আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ--১১
-------------------------------------------------------
তুলসী গাছের সঙ্গেই বড় হয়েছি।
ছোটবেলায় ঘুরতে ফিরতে একটা তুলসী গাছ। আমি না দেখলেও
আমাকে দেখেছে। আমাকে দেখতো।
সন্ধ্যে হলেই তুলসী খানে সন্ধ্যা প্রদীপ। আমাকে দেখেছে। আমাকে দেখতো।
তুলসী গাছও আমাকে বড় করেছে। আমি না বুঝলেও তুলসী গাছের ছোট ছোট হাওয়া
আমাকে মানুষ করেছে। মায়ের মতই।
ঘরের চালায় এসে কাক আমাকে দেখেছে। আমাকে দেখতো। সেই দেখাটাও লালন পালনের মত। পায়রা এসেও
আমাকে দেখেছে। আমাকে দেখতো। সেই দেখাটাও যে লালন পালন।
রাস্তা থেকে কুকুর এসে দাঁড়িয়ে আছে ঘরের দুয়ারে। আমার এঁটো খাবার আমি তাকে না দিলেও সে আমার দিকে চেয়ে আমার মঙ্গল কামনা করেছে।
এরাই তো পরিবারের সদস্য।
নীরব থেকে আমাদের কল্যাণে
সব সময়। আজও।
এরাও আমার কবিতা।
ভাঙ্গা পাঁচিল থেকে যে তক্ষকটি
আমাকে দেখে প্রতিদিন , তাকে
আত্মীয় বলবো না? ঘুরঘুর করতে থাকা টিকটিকির প্রতি বিরক্ত হয়েও তাকে তাড়িয়ে দিতে পারলাম কই?
যতই ঝাড়াঝাড়ি করি মাকড়সা থাকবেই ঘরের কোণে কোণে।
আসলে, কোনো না কোনোভাবে
ওদের নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমার নিঃশ্বাস মিলেমিশে আমাকে সাহায্য করে বাঁচার জন্য। এই বাঁচা কবিতা বৈকি।
কয়েকটা শব্দ অক্ষর ধ্বনি ও ছন্দ
কবিতা নয়। কবিতা যে পায়ে পায়ে ধুলো। পায়ে পায়ে এই রাস্তা থেকে ওই রাস্তা।
নিম গাছের তলে একটু ছায়া।
জিরিয়ে নিতে নিতে মাথায় পড়বে
নিম ফল।
নিম ফলের মধু পান করেছো?
ঘরে গরুটিও আছে। সুখে দুঃখে সারাদিন। তাকে পরিবারের প্রধান না বললেও সে প্রধান। তার করুণ চোখের দৃষ্টি থেকে যে আলো প্রকাশিত হয়ে থাকে, সেও তো আমাকে বড় করেছে। ছোট থেকে বড় করেছে।
গরুর দুধও সংসারের সামগ্রী।
বাইরের দিকে তাকিয়ে ঘরের দিকে না তাকালে, অন্ধকার জড়োসড়ো হয়ে ঘরে থেকে যায়।
নজর এড়িয়ে যাবে তিনটে শালিখ। তিনটে শালিখ এসেছিল একটু আগেই রান্না ঘরের চালে।
চড়ুই এসেছিল চালের দানার খোঁজে। পিঁপড়ে এসে খুঁজছিল চিনির দানা।
একটি মুড়ির দানাও নিয়ে গেছে। ধীরে ধীরে।
সম্পর্ক থেকেই নজরুল লিখে গেছেন---
কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি? পেয়ারা তুমি খাও? গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও?
----২০ কার্তিক ১৪২৯
----৭---১১---২০২২
-----নির্মল হালদার
আরও পড়ুন

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন