মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পরী কাহিনী // নির্মল হালদার

পরী কাহিনী // নির্মল হালদার




আজ লেখা নেই।

মেঝেতে কয়েকটা মুড়ির দানা পড়ে আছে। দেখতে ভালো লাগছে না।
আমি সবকটা মুড়ির দানা তুলে
অ্যাশট্রেতে তুলে রাখলাম।

আজ লেখা নেই।

ঘরের কোণে ঝুল লেগেছে। ঝেড়ে ফেললাম। টেবিলটা খাতা পত্র বইয়ে এলোমেলো হয়ে আছে। গুছিয়ে রাখলাম।
মনে হলো, গায়ের গেঞ্জিটা ময়লা লাগছে। খুলে ফেলে সাবান জলে ধুয়ে
রোদে মেলে দিলাম।
গেঞ্জিটা যদিও সকালেই পরেছি।

এখন কেন ময়লা লাগছিল জানিনা।

জানলার শিকে কালি লেগেছে।
দরজার কপাটেও ধুলো-ময়লা।
সব পরিষ্কার করে ফেললাম।
এবার ঘরটা ধুতে হবে।

জল ঢালছি। মেঝেয়।
দেখি, এক পরী এসেছে। সে বলে,
আমাকে ছেড়ে দাও আমি কাজটা করে দিচ্ছি।

অসময়ে পরী?

পরীদের সময় তো রাত্রে।এই বেলা
এসে আমাকে বলছে, তুমি বসো।
আমি আমার পাখা দিয়ে সমস্ত নোংরা
ঝেড়ে ফেলবো।


পরী কেন?

আমাকে সাহায্য করতে পারতো
আমার পিসি। কোথায় গেল পিসি?
পিসিকে বলিহারি! কাজের সময়
পাওয়া যায় না।
পরীকে কাজ করতে বললে অথবা
সে কাজ করলে, আমার মানহানি হবে।
আমি পরীকে বললাম--------------
তোমাকে কোনো কাজ করতে হবে না।
তুমি বরং আমাকে তোমাদের দেশের গল্প শোনাও।
পরী হাসে।
সে বলে, আমাদের দেশে কোনো কাজ নেই। তাই, এ দেশে এসে কাজ করতে আমার ভালোই লাগে। কাজের বিনিময়ে আমাকে এক বাটি মুড়ি খাইও।
মুড়ি তো আমাদের মতোই ফর্সা।
আমি এক ঝুড়ি নিয়েও যাবো সকলের জন্য। এই বলে, পরী ঘরের মধ্যে
উড়তে উড়তে কত যে ঝুলকালি পরিষ্কার করে ফেললো। কি বলবো আর।
তারপর সে আমাকে বলে------
চলো------তোমাকে আকাশটা ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। আমি বললাম------
আমার তো লেখার কাজ আছে। আজ
যেতে পারবো না। লেখা হচ্ছে না একদম। খুব কষ্টে আছি। লেখা হোক আগে। তারপর না হয় অন্য কোনোদিন আকাশ বেড়াতে যাবো।

পরী বলে-----এইতো আমি তোমার লেখার বিষয়। আমি গল্প বলছি শোনো--------যে গল্প তুমি লিখবে।
আমি আগ্রহের সঙ্গে প্রশ্ন করি, কি গল্প কি গল্প জলদি বলো?

সে বলে------

পরীরা সবাই পাখা খুলে রাখে।
এদেশে এলেই , পাখা লাগিয়ে নেয়।
একবার একদল পরী রাত্রিবেলায়
পাখা খুলে নদীতে স্নান করতে নেমেছিল। রাত চরা পাখির দল সেই পাখা তুলে উড়ে যায়।

সে এক বিষম ঝামেলা।
দেশে ফিরবে কি করে? অনেক কাকুতি-মিনতির পরে রাত চরা পাখির দল ফেরত দিয়েছিল পাখা।

আমি পরীর কাছে এই গল্প শুনে
খুব মজা পেলাম। আমি পরীর কাছে
হাত পেতে চাইলাম--------
আমাকে দুটো পাখা দাও। মাঝেমধ্যে
তোমাদের দেশে গিয়ে বিশ্রাম করবো।
আকাশেও অনেক জায়গা। সেখানেও
শোওয়ার জন্য যেতে পারি।

এদেশে তো শুধু ইট বালি সিমেন্ট।
মাটি নেই । আমার ঠাঁই নেই।
পরী বলে-------তোমরা কেন
আমাদের দেশে যাবে? আমরাই
চলে আসবো কখনো কখনো। তোমাদের গল্প শোনাবো। দেখবে,স্বস্তি পাবে তোমরা। 
এদেশে মাটি দেখতে না পেলেও মাটির গন্ধটা আছে। ও দেশে কেউ তো নেই।
না, ও দেশে যাবার দরকার নেই।
আমরা তো মাটির গন্ধ নিতেই এখানে আসি। এখানে কত রকমের মানুষ।
অজস্র ফুল ফল। এখানে বৈচিত্র অনেক। আমার দেশে পরী আর পরী।
পরীদের বন্ধন নেই। মানুষ বন্ধন নিয়েই সারাক্ষণ বাঁচে। এই বাঁচা আনন্দের বৈকি।

পরীকে কি আর বলবো।

আমি চুপচাপ হয়ে দেখলাম, পরী আমার ঘর থেকে উড়ে যাচ্ছে। আমি তাকে মুড়ি দিতে ভুলে গেলাম।


-------১০ আশ্বিন ১৪২৮
------২৭----৯----২০২১




ছবি : রেখা সহিস


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ