বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৩

আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ---১৬



আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ---১৬
---------------------------------------------------------

মুখের ভাষা হোক কবিতার ভাষা
একথা বলতে বলতেই
আমার বন্ধু রামানুজ মুখোপাধ্যায় বললেন-----
মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে এলেই,
কবিতার ভাষা। কবির ভাষা।

কবি যখনই কোনো ভাষা ব্যবহার করছেন তখনই কি তা কবিতার ভাষা?

তর্ক বিতর্ক চলতে থাকুক।

আমিও দিতে থাকবো পন্ডিতি প্রশ্নের মূর্খ উত্তর।

৮০ দশকে শান্তিনিকেতনে শিবনারায়ণ রায় একটি সাহিত্য সভার আয়োজন করেছিলেন--সেই অনুষ্ঠানে সৈকত রক্ষিত আমন্ত্রিত ছিলেন। এবং তিনি মঞ্চ থেকে অনেক কিছু বলার পর 
ঘোষণা করেছিলেন---মূর্খের ভাষা হোক সাহিত্যের ভাষা।

সেই ভাষা কেমন ভাষা?

মানব পৃথিবীর বাইরেও আছে পশুপাখি কীট পতঙ্গের ভাষা। গাছপালার ভাষা। জল ঝড়ের ভাষা। পাহাড়ের ভাষা, সেও তো আমাদের।

কাছে যাবোনা?।

নিকটে যাবার বেলা বয়ে যায়।

দূরে দূরে থাকলে নদীসমুদ্রকে জানা যাবে না। দূরত্ব থেকে চেনা যাবে না ঝর্নার রূপ।

যদিও সমস্ত ভাষা ধরে থাকা সম্ভব নয়। জানাও সম্ভব নয়। তারপরও বলবো, কাছে যেতে হবে। বহমান প্রাণের সুখ দুঃখের কাছে যেতে হবে।

বৃষ্টি পড়ার শব্দে উল্লাস করি। মুগ্ধ হই। কিন্তু কান পেতে শুনি না, বৃষ্টির ভাষা। বহু যুগের ওপার হতে যে বৃষ্টি এসে আমাদের ভেজায় তার কাছে না গেলে প্রকৃতির আরেক রূপ জানা যাবে না।

আমার বন্ধু স্বপন চক্রবর্তীর প্রিয় ঋতু গ্রীষ্ম। আমি তাকে না বললেও মনে মনে জেনেছি, তিনি নিশ্চয়ই , গ্রীষ্মের দাবদাহ , তৃষ্ণা,
মরীচিকা, জল কষ্টের পরেও গ্রীষ্ম দিনের আলো দেখতে পেয়েছেন। আর তাই, ভালোবাসেন গ্রীষ্মকে।তার মতো করে প্রকৃতির একটি ঋতুকেও আমি অন্তত ভালোবাসতে পারিনি। তিনি আরেকটি কথা বলেন----
প্রকৃতি সব সময় অন্তরে বিরাজ করবে।

বাড়ির বাইরে না গিয়েও আমি টের পাবো, পলাশ ফুটেছে মাঠ প্রান্তরে।
স্বপন চক্রবর্তীর এই কথা অথবা বক্তব্য থেকে বুঝতে পারি, তিনি প্রকৃতির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

মনে তো হয় আজকের অধিকাংশ কবিতার ভাষা কৃত্রিম ভাষা।

হোঁচট খাই।

ক্ষুধার্তের ভাষা শুনতে গিয়ে যদি
হোঁচট খেতে হয়, চারদিক অন্ধকার লাগবেই।
আসবে হতাশা।
এখানে একটা কথা, ক্ষুধার্তের ভাষা না জানা থাকলে, খিদে কি জানা যাবে না।

কবির কাছে প্রধান বিষয় ভাষা।

কবিও স্থির করবেন কোন্ ভাষায় লিখবেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথের "সহজ পাঠ "একটি ভাষা-----

এত রাত্রে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে কে? কেউ না, বাতাস ধাক্কা দিচ্ছে। এখন অনেক রাত্রি। উল্লা পাড়ার মাঠে শেয়াল ডাকছে---হুক্কাহুয়া। রাস্তায় ও কি এক্কা--গাড়ি গাড়ির শব্দ? না, মেঘ গুরু্ গুর্ করছে।

" সহজ পাঠ " এর এই অংশটিও
আমার কাছে কবিতার ভাষা।

------২৮ কার্তিক ১৪২৯
------১৬---১১--২০
-----নির্মল হালদার




আরও পড়ুন



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ