মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩

মুক্তগদ্য



আমি বলতে চাই

কোনো পন্ডিত কোনো তাত্ত্বিক কোনো ছান্দসিক নির্দেশ করতে পারে না---কবিতা এই। কবিতা ওই।

কাঠবিড়ালির লাফ কোনো নির্দেশ পালন করে না। পালন করতেও সে বাধ্য নয়। গাছের কোন্ ডালে সে উঠবে, কোন্ ডালে উঠবে না সে জানে। সে এও জানে, গাছের কোথায় কোথায় লুকিয়ে আছে কাঁচা ফল পাকা ফল। ডাঁসা ফল।

কাঠবিড়ালির এক একটি লাফ এক একটি কবিতা। সে জানে, তার কোনো সংবিধান নেই। সে তাই পায়রার সঙ্গেও মুড়ি খেয়ে যায়।

প্রকৃত অর্থে ভালোবাসা।

পায়রা ও কাঠবিড়ালি সকালবেলায় বিনিময় করে ভালোবাসা।

ভালোবাসাই তো কবিতা।

চরাচরের প্রতিটি বিষয় তো কবিতা।

আমি এই কবিতার কাছে ঋণী হয়ে আছি। এবং এই বইয়ের লেখার পিছনে সাহস জুগিয়েছে সে হলো রামানুজ মুখোপাধ্যায়। তার কাছেও আমার ঋণ জানিয়ে, পাঠক-বন্ধুকে জানাই আমার নমস্কার।

-----২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
-----৬---৬---২০২৩
------নির্মল হালদার



দু এক কথা

সংশোধন করা আমার ধাতে নেই। যেকোনো লেখা আমার ভেতরে ভেতরে গড়ে ওঠে। তারপর কাগজে-কলমে। কখনো কখনো দু একটি শব্দ এদিক ওদিক করি। বিন্যাস পাল্টাই। এটুকুই।

এখানে "শুকনো হল কাঁদর " কবিতার বইটি প্রায় সম্পূর্ণ সংশোধন করে পাঠক বন্ধুদের কাছে রাখছি। এখানে আরেকটি তথ্য জানিয়ে রাখছি, লেখাগুলো যখন লিখছি তখন ডাইরির পাতায় নামকরণ করেছিলাম,"গত জন্মের শান্তি নিকেতন "।

এই এখন নির্বাচিত কবিতা গ্রন্থে পুরোনো নামকরণটি রাখা হলো। এবং এ সমস্ত হলো রামানুজ মুখোপাধ্যায়ের সাহসে।

আমার তো কোনো সাহস নেই।

ভয়ে ভয়ে তাই বলে রাখছি, সংশোধিত কবিতা বইটির যাবতীয় ভালো মন্দের দায়ভার আমারই। দোষ ভুল থাকলে, হে আমার পাঠক-বন্ধু আমাকে মার্জনা করবেন।

ইতি---
২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
৬---৬---২০২৩
নির্মল হালদার



আমার বাবা আমার বন্ধু নয়

বাবার কাছে আব্দার করলাম---আমাকে নিয়ে চলো খালাই চণ্ডীর মেলা। নিয়ে গেল না। বললো, কাজ আছে। বাবার কাছে আব্দার করলাম--আমাকে নিয়ে চলো টুসু মেলা। নিয়ে গেল না। বললো, কাজ আছে।

এ সমস্ত আব্দার করার মত আমি সুযোগ পাইনি। মনে হয়েছে, আমার বাবা কি ছিল কোনোদিন?

মায়েরা শুধু থাকে। বাবারা থাকে না কোথাও। আমার ক্ষেত্রে তো ছিলই না। মাঝে মাঝে আরো মনে হয়, মা বাবা কেউ ছিল না আমার।

বাবারা বন্ধু হয়, শুনেছি। মা-ও বন্ধু হয়ে থাকে, শুনেছি। এই দুই বন্ধু থাকলে আর কোনো বন্ধুর প্রয়োজন পড়ে না। আমার তো একজনও নেই। যে কারণে, বন্ধু বন্ধু করে ছুটে বেড়াই এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।

ওই দুই বন্ধুর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে ভালবাসাও খুঁজে বেড়াই শহর থেকে গ্রাম। রাস্তা থেকে রাস্তা।

কেউ কোথাও নেই।

আজ তালগাছ ভালোবাসতে বাসতে সরে দাঁড়াই। ছায়া নেই। আজ শালগাছ ভালবাসতে বাসতে সরে দাঁড়াই। পাখিরা এসেছে। পাখিদের জায়গা নিতে নেই। পাখিরা কষ্ট পেলে আকাশের কষ্ট।

এসব তো আমার বাবা বুঝলো না।

আমার হাত একবারই ধরে ছিল। জোর করে ধরলে আমি বাবার হাতেই বাঁধা হয়ে থাকতাম। আমার রাগ হয়, বাবা আমার বন্ধু ছিল না।

আমার বাবা ছিল শনিবার।

শনিবারই তো বাবা পালিয়ে গেছে। কোথায় যে পালিয়ে গেল! কেন পালিয়ে গেল, আজও স্পষ্ট নয় আমার কাছে।

কার প্রতি অভিমান হয়েছিল?

একা একাই তো চলে গেছে। মাকেও বলে যায়নি কিছু। এখানে মা কেন এলো আবার? বাবারও তো বন্ধু ছিল না। আমার মনে হয়, মায়েরও বন্ধু ছিল না।

কেউ কারোর বন্ধু নয়। "বন্ধু " একটি শব্দ মাত্র। যার পিছনে মিছিমিছি ঘুরতে ঘুরতে বৃথা যায় সময়। সোনার মত সময় নষ্ট করার কোনো অর্থ নেই। জেনে নিতে হবে, বুঝে নিতে হবে, আমার কোনো বন্ধু ছিল না। আজও নেই।

নিজের কাছে নিজেকে বন্ধু করে নিতে পারলে, সারাদিন কথা বলা যায়। সারাদিন তৈরি করা যায় বাকপ্রতিমা।

আমি সাধারণ পরিবারের একজন। তার মানে, বাবাও ছিল সাধারণ পরিবারের একজন। যে পরিবারের প্রধান বিষয়------অভাব অনটন। সেই পরিবারে বন্ধুত্ব কীসের?

এই পরিবারে সন্তানও বন্ধু হয় কি?

অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে দিন মাস বছর চলে যায়। বন্ধুত্ব করার মতো পর্যাপ্ত সময় মনের স্বাচ্ছন্দ্য একেবারেই থাকে না। তাই, বাবা আমার হাতটা ধরেছিল, আলগা।

বাবাকে কেমন করে বলবো-----আমাকে কিনে দেবে না, এক পয়সার বোঁদে?

আমার বাবা আমার বন্ধু হলে, আমাকে নিশ্চয়ই কিনে দিতো কালো কালো জাম।

বাবারা বন্ধু হয় না। যদি বন্ধু হয়ে উঠতো, আমার পাশে দাঁড়াতো বৈকি। শিমুল গাছ না দাঁড়ালেও বাবা নিশ্চয়ই দাঁড়াতো।

আমার বাবা আমার বন্ধু ছিল না।

বাবার বন্ধু ঈশ্বর ছিল কিনা আমার জানা নেই। নাকি বাবাদেরও বন্ধু থাকতে নেই? মায়েদের বন্ধু থাকতে নেই?

" বাবা " শব্দটি অসহায়। একা। " মা "শব্দটির ওজন বেশি হলেও হাহাকারে ভরা।

আমি কার পাশে দাঁড়াবো?

আমি পিছনে দৌড়ে যাই। সামনে দৌড়ে যাই। হোঁচট খেতে খেতে উঠে পড়ি। হেঁটে যাই। আর নিজেকেই বলতে থাকি--------আমার বাবা আমার বন্ধু ছিল না। আমার অভিভাবক ছিল না। তবে বাবা একটা ছিল। আমি তাই, শব্দটি পেয়েছি। মুঠো বেঁধে রেখেওছি। যদি কোনোদিন বন্ধু হয়,যদি বন্ধু হয়ে ওঠে।

-------২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
------৯--৬---২০২৩
------নির্মল হালদার





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ