আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ---১৮
---------------------------------------------------------
এক সময় অধিকাংশ বাঙালি ঘরেই পাঁজির একটা ভূমিকা ছিল। আজকের আধুনিক পরিবার গুলি পাঁজি--পুঁথি না--মানলেও পাঁজি রয়ে গেছে নিজের জায়গায়। পাঁজি দেখেইতো নির্দিষ্ট করা হবে বিবাহের দিন। শুধু বিবাহ নয়, গৃহপ্রবেশ থেকে শুরু করে অন্নপ্রাশন। সাধ ভক্ষণ ইত্যাদি ইত্যাদি।
আজও বেণীমাধব শীলের পঞ্জিকা, গুপ্ত প্রেসের পঞ্জিকা, বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা বাজারে দেখা যায়। এইসব পঞ্জিকা বছর শেষের চৈত্র মাসে চলে আসে।মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত বাঙালি, কোনো কোনো বাঙালি সংগ্রহ করে। মাথায় ঠেকিয়ে ঘরে রাখে।
মনে আছে, পরিবারের কোনো বয়স্ক মানুষ পাঁজিটা এগিয়ে দিয়ে বলতো----পাঁজি দেখতে জানিস? দেখ তো, পরের মাসে শুভ দিন আছে কিনা। "পারি" শ্বশুর বাড়ি যাবে।
সময়ে অসময়ে আমিও পাঁজির পাতা উল্টে উল্টে দেখেছি। আমাকে খুব টানতো পাঁজির বিজ্ঞাপন। লম্বা চওড়া রাঙা মুলো নধর বাঁধা কপির চেহারা। সেইসব সবজির বীজ কম দামে কোথায় পাওয়া যায় তার বিজ্ঞাপন পাঁজির পাতায়। বড় বড় করে।
পাঁজি ঝকঝকে রঙিন ছিল না।
আজকের চেহারা কেমন?
পাঁজি পাঁজি করতে করতে যে কথা বলতে চাই---- পাঁজি খুব রহস্যময়। গভীর। কোথায় কোন্ তিথি নক্ষত্র আছে দীক্ষিত না হলে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। একই কথা কবিতার ক্ষেত্রেও। দীক্ষিত পাঠক না হলে কবিতার রহস্য উন্মোচন করা যায় না।
পাঁজি সহজ নয়। জটিল নয়।
কবিতার ক্ষেত্রে দেখেছি, কোনো সমালোচক কিংবা কোনো কবি--পাঠক অথবা পাঠক কারোর কবিতা সম্পর্কে মন্তব্য করলেন---অমুকের কবিতা খুব সহজ। তার মানে জটিল কবিতা আছে। আমার প্রশ্ন, জটিলতা কাকে বলে? সহজতাই বা কী?
পাঁজিতে দেখা যায় সাংকেতিক ভাষা। সেই সংকেতকে ধরতে হবে,কী বলছে।
কবিতা আবার শুধু সংকেত নয় কবিতা একটি ইশারা। কবিতা নীরবতাও। ইশারার কাছে যেতে হলে, নীরবতার কাছে যেতে হলে, সারস্বত সাধনা চাই।
কবিতা যেমন হেলাফেলা নয় তেমনি পাঁজিও হেলাফেলা নয়। যারা পাঁজি রচয়িতা তারা নক্ষত্রের হিসেব অথবা অঙ্ক জানেন বলেই, মানুষের মঙ্গল কর্মে নিযুক্ত হয়ে থাকেন। তারা আড়ালেই থাকেন।
যে কোনো কল্যাণ কর্মী আড়ালেই থাকেন।
কবিও একজন কল্যাণ কর্মী।
-----১ অগ্রহায়ণ ১৪২৯
-----১৮---১১---২০২২
-----নির্মল হালদার
আরও পড়ুন

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন