আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ--৯
-----------------------------------------------------
ঢেঁকিতে পাড় দিচ্ছে এক কিশোরী। পাড় দেবার শব্দ উঠছে। কিশোরীর পায়ে নূপুরও শব্দ করছে।
পাড় দেবার শব্দ নূপুরের শব্দ এক হয়ে একটি আবহ।
একটি ছবি।
হাঁড়িতে চাল ফেলার আগে কুলা থেকে চাল ঝাড়ে আমার মা। এবং চাল ঝাড়ার শব্দ আছড়ে পড়ছে হাওয়ায় হাওয়ায়।
টিনের পাতে বিরির ডালের বড়ি দিচ্ছে আমার খুড়ি। সারি সারি। এই সারি সারি বড়ির মাঝখানে ক্ষুদ্র এক রাস্তা। কোনো একটি পোকা ঢুকে পড়লে ছায়া পাবে।
আমার বৌদি পুরনো শিল--নোড়াতে হলুদ বাটছে। শব্দ যায় রান্নাঘর থেকে উঠোন। হলুদ ছিটকেও পড়ছে। কুচি কুচি।
এ সবই বাংলার ছবি। গ্রাম বাংলার ছবি। স্পষ্ট হয়ে ওঠে সমাজ জীবনের ছবি। স্পষ্ট হয়ে ওঠে অর্থনৈতিক কাঠামো।
ছাদে দাঁড়িয়ে একটি মেয়ে তার স্নানের জল মাথা থেকে ঝাড়ছে। ছড়িয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু জলের কণা। অথবা এই ছবিটি, ধানের চারা লাগিয়ে চাষী বউ ঘরে ফিরছে। সাঁঝ বেলা।
কাদামাটি পা। ফাটা ফুটো পা।
আমার দেশের নিজস্ব ছবি।
কবিতায় আসবে না?
ধানক্ষেতের আল পথে দুটি খেজুর গাছ যুগল রূপের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু তো বলতেও চাইছে।
শুনবো না?
একটা কাক একটা কাকের মুখে আহার বাটলে একটা দিন সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে। মনে হয়, আমার সকল খিদে মিটে গেল।
এই অনুভূতির প্রকাশ কবিতায় থাকবে না?
ফুটে ওঠার আবেগ ছড়ানোর পরও জবা ফুলের মঞ্জরি দুলে দুলে কথা বলছে।
কার সঙ্গে কথা বলছে?
মন শুনবে না?
ক্যাঁচর ক্যাঁচর শব্দ তুললেও গরুর গাড়ি আজও আমাদের। গরুর গাড়ি নিয়ে যাওয়া-আসা। হাটঘাট। নতুন বউ তো গরুর গাড়িতেই আসবে। আবার ধান বোঝাই গরুর গাড়ি থেকে শালিকের ঝাঁক খুঁটে খাবে ধান।
এই দৃশ্য জীর্ণ হয়ে যায়নি আজও। গরুর গাড়ির গাড়োয়ান পরিবারের ছোটদের কাছে, "কাকা "। তার ছেলেমেয়েও বামুন ঘরের ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা করে।
প্রযুক্তির কল্যাণে সমাজের কিছু কিছু বিষয় পাল্টে গেলেও সমস্ত কিছু কি পাল্টেছে?
নদী থেকে চুঁয়া খুঁড়ে জলের সন্ধান করে পুরুলিয়ার কোনো কোনো গ্রামের মানুষ। সন্ধান করতে করতে জেনে গেছে, নদী কোথায় লুকিয়ে রেখেছে জল।
নিরণ দিনে জল যে একমাত্র সহায় সম্বল। সেই জলের অভাব ও হাহাকার বাংলা কবিতা থেকে ছড়িয়ে পড়বে না সারা বাংলায়?
বাঙালির ঘর থেকেই তো আলপনার শুরু। শুধু পূজা পার্বণে নয়, বিবাহ অনুষ্ঠানেও আলপনা।
ঘরের মেয়েদের সুচারু আঙুল তুলির চেয়েও বেশি নান্দনিক হয়ে ওঠে। আমার এ কথা সমর্থন না পেলেও আমি বলতে চাই, বাংলার ও বাঙালির আলপনা আজও নতুন।
সারা বাংলার শহর ও গ্রামে কত ধরনের যে আলপনা চেয়ে চেয়ে দেখতে হয় শুধু। আজও বৃহস্পতিবার এলে, অভাবী ঘরেও চৌকাঠে আলপনা।
ভাবে ও ভাষায় গরিব হলে তো দেখা যাবে না, শাড়ির পাড় থেকেও জল ঝরছে। স্নান করে ফিরছে ঘরের বউ।
ও বউ, তোমার দিকে চেয়ে বলছি----
যতীন্দ্রমোহন বাগচীর ভাষায়,
ভাষায় কবে ভাবের কুঁড়ি ফুটূবে ফুলের মতন----
আশায় তারি আছি
----১৮ কার্তিক ১৪২৯
----৫---১১---২০২২
----রাত্রি ৭--৫৯
----নির্মল হালদার
আরও পড়ুন

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন