কথার সঙ্গে দেখা হয় না আজকাল।
সে যে কোথায় গেছে কে জানে!
আমার সঙ্গে শেষ দেখা একটা বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে। সেও তো হয়ে গেল তিন চার মাস।
হেমন্ত এসেছে। হিমের পরশ। শীতের ছোঁয়া। কথা আসবে না? উষ্ণতা নিয়ে
আসবেনা?
ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। চারদিকে ফুটে উঠছে ধূসরতা। আমার মন কেমন করছে।
টেবিলে মুখ গুঁজে বসে ছিলাম। ভ্রমর এসে ডাকে: কাকু কাকু-------। চোখ খুলে দেখি, ভ্রমরের ফুটফুটে মুখ। শিশু মুখ।
আমি গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম। তাকে কোলে নিয়ে বাইরে এসে দেখি, গরুর গাড়িতে ধান যাচ্ছে। দু'তিনটে শালিক খুঁটে খাচ্ছে ধান।
ভ্রমরকে বললাম, ওই দ্যাখ ওইটা শালিক। হয়তোবা পায়রাও আসবে।
কথা আসবে না?
কথার পায়ের দিকে চেয়ে থাকতাম।
ওর বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলের কাছে একটা কালো তিল।
ওই তিল কখনো আমার কাছে শুধু চিহ্ন নয়। যেনবা একটা গোল সূর্য। কথার পায়ের কাছে এসে মিনতি করে-------তোমার সঙ্গে থাকতে চাই।
কথা গ্রাহ্য করে না।
ওই গোল চিহ্ন আমিও তো হতে পারি।
আমিও তো বলতে পারি, তোমার সঙ্গে থাকতে চাই। আজীবন। এজন্যে তোমার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়েছি।
আমাকে গ্রহণ করো।
কথা আমাকে গ্রহণ-বর্জন কিছুই করেনি। তার সঙ্গে যে আমার দেখাই হয় না। প্রতিদিন বাতাসকে বলি, কথার খবর এনে দাও। প্রতিদিন আমার সময়কে বলি, কথাকে সামনে এনে দাও। আমি দুচোখ মেলে দেখবো।
কথা একদিন মাত্র আমার ঘরে এসেছিল। আমার চিরুনিতে রেখে গেছলো, তার মাথার লম্বাচুল। তিনটি মাত্র চুল। সে চলে যাওয়ার পর আমি ওই তিনটে চুল দেশলাই বাক্সে ভরে রেখেছি।
দেশলাই বাক্সটি কথাকে ফেরৎ দিতে চাই। কেননা,ওর মাথার রাশি রাশি চুল থেকে তিনটে চুল কম পড়ে গেছে।
ওকে ফেরৎ দিলে কথা আবার লাগিয়ে নিতে পারবে। সে যদি না পারে, আমি গেঁথে দিতে পারবো ওর মাথায়।
কথা কত দূরে আছো?
ধান পাকা হাওয়া ফিরে এসেছে।
আমাকে কিছুই বলতে পারলোনা, তুমি কোথায় আছো?
ভোরাই বলতে পারবে? নাগরিকা?
গতকাল স্বপ্ন দেখছিলাম, আমার হাত ধরে তুমি শ্মশানকালী নিয়ে যাচ্ছো। শ্মশানকালীর স্তব্ধতায় নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়। তুমি এই কথা বলতেই, আমি রাজি হয়ে গেলাম।
আমরা গেলামও।
স্তব্ধতা নেই।
কেবল আলো আর আলো। আলো যেন চিৎকার করছে। কালী পূজা উপলক্ষে সাজানো হয়েছে আলোকমালায়।
আমি কথাকে বললাম---এই আলো তো চাইনি আমি।
আমার ঘুম ভেঙে গেল।
কথা কত দূরে তুমি?
এসো দেখা করো। তোমার মাথার চুল তোমাকে ফেরৎ দিতেই হবে। নইলে দেখা যাবে আরও চুল উঠে যাচ্ছে তোমার। তা আমার সহ্য হবে না।
আমার কাছে যে তিনটে চুল এরাই তো ধরে রাখবে বাকি চুল। বা বেঁধে রাখবে।
না--বলে কোথায় যে চলে যাও?
যদি আমার কাছে একটা নদী রেখে যেতে, তাহলে নদীর হওয়া আমাকে রোজ খবর দিতো,
তুমি কোথায় আছো? কি করছো?
কারুর কাছ থেকে কোনো খবর নেই তোমার। তুমিতো চিঠিও লেখোনা। ফোনে তোমার এলার্জি।
যে বাড়িতে থাকতে বর্তমানে ভেঙ্গে গেছে। শুনলাম, থাবা পড়েছে প্রোমোটারের।
আকাশ কী প্রোমোটারের খপ্পরে পড়বে? আমি জানিনা। আমি শুধু জানতে চাই, কবে মুখোমুখি হয়ে কথার সঙ্গে কথা বলবো?
প্রতিদিন একবার দেশলাই বাক্সটা খুলে কথার মাথার চুল আমার গালে বুলিয়ে নিই।
মনে হয়, তাকে আমি ছুঁয়েই আছি। কিন্তু আজ দেশলাই বাক্সটা কই?
কই?
টেবিলের ড্রয়ার খুলে আঁতিপাঁতি করে খুঁজি। নেই নেই। আমার বুক ফেটে কান্না আসে।
আমি ছটফট করি।
মাথার চুল ছিঁড়তে থাকি। হাত পা ছুঁড়তে থাকি।
ভ্রমর আসে তখনই। সে বলে-----
এই নাও তোমার দেশলাই বাক্স।
আমি খেলছিলাম।
দেশলাই বাক্সে তিনটে চুল নেই।
------১৭ কার্তিক ১৪২৮
-----৪----১১----২০২১
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন