ঘটনা দূর্ঘটনা / নির্মল হালদার
ঋজুর হাত ভেঙেছে বাইক এক্সিডেন্ট করে। আপাতত সে ঘরবন্দি।
মনীষা তাকে বলছিল, একটা হাত এনে দেবে । অর্থাৎ ঋজু তিনটে হাত নিয়ে কাজ করবে।
ঋজু বললো, সে নিজের যন্ত্রণায় অস্থির। এখন রসিকতা ভালো লাগছে না তার।
মনীষা ঋজুর প্লাস্টার বাঁধা হাতে হাত রেখে বলে--------রাগ করিস না। মানুষ একটা হাতেও কাজ করতে পারে। প্রয়োজনে একটা হাত দশটা হাত হয়ে যেতে পারে।
আজ তুই বরং আমার সঙ্গে বাইরে চল্। তোকে আমি আমার বাইকে ঘুরিয়ে আনবো।
ঋজু রাজি হয় না। সে এখন বাইকে উঠতে ভয় করছে। যদিও তার ইচ্ছে করছে, মনীষার সান্নিধ্য।
এই মুহূর্তে দুহাত জড়িয়ে মনীষাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে ঋজুর। কিন্তু একটা হাত ভাঙ্গা। তার নিজের উপর রাগ হলো। এতদিন সে বাইক চালাচ্ছে কখনোই এক্সিডেন্ট করেনি।
সেদিন হঠাৎ -------------দুয়ারে সরকারের লাইন। একেবারে স্কুলের চৌহদ্দি পার হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে মানুষ। সমস্ত ভিড় লক্ষীর ভান্ডারে। মেয়েদের লাইন।
ঋজু দেশ--গাঁ থেকে ফিরছিল শহরের বাড়িতে। এক মহিলা রাস্তা পার হয়ে আসছিল। সে বুঝে উঠতে পারছিল না, মহিলা কোন্ দিকে যাবে। এবং মহিলা এসে পড়ে বাইকের সামনে।
ঋজু মহিলাকে বাঁচাতে গিয়ে বাইক থেকে নিজেই পড়ে যায়। এতটাই দূরে পড়ে যায়, যে কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না সে। মাথায় ভাগ্যিস হেলমেট ছিল।
বাঁ--হাতটা দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
তার যন্ত্রণা হচ্ছিলো। সে অবস্থায় সে দেখতে চেষ্টা করছিল, মহিলার কিছু হয়নি তো!
কিছু লোকজন দৌড়ে এসে ঋজুকে তুলে দেয়।তাদের মধ্যে একজন বলে,
খুব জোর বেঁচে গেছো ভাই। তখন কোনো গাড়ি আসেনি ভাগ্যের জোর।
নইলে কি যে হতো। তবে মহিলার কিছু হয়নি তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো। এখন যাও হাসপাতলে।
গাড়ি তুলে শহরে যাওয়ার মত ঋজুর
ক্ষমতা ছিল না। ঋজুর মতো এক যুবক ঋজুর গাড়িতেই হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। ছবি ও প্লাস্টার হয়ে গেলে
বাড়িতেও পৌঁছে দিয়ে যায়।
ঋজু মনে মনে দুয়ারে সরকার প্রকল্পকে গালাগাল করে। মনে মনে এও বলে------
দুয়ারে সরকার
ঘরে ঘরে বেকার।
মনীষার দিকে চেয়ে ঋজু বলে, সত্যি সত্যি তুই যদি একটা হাত এনে দিতে
পারিস মন্দ হবে না।
এমন তো হতেই পারে, ভাঙ্গা হাতটাকে খুলে মেরামত করলাম। তারপরে আবার লাগিয়ে নিয়ে কাজকর্ম করা। অথচ হাতটা হাতেই থাকবে। ভোগ করতে হবে যন্ত্রণা।
আজ ৭ দিন হয়ে গেল। বিরক্তি এসে গেছে--------এই বলে ঋজু ডান হাত দিয়ে কাছে টেনে নেয় মনীষাকে। মনীষা তার ভাঙ্গা হাতটা কাছে নিয়ে
চুমু খেতে থাকে। ঋজুর মনে হয়
হাত থেকে ব্যথাটা আস্তে আস্তে নির্মূল হয়ে যাচ্ছে। ঋজু মনীষার মাথায় চুম্বন রাখে। সে কুয়াশা দেখতে পায়।
দেখতে পায়--------ঋজু মনীষাকে কাঁধে তুলে নিয়েছে। আর বিড়বিড় করে বলছে----------------
মনীষার ভালবাসা মাহুতের মত ছিল
উঁচু/মনীষার ভালবাসা মাহুতের মত উঁচু।
সে মনীষাকে যেন বা চার হাত দিয়ে
নিষ্পেষণ করে। যেন বা সে তার চার হাত দিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় তুলে দিতেও পারে।
ঋজু সামনেই দেখতে পায় মস্ত এক পাহাড়। আলোয় আলোকিত।
-----৪ আশ্বিন ১৪২৮
----২১---৯---২০২১
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন