এখানেও একই ঘটনা। মেয়েটি চিৎকার করে। অলিভ নিজের ভুল বুঝতে পেরে সাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।

কলেজের ক্লাসে সে অন্য মেয়ের চুল টেনে দেয়। তারপর ভুল বুঝতে পেরে------কিছু মনে করিস না ভাই। আমি কুরচি মনে করেছিলাম।

অলিভের মা একবার তাকে খুচরো করতে পাঠিয়েছিলেন বাজারে। সে ৫০০টাকা খুচরোর বদলে নিয়ে এসেছিল ১০০০টাকা। তার মা তৎক্ষণাৎ বাকি টাকাটা ফেরৎ দেওয়া করিয়েছিলেন। অলিভ কখনোই
টাকা পয়সা গুনে দেখে না।

২০০টাকার নোট ৫০টাকার নোট বলে অলিভ দোকানদারকে দিয়ে দেয়। দোকানদার বাকি টাকা ফেরত দিতে এলে অলিভ জানতে চায়-----কিসের টাকা?

সে বারবার তাই ঝুলতে থাকা সায়া শাড়ি ব্লাউজ কে ডাকে-----কুরচি------কুরচি-----কুরচি-----।

কে সাড়া দেবে?

অলিভ একবার ওদের বাড়ির ছাদ থেকেও বাড়ির ছাদে লাফাতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল। আহত হয়েছিল। ছোট ছাদ ছিল বলে রক্ষা পেয়েছিল। খুব জোর।

কুরচি অলিভের সঙ্গে কথাই বলেনা। দুজনের বাড়ি পাশাপাশি হলেও দুজন একই বয়সের হলেও কোনো সম্পর্ক নেই।

দুটো বাড়িতেও কোনো সম্পর্ক নেই। কি বিবাদে কি হয়েছিল দুজনেই জানে না। শুধু জানে দু'জন দু'জনের সঙ্গে কথা বললে, তাদের দুটো বাড়ি অশান্তি করবে।
কুরচি কখনোই অলিভের সঙ্গে কথা বলে না। কেবল অলিভের তরফ থেকে কুরচির প্রতি আকর্ষণ। কাজ করে। অলিভ ছাদ থেকে যে কুরচিকে ডাকে সবাই জানে।কুরচি তাই ছাদে না--ওঠার চেষ্টা করে। অলিভ যদিও রাস্তাতেও ডাকে। কেউ সাড়া দেয়না। একবার মুখোমুখি কুরচির কাছে জানতে চেয়েছিল------তোর কাছে আমি কি দোষ করেছি বলতো? আমি তো তোর কোনো ক্ষতি করিনি। শুধু কথা বলতে চেয়েছি। শুধু কথা। কিন্তু তুই মুখ ফিরিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাস।
কুরচির দুটো হাত ধরে অলিভ কেঁদে ফেলেছিল। কুরচি তাকে ঠেলা মেরে ফেলে দেয়। পড়ে গিয়ে অলিভের কপালে লাগে। সে যখন উঠে দাঁড়ায় তখন কুরচি চলে গেছে। 

অলিভের সারা গায়ে ধুলো বালি। চারদিক থেকে লোক দেখছে তাকে। সে নিচু মুখ করে বাড়ির দিকে চলে যায়।


অলিভ জানতো আজ কুরচির জন্মদিন। সে একটা দামি সুগন্ধি কিনে সঙ্গে ফুল তাদের বাড়ির দরজার কাছে রেখে এলো। সঙ্গে একটা চিঠিও। চিঠিতে লিখেছে--------
কুরচি, 
জন্মদিনের শেষ নেই। জন্মদিন চলতেই থাকে। তবু তোর জন্মদিনের এই বিশেষ দিনটিতে তোকে দিয়ে গেলাম আমার স্পর্শ। তুই ছুঁলেই আমার ভালো লাগবে। তুই ভাল থাক।


------১৬ শ্রাবণ ১৪২৮
-----২---৮----২০২১
-----নির্মল হালদার






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ