২৬ :
মাটিতে রামধনু ওঠে
পুরনো দিনের বাড়ি।পুরনো দিনের মানুষ নেই। ঝুলে আছে কালিঝুলি। অন্ধকার।চামচিকে।
কোনো কোনো পাখিও বাসা বেঁধেছে।ডিম পড়ে আছে মেঝেতে।
বাইরের দেয়ালে বট চারা।
জানলা দিয়ে কাক ঘরে ঢুকে সঙ্গে সঙ্গে বাইরে।কোনো খাদ্য নেই।
গা ছমছম একাকীত্ব।
অনেক পুরনো হয়ে গেছে।একাকীত্ব পুরনো হয়ে গেছে।
একাকীত্বের দিকে চেয়ে থাকে
মানুষ। একাকীত্বের দিকে চেয়ে একা হয়ে যায় আলো- বাতাস।
পুরনো দিনের বাড়িতে ঝড়- বৃষ্টি এসেও ভয় করে।যদি একাকীত্ব জাপটে ধরে।
বেদনা থেকে বেদনায় দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ে।
পুরনো বাড়ির বাইরের দেয়ালে সিনেমার পুরোনো পোষ্টার। এখনও একা একা হাসছে মলিন নায়ক -নায়িকা।
-----১৫বোশেখ ১৪৩০
----২৮--৪--২০২৩
-----নির্মল হালদার
২৭:
মাটিতে রামধনু ওঠে
মা আমাকে একটা কলম দিয়েছিল। সেই কলমই আমার কাছে ছিল আশীর্বাদী কলম। নিবের কলম। হালকা নীল রঙের।
আমার একটা টিনের বাক্স ছিল। স্কুল বয়সের। সেই স্কুল বয়সী বাক্সে রেখেছিলাম কলমটা।
সেই টিনের বাক্স ও আশীর্বাদী কলম কোথায় যে গেল, কোথায় যে একলা হয়ে গেল, আমি খুঁজে খুঁজে হয়রান।
কত কত চিঠিও ছিল আমার কাছে। ডানা মেলে কোথায় যে গেল কার মুঠোয়, কে জানে!
ওগো কলম ও বাক্স, ফিরে আসবে না? আমি যে স্বপ্নে স্বপ্নে ঘুরেফিরে দেখি, মায়ের নাক টিকালো নাক কলমের নিব। কেন না, নাকের মতো সোজা সবকিছুই দেখতে পাই। সোজাসুজিও কথা বলতে পারি।
শুধু সোজাসুজি নয়, সরলতার সঙ্গেই সব সময় ধারালো আমার কথা। যে যা মনে করে করুক, আমি সোজাসুজি বলবো।
আমার কলমের নিব সবকিছুই সোজাসুজি বলতে বলে। নাক বরাবর আমার রাস্তাও। ব্যাঁকা-ট্যারা হলে ঢুকতে হবে অলি গলিতে।
অলিগলি মানেই, অন্ধকার। হঠাৎ করে গায়ে পড়তে পারে জল। ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে আগাছা। অলিগলি মানেই, ছায়াশরীর।
আমার ভয় করে।
কিন্তু ভয় করবো কেন? আমার সঙ্গে আছে আমার কলম। তাকে খুঁজে না পেলেও সে যে আমার সঙ্গে আছে। সব সময়।
মায়ের সেই আশীর্বাদী কলম একা হয়ে যেতে পারে না। বরং সে আমার শিরদাঁড়াও।
শিরদাঁড়া কি একলা হতে পারে?
-----১৫ বোশেখ ১৪৩০
-----২৯--৪--২০২৩
----নির্মল হালদার
২৮:
মাটিতে রামধনু ওঠে
আমাদের এই বাংলাদেশের প্রায় সবার ঘরেই একটা বুড়ি দেখা যেত। এক সময়। সেই বুড়ি ছিল ফর্সা টুকটুকে। সে ছিল পুন্যি পুকুরের ব্রতে। লক্ষীর আলপনায়। কাজে অকাজে মায়ের পাশে পাশে।
সেই বুড়ি অধিকাংশ ঘরেই, ছোট মেয়ে। নম্র স্বভাব। রান্নাবান্নায় পটু নয়। বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ দিনে নুন লঙ্কা তেলে মাখা কুলের আচার খেতে আমাকে ডাকতো।
"বুড়ি" নামের কেউ আমাকে ডাকে না আর। "বুড়ি" নামটাই কি আছে এই বাংলায়?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নামও পাল্টে গেছে। পাল্টে যাচ্ছেও। "বুড়ি" নামটিও সেকেলে হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। যেমন আজকের কোনো শিশুর নাম ভোলানাথ রাখবে না কেউ। আরতি ভারতী পারুল প্রতিমাকে দেখা যাবে না।
খোকনকে দেখা যাবে?
ক্ষুদিবালা অনেক পুরনো।
পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে কেউ আগ্রহী তখনই হয়, যখন প্রয়োজন পড়ে।
প্রয়োজনও পড়ে না। বর্তমান যে স্বোতসিনী। কোজাগরী। রেশনা। তরঙ্গ। মনন। ইপিলদের সময়।
ঘটিও কি আছে আর? গামলাও কি আছে?
আমার সময় দীর্ঘশ্বাসে দীর্ঘশ্বাসে।
পুন্যি পুকুর বুজে গেছে। তার পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মুখটিও নেই। ম্লান হয়ে গেছে গুরুপদরা।
"নির্মল" নামটিও খুব একা।
জানলার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাকে যে খোঁজে কে জানে!
------১৭ বোশেখ ১৪৩০
-----১---৫---২০২৩
-----নির্মল হালদার
২৯:
মাটিতে রামধনু ওঠে
যে ভালবাসে তারও ভূমিকা থাকে। ভূমিকা অর্থে গুরুত্ব থাকে। যাকে ভালবাসছে সে যদি গুরুত্ব না দেয় তবুও গুরুত্ব থাকে মানে ভূমিকা থাকে এই সময়ের কাছে।
সময় তো দেখে। তার দৃষ্টিও প্রখর। কেমন করে দেখছে কোত্থেকে দেখছে, কেউই জানি না।
যে ভালবাসছে সে একটা গাছ হতে পারে, পাথর হতেও পারে, পিলসুজ হতে পারে। পিলসুজ প্রদীপকে ভালোবাসে। প্রদীপ জানে। কেননা, পিলসুজ ছাড়া প্রদীপের আলো উঁচু হয় না। আর উঁচু না হলে দেখা যায় না মুখ।
মুখ দেখার জন্য লন্ঠনকেও উঁচু করে তুলতে হয়।
কার মুখ?
যাকে ভালোবাসি যে আমার আত্মীয়। অনেক দূর থেকে আসছে আমার কাছে। অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে।
আলো তো লাগবেই।
লন্ঠন না থাকলে উঁচু করে ধরবো একটা প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলছিল পিলসুজের মাথায়। এবং কয়েক মুহূর্তের জন্য একা হয়ে গেল পিলসুজ।
অন্ধকার।
শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকে পিলসুজ। প্রদীপ মাথায় উঠলে তার শান্তি ও স্বস্তি। প্রদীপ যে তার একমাত্র সঙ্গী।
অনেক সময় পিলসুজ একা। প্রদীপ নেই। অনেক সময় পিলসুজ ছাড়াও প্রদীপ জ্বলছে।
প্রদীপের সেই আলো ম্লান লাগে না? মনে কি হয় না, পিলসুজের সঙ্গে প্রদীপের দূরত্ব হয়ে গেছে? এবং এই দূরত্ব থেকেই নিঃসঙ্গতার শুরু, মনে কি হয় না?
ভালোবাসাবাসি রহস্যময়। ঘন।
ভালোবাসাবাসি থেকেই নিঃসঙ্গতা। বিষাদ। অবসাদও থাকে। পিলসুজের গা বেয়ে পিঁপড়ে উঠলেও খুঁজে পায় না প্রদীপ। যে প্রদীপের রূপে একদিন পিঁপড়েও আচ্ছন্ন হয়েছিল।
আজ আর আচ্ছন্নতা নেই। পিলসুজ একা।
------২৩ বোশেখ ১৪৩০
-----৭---৫---২০২৩
----নির্মল হালদার
৩০:
মাটিতে রামধনু ওঠে
দু'পাশে গাছপালা। তার মাঝে চলে গেছে একটি রাস্তা। ধূলা উড়ানি। এই রাস্তাতে পাখি নামলেও ধূলা ওড়ে। এই রাস্তাতে এক যুবক হেঁটে চলেছে।
ধূলা উড়ছে। পাতা উড়ছে।
শুকনো পাতার ওড়াউড়ি যুবকের সঙ্গী হয়ে সঙ্গে সঙ্গে যায়।
নির্জন পথ। গভীর। একলা যুবক হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যাবে কার কাছে যাবে?
পাতা উড়ছে।ধূলা উড়ছে।
হেঁটে যাওয়ার শব্দে গাছপালা সজীব হয়ে ওঠে। সজীবতা ও সুন্দরতা থেকে একাকীত্ব সুন্দর হয়ে ওঠে।
একাকিত্বের মুখ থেকে আলোর ভরসা।
------২৪ বোশেখ ১৪৩০
-----৮--৫--২০২৩
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন