আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ - ৮
-------------------------------------------------------
একটি পাতা খসে পড়লো।
আরো একটি পাতা খসে পড়লো।
আরো একটি পাতা।
পাতা পড়ছে ছন্দে ছন্দে।
হাঁসগুলি ভেসে ভেসে কোলাহল করলেও হাঁসের সাঁতার ছন্দে ছন্দে।
পায়রার বকম বকম সুরে সুরে। ছন্দে গাঁথা।
পায়ে পায়ে তৈরি হয়েছে পথ।
আসলে ছন্দে ছন্দে তৈরি হয়েছে পথ।
বৃষ্টির শব্দ ছন্দে লেখা।
কোন্ ছন্দ কত মাত্রার ছন্দ? কোথাও কোনো লিপিবদ্ধ নেই। পাখি ডাকলে আমি নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবোনা কত মাত্রায় ডাকছে? ঝরনার কাছে দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই না, ঝরণার শব্দ সাত মাত্রার। কিংবা বলবো না, পয়ারে রচিত ঝরনার এই বয়ে যাওয়া।
প্রথাগত ছন্দ আমার জানা নেই।
আমি জানি, একটা কাক উড়ে গেলে মৃদু এক শব্দ হয়। ঘুম ভাঙলেও সূক্ষ্ম এক শব্দ হয়। প্রতিটি শব্দের ওজন আছে। প্রতিটি শব্দেই ছন্দ।
শিশু হেসে উঠলে চারদিকেই ছন্দের রেখা। শাদা মেঘের চলাচল। এই ছন্দ প্রকৃতি থেকে জন্ম নিয়েছে। এই ছন্দ দুই দুই চার নয়। এই ছন্দ হিসেবের বাইরের ছন্দ। হিসেবের বাইরের ছন্দ, মুটে মজুর রিক্সাওয়ালার ভাষা। কুলি কামিনের ভাষা। আমার ভাষা। আমার কবিতা।
আমার কবিতা নক্ষত্রের পাশে নীরব কবিতা। আমার কবিতা ধুলো থেকে ধুলো হয়ে সজনে পাতায়।
আমার কবিতা তোমার নখে রক্তের আভা। আমার কবিতা ভাতের থানায় একটু নুন। প্রয়োজন পড়লে তুমি নাও। প্রয়োজন না পড়লে, ছুঁয়েও দেখতে হবে না। আমার কবিতা বকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক অপেক্ষা। তুমি লক্ষ্য না করলেও আমারই অপেক্ষা।
আমার কবিতা আমার পালকের কাছে একটি ভোর। পায়রা এসে ডাকছে। কাক এসে খুঁজছে বাসি রুটির স্বাদ।
আমার কবিতা তুলসী গাছের ছোট ছোট হাওয়া।বটতলায় জ্বলতে থাকা প্রদীপ।
আমার গোপন প্রেমের নিঃশব্দ চরণ।
এক গলা জলে দাঁড়িয়ে থাকা শালুক ফুলের চেয়ে থাকাও একটি কবিতা। এই বাংলার কবিতা। বাংলা ভাষার কবিতা।
আমার কবিতা ক্ষুধার্তের পাশে ক্ষুধার্ত।
আধুনিকতা, ছদ্ম আধুনিকতা আমাদের ক্ষতি করেছে চারদিক থেকেই। নীতি নৈতিকতা আদর্শ মূল্যবোধ প্রেম ভালবাসাও ক্ষয়ের দিকে। সর্বনাশের দিকে। এখানে কবিতাও সর্বনাশের দিকে।
প্রতিরোধ? কে করবে প্রতিরোধ?
দূরে দূরে গ্রাম দশ বারোখানি
মাঝে একখানি হাট।
সন্ধ্যায় সেথা জ্বলে না প্রদীপ
প্রভাতে পড়ে না ঝাঁট।
আমাদের জীবনের ক্ষেত্রে শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যতীন্দ্র নাথ সেনগুপ্তের কবিতার মতোই ব্রাত্য হয়ে পড়ছে আমাদের প্রকৃত বাংলা কবিতা। যতীন্দ্র নাথ সেনগুপ্তের নাম আজকের বাংলা কবিরা ক'জন জানে?
মনের অঙ্গনে অঙ্গনে ধুলো জমছে। আবর্জনা। ঝাঁট দেবার মত সময় নেই। খোঁজ করার মত মন নেই। আর তাই, পীতাম্বর দাস আড়ালে পড়ে গেছেন। যিনি ছিলেন বাঁকুড়ার মানুষ। যার কলম থেকে আমরা পেয়েছি কালজয়ী একটি গান। অথবা কবিতা-----
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি--
১৭ কার্তিক ১৪২৯
৪---১১---২০২২
নির্মল হালদার
আরও পড়ুন

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন