আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ---৭
------------------------------------------------------
প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রযন্ত্রের একটা অংশ। তাদের নির্দেশে শিক্ষা সংস্কৃতি রাজনীতি খেলাধূলা। তাদের নির্দেশেই আহার নিদ্রা মৈথুন। তাদের নির্দেশে আমাদের পাঠাভ্যাসও তৈরি হয়ে ওঠে।
আমরা আকবর পড়বো না বাবর পড়বো, প্রতিষ্ঠান স্থির করবে। কাল যদি আমাদের পাঠ্যসূচি থেকে রবীন্দ্রনাথ বাদ চলে যায়, আশ্চর্যের বিষয় নয়।
প্রতিষ্ঠানতো স্থির করবে ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রী অরবিন্দর আধ্যাত্বিক জীবন পড়বে। কখনোই পড়বে না বিপ্লবী জীবন।
দেশের জনসাধারণ প্রথমে বাদ-প্রতিবাদ করলেও পরে তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে যায়। স্তব্ধ করে দেবার মত প্রতিষ্ঠানের অনেক রকম অঙ্ক থাকে।
সেই অঙ্ক জনসাধারণের পক্ষে সব সময় জানা সম্ভব নয়। নাগরিকদের কেউ কেউ জানলেও প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় না। নাগরিকদের মধ্যে যে দু-একজন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেখা লিখি করে পত্রপত্রিকায়, সেও রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখে পড়ে। তাকে সম্প্রতিককালের ভাষায় " মাওবাদী "হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। চিহ্নিত করা হবে "আরবান নকশাল "হিসেবেও।
আমার তো মনে হয়, আমাদের এই বাংলার ছেলে ভুলানো ছড়াগুলিও বেশি বেশি করে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হলে ছাত্রছাত্রীরা জানবে, একটা সময় মুখে মুখে সৃষ্টি হয়েছে এইসব ছড়া।
সরল সহজ ছড়াগুলি জীবনকে নিয়ে যাবে সহজ ছন্দের দিকেই। যে ছড়াগুলি স্নেহ ভালবাসা থেকে
হৃদয় থেকে উচ্চারিত হয়েছে।
বাঙালি জীবনে ব্রত কথাও আছে অনেক। সেও তো কবিতা। মন্ত্র এক রকমের কবিতা।
এড়িয়ে না গিয়ে মন্ত্র ও ব্রতকথার ভিতরে প্রবেশ করলে দেশ ও দশের হৃদয়কে খুঁজে পাওয়া যাবে। আড়াল না করে গ্রামীণ জীবন থেকে খুঁজে নিয়ে আসা প্রয়োজন খেলাধুলোর ছড়া। সেও মুখে মুখে রচিত। যা অবলুপ্তির পথে।
আদিবাসীরা গাছপালার আরাধনা করে। কান পেতে শুনলে শোনা যাবে আরাধনার মন্ত্র। অথবা গান। কিম্বা আরাধনার কথাগুলি।
আধুনিকতা আড়াল করছে যে সমস্ত গান যে সমস্ত জীবন। যে সমস্ত চরাচর।
এক সময় তো ছিল মাছ ধরাদের গান। ধান রোয়ার গান। ধান কাটার গান। ছাদ পেটার গান। সেই সব গান আমাদের হৃদয়কেও স্পন্দিত করেছে। আমরা জেগে থেকেছি।
আজ শুধু ঘুম। অনেক দূর ঘুম।
বুলবুলিতে ধান খেয়ে গেলেও বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছি।
ঘুমপাড়ানি নেশায় আমরা আচ্ছন্ন। আমাদের কাছে নেই আর ঘুমপাড়ানি সুর।
আধুনিকতা নির্দেশ করে, চাহিদার দিকে যাও। আধুনিকতাই হচ্ছে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত। আধুনিকতার ইশারা মান্য করে চললে, সুখের সীমা থাকবে না।
অতুলপ্রসাদ রজনীকান্তের গান কতটুকু শোনা যায়? নজরুলের শ্যামা সংগীত কতটুকু শুনতে পায় সংগীত প্রিয় মানুষ?
কোনো না কোনোভাবে চোরাগোপ্তা ভাবে হলেও নির্দেশ আসছে , একে রাখো তাকে ফেলে দাও। তাকে রাখো একে ফেলে দাও।
শিল্প সাহিত্য সমাজ জীবনের এক রূপ। সেই রূপ বিকৃত করে প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের ছলাকলা।
রাষ্ট্রযন্ত্রের থাবা। এবং হাঁ- মুখ।
হাঁ-মুখের ভিতরে প্রবেশ করলেই, রাজ কবি। সভাকবি। অথবা জীবন যাপনে স্বচ্ছন্দ এক নাগরিক।
চাষাভূষো কুলি কামিনরাতো নাগরিক নয়। তারা শুধু কলের কথা শুনবে। কলের কবিতা শুনবে। না শুনলেই নাকখৎ দাও। চাবুক খাও।
হে প্রভু, এই তো পিঠ পেতেছি।
----১৬ কার্তিক ১৪২৯
----৩---১১---২০২২
-----নির্মল হালদার
আরও পড়ুন

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন