নিঃশব্দ / নির্মল হালদার
বড় হাট থেকে ২ কেজি পটল। ২ কেজি টমেটো। ৩ কেজি কুঁদরি নিয়ে চক বাজারে বিক্রি করতে আসে বাসমতী মাহাতান।
বাসমতীর তিনটে বেটা।
সবাই আলাদা আলাদা খায়।
বাসমতীও আলাদা রান্না করে।
ভোর আঁধার থাকতেই সে উঠে পড়ে।
জোগাড় করে রান্নার।
প্রতিদিন বিকেলবেলা চকবাজার থেকে গিয়ে কাঠকুট সংগ্রহ করে রাখে। ভোরবেলা কাঠের আগুনে
ভাত চাপায়। সঙ্গে হয়তো দু-একটা আলু। অথবা সজনে শাক সিঝা
ভাতের সঙ্গে।
তারপর হাঁটতে হাঁটতে শহরে আসে।
স্বামী নাই।
শরীর খারাপ হলে দেখার কেউ নাই।
সেবার অসুখে পড়েছিল। বেটারা উঁকি দিয়ে চলে গেছলো নিজের নিজের কাজে। গাঁয়ের এক মহিলা বাসমতীর অবস্থা দেখে টোটোতে নিয়ে গেছলো
সদর হাসপাতাল।
বলছিল আজকাল হাঁটতে কষ্ট হয়।
পা দুখায়।
গাঁ থেকে টোটো যায় শহরে। বাসমতী
ভাড়ার ডরে গাড়িতে ওঠে না।
কে দিবেক ২০ টাকা! সবজি বিকে
রোজগার নাই।
বেশি পুঁজি হলে বেশি লাভ।
বাসমতীর পুঁজি নাই।
তিন তিনটা বেটার মত পুঁজি থাকতে
আর পুঁজি পাবে কোথায়?
চকবাজারে এসে কিছু কিনেও খেতে হয়। যে টুকু ভাত পেটে পড়ে হেঁটে আসতে আসতে হজম হয়ে যায়। ঘরে ফিরে দুপুরবেলা আর কিছু খায় না
বাসমতী। একেবারে সেই রাত্রিবেলা।
বলছিল-------সেদিন কে একজন
মুসুরির ভাল দিয়ে গেছলো। যেতে হয়েছিল পেট কোলে লুকিয়ে।বেটার
বউরা দেখলে কেড়ে লিবেক।
শহরে অনেকেই আছে, যারা গরিব-দুখিদের দান ধ্যান করে। তো কখনো কখনো বাসমতীও পুরনো সায়া--শাড়ি-ব্লাউজ পেয়ে থাকে।
সেও বউরা কেড়ে নিয়েছে।
তাদের অভাব নাই। কিন্তু শাশুড়ির সবকিছুতে ভাগ বসাবে। না দিলে গালমন্দ করবে।
এই বাসমতী সন্ধ্যা রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ে। কেন না সে ক্লান্ত থাকে খুব। পায়ে ব্যথা বেদনাও থাকে। যেহেতু সে ভোর আঁধারে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। তাই ক্লান্তিতে বেশি রাত অব্দি জেগে থাকতে পারেনা। বয়সও হয়েছে।
বলছিল------
ঠান্ডা কালে এক মাড়োয়ারি চকবাজারের অনেক সবজিওয়ালিকে কম্বল দান করেছিল। সেই কম্বল পেয়ে বাসমতী খুব খুশি। জাড়টা কেটে যাবে। ছেঁড়া কাঁথা আর গায়ে জড়াতে হবে না।
বাসমতীর কপালে অত সুখ সইলো না। সে ঘুমিয়ে গেছলো। তার গা থেকে কম্বলটা তুলে মেজ বউটা লিয়ে পালালো।
আলাদা ঘরে শুলে কি হবে, বাসমতীর ঘরের কপাটে কোনো হুড়কা নাই। পরেরদিন মেজ বউ আবার বলে------ তোর ত কাঁথাকানি আছে--------কিসকে কম্বল লিবি? হামদের ছুটু ছুটু বেটা বিটি। হামদেরেই দরকার খুব।
বাসমতী মুখে কাপড় চাপা নিয়ে
নিঃশব্দে কাঁদে।
------৫ আশ্বিন ১৪২৮
-----২২----৯----২০২১
----নির্মল হালদার
ছবি : রেখা সহিস

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন