বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৩

আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ--১৩



আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ--১৩
-------------------------------------------------------

সকালে উঠিয়া আমি
মনে মনে বলি
সারাদিন আমি যেন
ভালো হয়ে চলি।

মদনমোহন তর্কালঙ্কারকে ভুলে গেলেও বাঙালি জীবনের এই ছড়াটি নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি। আর ভুলে যাইনি বলেই, সময় থেকে সময় ছড়াটি আজও আছে।

আমার কাছে শিকড় হয়ে আছে।

এই শিকড় থেকেই বলছি, মদনমোহন তর্কালঙ্কারের আরেকটি ছড়া---

পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল
কাননে কুসুম কলি, সকলি ফুটিল।।
রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
শিশুগণ দেয় মন, নিজ নিজ পাঠে।।
ফুটিল মালতী ফুল, সৌরভ ছুটিল।
পরিমল লোভে অলি, আসিয়া জুটিল।।

এই ছড়া প্রবাদ হয়ে আছে বাঙালির ঘরে ঘরে। এবং এখনো এই সমস্ত ছড়া ভালবাসতে শেখায় জীবন ও জীবনের চারপাশ। আরেকটা কথা বলতেই হয়, এই ছড়াগুলিতে লুকিয়ে আছে নীতিকথা। যদিও তা উপদেশের মত মনে হয় না।  

ছোটবেলার সেই যে মজার ছড়া--

আয়রে আয় টিয়ে
নায়ে ভরা দিয়ে।
না' নিয়ে গেল বোয়াল মাছে,
তাই না দেখে ভোঁদড় নাচে।
ওরে ভোঁদড় ফিরে চা,
খোকার নাচন দেখে যা।।

শিশুদের কান্না থামাতে নিরক্ষর মায়েরাও এক সময় এই ছড়া আবৃত্তি করতো। প্রচলিত এই ছড়া প্রবাদ হয়ে আছে।

এখান থেকে পালাতে চাইলে, পালানো যায় না। এমনও হতে পারে এই ছড়ার কাছে কিংবা মূলের কাছে, মূল কবিতার কাছে এখনো অনেকে আসতেই পারেনি।

কি করে ভুলে যাই --------

আম পাতা জোড়া জোড়া
মারব চাবুক চড়ব ঘোড়া
ওরে বিবি সরে দাঁড়া
আসছে আমার পাগলা ঘোড়া।

এই ছড়ার শেষ দুটি পংক্তি আমাদের ছোটবেলায় ছিল সঙ্গীর মতো------

অল রাইট ভেরি গুড
মেম খায় চা বিস্কুট।।

খুব মজার ছলে বলতে বলতে আমরা অনেক খেলা খেলেছি। আজকের খেলা যখন মোবাইলের গেম, তখন এই প্রবাদ হয়ে যাওয়া ছড়া বন্ধুর মতো এসে দাঁড়ায়।

মন খারাপ করে।

মন খারাপ আনন্দের এক দিক। আমি বহন করছি আজও। বহন তো করতেই হয়, আমাদের বাংলা ছড়াতে আমাদের মেয়েও যে আছে, সেই যে সেই ছড়াটি---

আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, সূয্যি গেছে পাটে----
খুকু গেছে জল আনতে পদ্ম দীঘির ঘাটে।
পদ্ম দীঘির কালো জলে হরেক রকম ফুল,
হাঁটুর নিচে দুলছে খুকুর গোছা ভরা চুল।

এই বাংলার এই ছবিটি পুরনো হয়েও নতুন হয়ে আছে বাঙালির জীবন ধারায়। এইসব ছড়া থেকে আরেকটি বিষয় আমরা পাই তা হলো, প্রবাদ হয়ে যাওয়া ছড়াগুলিতে শুধু শিশু পুত্র নেই, আছে কন্যা সন্তানও।দুজনেই সমান আদরনীয় কবিদের কবিতায়। সেই কবিরা কোথায়? যাদের কবিতা থেকে ছড়া থেকে প্রাণ পাই। এখনও।

বাংলায় এত ঐশ্বর্য এত আলো হারিয়ে ফেললে আমাদেরই ক্ষতি। সমাজের ক্ষতি। গল্প কবিতা ছড়া 
সমাজেরই অংশ। খুঁটিও বলা যেতে পারে। খুঁটির উপরেই ঘরের চালা। আমাদের আশ্রয়।

আজ আমরা যদি আশ্রয়হীন হয়ে পড়ি, বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বো। এ কথা যেন না ভুলি ।

অনেক কিছুই ভুলে গেছি এবার যদি বট গাছ ভুলে যাই, আম জাম কাঁঠাল ভুলে যাই কী নিয়ে থাকবো আমরা?

আধুনিক দৈত্য এসে দাঁড়িয়ে আছে দুয়ারে। টাঙানো ছিল আম পল্লব ছিঁড়ে গেছে।

-----২৫ কার্তিক ১৪২৯
----১২---১১--২০২২
-----নির্মল হালদার





আরও পড়ুন



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ