আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ--৬
-----------------------------------------------------
সাঁঝে ফুটে ঝিঙা ফুল বিহানে মলিন গো---
মুখে মুখে ফিরতে ফিরতে অনেক কাল হয়ে গেল। এই পঙক্তির রচয়িতা কে? কত সালে লিখিত হয়েছিল?
কোনো ইতিহাস নেই।
আরেকটি পঙক্তির উল্লেখ করছি এখানে,
মাগো আমার মন কেমন করে
যেমন শোল মাছে উফাল মারে।
মেয়েদের চিরকালীন বেদনার আর্তি এই গানের কথার মধ্যে দেখতে পাই।
শুধু গান বলবো কবিতা বলবো না? তাহলে কবিতা কী? এইখানে আরো দু একটি পংক্তি উদ্ধার করছি-----যেমন,
এত বড় পোষ পরবে
রাখলি মা পরের ঘরে।
পরের মা কি বেদন জানে
জ্বালায় গো আমার প্রাণে।
বাংলা কবিতার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয় এই কবিতার রস। অথবা অন্যভাবে বলা যায়, বাংলা কবিতার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয় এই কবিতার ওজন। অথচ এই সমস্ত কবিতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে লোক কবিতা হিসেবে। কে চিহ্নিত করলেন? কারা চিহ্নিত করলেন?
বাংলা কবিতার সংবিধান আছে নাকি? সেই সংবিধানের লেখক কে? কোন্ সাহসে কাদের নির্দেশে
বর্জন করা হয়েছে এই কবিতাগুলি?
আরেকটি কবিতার কথা বলি--
উড়ুক ধূলা লাগুক কাপড়ে
কাপড় কাচব লো ফুল সাবনে।
আধুনিকতা আধুনিকতা চিৎকার চেঁচামেচি করে হেম চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, করুণা নিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, অক্ষয় চন্দ্র বড়াল, যতীন্দ্রমোহন বাগচী, কুমুদ রঞ্জন মল্লিক, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ইত্যাদি কবিরা বাদ চলে গেছেন ধারাবাহিক বাংলা কবিতা থেকে।
এখানেও রাজনীতি আছে, কতিপয় আধুনিক পন্ডিত বা কবিদের অঙ্গুলী হেলনে বাংলা কবিতার চলাচল। পরিচালক কে বা কারা? সচেতন পাঠক-সমাজ জেনে যাবে একদিন। এই যে এখানে উল্লেখ করছি আরেকটি কবিতা। যা গান হয়ে মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায় আজও। যা লেখা হয়েছে অনেক অনেক কাল আগে। এবং লিখেছেন কোনো নিরক্ষর মানুষ। পুরুলিয়ার মাঠে মাঠে গরু চরাতে চরাতেও নিরক্ষর বাগালরা মুখে মুখে রচনা করে গেছে এই সমস্ত গানের পংক্তি----
আয় পুরুল্যা যায় পুরুল্যা
পুরুল্যায় তোর কে আছে?
পুরুল্যারই বাংলা ঘরে
পান খিলি গুঁজা আছে।
এও তো আমাদের বাংলা কবিতা।ধূলা মাটি জল হাওয়ার কবিতা। বাংলার কবিতা। বাংলা কবিতা। রাজনীতির কারণেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃত বাংলা কবিতা। মানুষের কবিতা।
আজকের কবিতা ক'জন পড়েন? কবিরাও কি কবিতা পড়েন?
আমাদের বাঙালি কবিরা চামু কর্মকারের নাম শুনেছেন? সৃষ্টিধর কাটিহার, বরজুরাম দাস, উদয় কর্মকারকে ক'জন জানেন? পুরুলিয়াতেই জন্মেছিলেন কৃত্তিবাস কর্মকার। যার কলম থেকে আমরা পেয়েছি-----
যৌবনের জ্বালা
যেমন শরাবনের বহি-----
স্মৃতি থেকে উদ্ধার করছি, সম্পূর্ণ করতে না পেরে আমি ক্ষমা প্রার্থী।
এখানে আরেকটি কথা বলতে চাই,
বাড়ি আমার ভাঙ্গন ধরা অজয় নদীর বাঁকে
জল সেখানে সোহাগ করে স্থলকে ঘিরে রাখে।
আমি কাঁসাই পারের সন্তান হলেও
আমি অজয় পাড়েরও এক সন্তান। আমার দেশ নেই কাল নেই, আমার কোনো সাল--তারিখ নেই। আমি বহমান। প্রবহমান।
-----১৫ কার্তিক ১৪২৯
-----২---১১---২০২২
-----নির্মল হালদার
আরও পড়ুন

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন