সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পানকৌড়ির ডুব / নির্মল হালদার

পানকৌড়ির ডুব / নির্মল হালদার




৭১.
কাড়ার পিঠে কাক চলে যায়

ফাঁকা মাঠ
দূরে রেল ব্রিজ
ঝমঝম করে ট্রেন যায়।

গোবর কুড়ানির কাঁখে ঝুড়ি
আলপথে চোরকাঁটা
তাল পুকুরে জল নাই।

কাড়ার পিঠে কাক চলে যায়

নদী পারে পাখির বাসা
কুল গাছে লাক্ষার ফলন
পাতা ঝরা হাওয়া।

কাড়ার পিঠে কাক চলে যায়

রাস্তা উঁচু-নিচু খালডোব
কুঁদরি লতে শিশির শুকায়
ধান জমিতে সার ছড়াচ্ছে লোক।

কাড়ার পিঠে কাক চলে যায়

কোথায় যে যায় কার কাছে?




৭২.
গোবর জড়ো করছে
ধান জমিতে ফেলে আসবে।
ধানের ফলন বেশি হলে
খড় উঠবে ঘরের চালায়।

খড়ে লেগে থাকা একটি ধান
মহাকালের বীজ

আমাদের আলো-অন্ধকারে

নূপুর বাজায়।


------২৯ ভাদ্র ১৪২৮
------১৫-----৯----২০২১



৭৩.
খড়ে আর কি বাঁধবি
চোখের জলে বাঁধলে কঠিন হবে গিঁট।
খড়তো উড়ে--পুড়ে যায়

চোখের জলে আগুন লাগে না।



৭৪.
যাবি যদি বেগুন বাড়ির দিকে যা।
মরদের সঙ্গে দেখা না হলে,
বেগুন কাঁটাতো আছেই। সেও তো জানে
পিরিতের মর্ম। তোর আঙুলে ফুটে
তোকে দেখাবে তোর রক্ত।

তোর রক্তের উষ্ণতায় মুখ ডোবাবে

ভালোবাসার ভুখ।


------৩০ ভাদ্র ১৪২৮
-----১৬----৯----২০২১



৭৫.
ঝিঙা ফুলের হলুদে কে ফুটলরে?

কোথায় জাত কোথায় কুল
কোথায় বা পিরিতের মূল
কে খুঁজবে?

ঝিঙা ফুলের হলুদ গড়িয়ে পড়ে মাটিতে

মাটির তো জাত নেই কূল নেই
মাটির শুধু মাটি
আমাকে ভাঙ্গে আমাকে গড়ে

আমিও ঝিঙা ফুলের কুঁড়ি



৭৬.
ছেঁড়া শাড়ি কত আর সেলাই করবে

আব্রুও থাকেনা।

সেজো বউ দু হাতে আড়াল করে শরীর।
আড়াল কি আর হয়, লোকে চেয়ে থাকে।
গাছপালাও চেয়ে রয়। জলে নামতে
লাজ লাগে, জল যদি টেনে ধরে শরীর?

সেজো বউ চেয়ে থাকে সূর্যের দিকে।


------৩১ ভাদ্র ১৪২৮
-----১৭---৯----২০২১



৭৭.
আমার বাপের বাপকে আমি দেখি নাই।
সেই আমলের ছবিও নাই। শুধু
তার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি দেখছি।
দেখতে দেখতে খুঁজছি শিকড়ের মুখ

পিতৃ পুরুষের আলো।



৭৮.
কাঁধের কুড়ুলটা ফেলে দিলে
কাঁধে আর ভার থাকবে না ।
মনেও ভার থাকবে না,
কোন্ গাছটা কাটবো, কে পুরনো হলো।

গাছ গাছের জায়গায় থাকুক।
যেতে হবেনা জ্বালানি কাঠ বিক্রি করতে।
আজ বরং মাদল বাজাতে বাজাতে
জিরিয়ে নাও

বাঁশিতে সুর জাগাবে কেউ।


-----১ আশ্বিন ১৪২৮
-----১৮----৯----২০২১



৭৯.
বাঁধের ঘাটে গা মাজছে বউ।
আরেক বউ হাঁড়ি--কড়াই মাজছে।
পাশের ঘাটেই মরদরা সাবান মাখে।
তেল মাখে।

আকাশ থেকে মুছে যায় মেঘের কালিমা।

শালুক পাতা ছলছলায়।

বাঁধের পাড়ে অর্জুন গাছে সবুজ ফল।

এক গলা জলে কুমারীর বুক ওঠানামা করে।

উড়তে উড়তে ডেকে উঠলো একটা পাখি।



৮০.
কে বলেছে তুই দরিদ্র?

এত বড় একটা আকাশ থাকতে
কে দরিদ্র? আর এইযে
প্রজাপতি ছুঁয়ে গেল তোকে
তুই--ও ধনী হয়ে উঠলি

তোর  ধন-সম্পদের কাছে আমি বাসা বাঁধবো।


------২ আশ্বিন ১৪২৮
-----১৯-----৯----২০২১



৮১.
বিহারী মাহাত বললো,আখ হয়েছে
আমাদের জমিতে। ক' টা আখ নিয়ে যাও দাদা।
আমি বললাম, আমি আখের কি বুঝি!
কেননা, আখের রস গভীর এক বিষয়।
না--পারবো পান করতে, না--পারবো ডুবতে।

আমি বরং আখ ক্ষেতের দিকে চেয়ে থাকবো
কবে আখের রস থেকে গুড়?

আমি মাছি হয়ে উড়বো গুড়ে গুড়ে।


----৫ আশ্বিন ১৪২৮
----২২---৯----২০২১



৮২.
খটখটে রোদের মতো মেজাজি
আমার বড়দা
আমার সঙ্গে কোনো কথাই বলতোনা।
আমিও ভয়ে ভয়ে চেয়ে থেকেছি
দাদার দিকে, যদি ধমক দেয়!

আমি যে পড়াশোনা করতাম না।

দাদাকে কেউ বলেওনি, আমার ছিল
ধুলায় ধুলায় লেখাপড়া। দাদাও যেমন
লুকিয়ে লুকিয়ে লিখে গেছে
নাটকের পর নাটক। যা আজও
মঞ্চস্থ হলো না।

দাদা আজও নাটক লেখে
আকাশের তারায় তারায়।
আমি দেখতে পাই, নাটকের
কুশীলব কারা। শুধু তাদের
সংলাপ শুনতে  পাইনা।


------৬ আশ্বিন ১৪২৮
-----২৩-----৯-----২০২১



৮৩.
রমণীর মাথায় ঘাসের বোঝা
আরেক রমণী গরু পাহারায়
নদীতে মাছ ধরছে ছেলে
ছোট গাছের পাতা টানছে ছাগল

হাঁসুয়া হাতে একটা লোক
কাশের রেণূ উড়ছে হাওয়ায়
আকাশের নীলে মেঘের স্তুপ
একদল ভেড়া।

আশ্বিনের ধানক্ষেতে বকের উড়াল
ধান ফুলে রোদের ঝলক
আলপথে একটা ছাতা যায়
বুয়ান ডালে কাজল লতা

পাহাড়ের আবছা মাথা
অনেক দূরে জঙ্গলের রেখা
বালুচরে পায়ের ছাপ
বালুচরে শ্যাওলা, পাতা পুতা

নদীতে ছোট ছোট ঢেউ

আমাদের ছোট নদী

ছোটবেলা।



৮৪.
নিভু নিভু লম্ফ। উনুনের আলো।

বেলুন চাকিতে ঘুরছে রুটির পৃথিবী।

মায়ের কপালে ঘাম।

আমার চাই একটা গরম রুটি।

স্নেহের--আগুন পোড়া রুটি।


------নির্মল হালদার
------৮ আশ্বিন ১৪২৮



৮৫.
আকন্দের ঝাড়
বুনো তুলসি
পিঁপড়ে তুলছে বালি
মৌমাছির গুঞ্জন

রোদের বেলা
নিম গাছের পাশে নিম গাছ
কাজের লোক রাস্তায়
কাক ডেকে উঠলো

সাইকেলে বালির বস্তা যায়
তাল তলে ভাঙ্গা হাঁড়ি
খোলামকুচি
কুকুরের সঙ্গে কুকুর

গরু ছাড়া হেলানো গাড়ি
দেওয়াল লিখন
পথের ধারে ধারে ঘর
মাটির পাঁচিল

খোলার চালে কাপড় শুকায়
সজনে গাছের পাতা ঝরে
হাঁস নামে ডোবায়
বাঁশের গোড়ায় গোবর

কী চাইছি আমি কার কাছে?



৮৬.
আমার আত্মীয় স্বজনরা
আমাকে তুলসির চারা এনে দেয় নি।
আমি শুধু তুলসি গাছের নামে ধূপ জ্বালাই।

ধূপের ক্ষীণ আগুনে নিজেকে পোড়াতে পোড়াতে
তুলসির ছায়া বুকে পুঁতে রাখি।


------৯ আশ্বিন ১৪২৮
-----২৬-----৯-----২০২১
-----নির্মল হালদার




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ