সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

একতারার একটি তারে / নির্মল হালদার

একতারার একটি তারে //



পাথর//

পাথরের মন থেকে লতাগুল্ম

পাথরের মন থেকে পাথরের সজীবতা

পাথরই ছিল একদিন রক্ত-মাংস

পাথরই ছিল একদিন আনন্দ বিষাদ।



কলস//

লাঙ্গলের ফলায় উঠে এসেছে একটি সোনার কলস

কলসিতে সোনাদানা নেই আছে শুধু জল

প্রাচীনকালের জল।

এক কলসি জল পুঁতে দিয়ে গেছলো মাটির তলায়

এক মেঘবতী কন্যা।



আগুন চাই//

ফুঁ দিলেই সূর্যের আঁচ বাড়ে

আগুন চাই।

অনেক রান্না বাকি।

অনেক খিদে বাকি।

ফুঁ দিলেই হু--হু করে আগুন।

আগুন চাই।

আগুনের আলোয় দেখা যাবে,

বিধ্বস্ত মুখ।


-------২১ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৮----১২----২০২১



পাথর//

পাথর ছোঁড়ার আগে পাথরের মনকে দেখো
সে কি আর অস্ত্র হতে চাইছে!
সেতো চাইছে কুশল সংলাপ।

কুমারী--টটকোর ছায়া রচনা করবে শয্যা।

সৃষ্টির ভূমি।



তীর ধনুক//

ব্যাধের কাঁধ থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেছে
আমাদের হরিণ আমাদের পাখি।
তীর-ধনুকটা ঝুলছে তাই হরিণের শিঙে। পাখির ল্যাজে।

কাঁধ থেকে টাঙিও পড়ে গেছে

আর রক্তমাংসের উল্লাস নেই।



নাকছাবি//

আকাশ থেকে পেড়ে দেবো তোর নাকছাবিটি।

তোর ফুর্তি তোকেই দেবো।

আমার মনের ভার তোকেই দেবো।

বহন করতে না পারলে
গাধার পিঠে উঠিয়ে দিস।



------২২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৯----১২----২০২১



প্রকৃতি
----------

প্রকৃতিতে যা আছে
সকলেই আমার পিতৃ-পিতামহ।
প্রকৃতিতে যা আছে
সকলেই আমার মাতৃ--মাতামহ।

প্রকৃতিতে ঝড় এলে আমি কাঁধে তুলে নিই।
প্রকৃতিতে বৃষ্টি এলে আমি কাঁধে তুলে নিই।

সকাল সন্ধে
প্রকৃতির কাছে আমার প্রণতি।



ছন্দ
--------

রাস্তা অকেজো হলে মেরামত করতে হয়।

যেমন ঢোল--ধামসা ছিঁড়ে গেলে
মেরামত করতে হয়, ঢোল---ধামসার তালে তালে
নাচতে হবে যে

তেমনি রাস্তার ছন্দে চলতে হবে যে।

অথবা,
পায়ের ছন্দে রাস্তাকে চলতে হবে যে।



সূর্য
-------

সূর্য নিভে গেলে অজস্র চোখ আলো জ্বালাবে।

আলো ফুরানোর কথা নেই।

হৃদয়ের কথাও ফুরোবে না।

হৃদয়ে হৃদয় যোগ করে
এক একটা সূর্য।
আমাকে স্নেহ করে, আমি হেঁটে যাই
সূর্যের দিকে।

সূর্য আমার অগ্রজ।



২৩ অগ্রহায়ণ১৪২৮
১০----১২----২০২১


পিঁপড়ে//

হাতির পিঠ থেকে নেমে পিঁপড়ে চলে যায়
নিজের বাসাতে। পিঁপড়ের ডিম
পিঁপড়ের পায়ের কাছে আসে।

পিঁপড়ে--মায়ের কাছে আসে।

শব্দ হয় শব্দ হতে থাকে স্নেহ ভালবাসার।



ব্যক্তিগত//

সবারই একটা গোপন নদী আছে। যে নদীতে
সুখ-দুঃখ ভাসে। যে নদীতে প্রজাপতি পাল তুলেছে। যে নদী সাগরে যায় না।
যে নদী ব্যক্তিগত।

যে নদীর জলে মুখ দেখা যায়।



------২৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------১১----১২---২০২১



একমুঠি//

সফলতা রাস্তায় নামলে
রাস্তা মসৃন হয়ে ওঠে, সহজ হয়ে ওঠে।
সঙ্গি হয়ে ওঠে।

সফলতা এসো, খালডোব রাস্তায়

সফলতা এসো, ভাঙ্গা থালায়

দিনের শেষে আমারও একমুঠি জুটবে।



সৌন্দর্য//

ব্যর্থতা নেই সফলতা নেই

ব্যথা আছে।

অনেক দূরের ব্যথা অনেক কাছের ব্যথা
মেঘের মতো থরে থরে সাজানো
প্লেটে প্লেটে সাজিয়ে দিলেও চমৎকার।

সুগন্ধ ছড়ায়।

সৌন্দর্য ছড়ায়।

স্পর্শ করার আকাঙ্ক্ষা থেকে আনন্দ আসে,
আরেক ব্যথা।
টিয়া পাখির ঠোঁটের মতো লাল।



স্বপ্ন//

স্বপ্ন তো একরকম বাঘ
হাঁ করবেই।
আমিও বাঘের মুখে ছটফট করি।

স্বপ্নেরা শুধুই বাঘ হলে
রামধনু আঁকবোনা আর।
আমার ললাট থেকেও মুছে ফেলবো
স্বপ্নের আঁকি-বুকি

স্বপ্নের ঘাম।


-----২৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----১২----১২---২০২১



দুঃখের বীজ//

দুঃখের মতো ছোট-বড় বীজগুলি
একলা রেখোনা।
ওর দুঃখ তার দুঃখ
তোমারই সঙ্গে রাখো।

তুমিও দুঃখের স্পর্শে বীজের গভীরে যাবে।

দেখবে, মানুষ একা একা কাঁদছে।



সুন্দরতা//

সুন্দরতা, এই দিকে এসো-------
ওই গাছে মুকুল আসেনি।
সুন্দরতা, পথে নামো
ন্যাংটো শিশুর হাত ধরো।

অপমানের পাশে দাঁড়াও।

সুন্দরতা,
তুমিই তো বুকের হাওয়া
লাঙ্গলের ফলায় শত শত জন্ম
বিরহীর নিঃসঙ্গতা,

সৃষ্টি।



বাঁশি//

বাঁশির সুরে মাঠের সবুজ
সবাইকে সবুজ করে
সবাইকে প্রশস্ত করে।

বাঁশির সুরে মাটির গান
সবাইকে কোমল করে
সবাইকে আলো করে।

বাঁশির সুরে বীজের কথা।

আকাশও গর্ভিনী হয়ে ওঠে
নতুন তারার জন্ম দেবে বলে।


-------২৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------১৩----১২----২০২১
------নির্মল হালদার





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ