৩৬:
মাটিতে রামধনু ওঠে
বাটা মসলা ছাড়া মাংস জমেনা। এ কথা শোনা যায় অনেক বাঙালি ঘরে। তার কারণ হলো, আজকাল আর শিল -নোড়ার চল নেই। একরকম উচ্ছেদ হয়ে গেছে। কোনো কোনো পরিবারে থাকলেও একধারে এক কোণে পড়ে থাকে। একা।
আমার মনে পড়ে, আমার ছোটবেলায় দেখা আমাদের ঘরের শিল-নোড়া। মসলা বাটতে বাটতে শিলের একটা দিক খাল হয়ে গেছলো। পোস্ত বাটার জল জমে উঠলে, বিশেষ করে আমি মাকে বলেছি, ওই জলটা আমাকে দাও। খাবো।
এখন তো পোস্তর উঁচু দাম। ছুঁতেই পারবে না সাধারণ মানুষ। আমাদের মত নিম্নবিত্ত পরিবারে এক সময় ডাল ভাত পোস্ত ছিল রোজ দিনের খাবার। এখন সবই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। নিত্যদিনের থালা বাটি বাসনের চেহারাও পাল্টে যাচ্ছে। প্রতিদিন।
প্রতিদিন নিত্য নতুন যন্ত্রপাতি। এবং তার শাসন। রান্নাঘরে। রান্নাঘরে। মসলা পেশাইয়ের মিক্সি শব্দ তুলতে তুলতে জানান দিয়ে যায়, তার অস্তিত্ব। এই অস্তিত্ব রান্নাঘরের মেয়েদের সহযোগিতা করলেও মেয়েদের হাতে চুড়ি আর বাজে না। মসলা বাটতে বাটতে বেজে উঠতো চুড়ির রিনিঝিনি। এক সময়। সেই সময়, যখন আমি ছোট ছিলাম।
আমি বড় হতে হতে যান্ত্রিক সভ্যতাও বড় হয়েছে। বিস্তার করেছে তার শোষণ শাসন। সঙ্গে কেড়ে নিয়েছে, অনেক খুশি। শিল কাজ করছে না পাশের বাড়িতে গিয়ে মসলা বাটাও ছিল আরেক পরিবারের সঙ্গে যুক্ত থাকা। পরিবারের সঙ্গে পরিবারের জুড়ে থাকার ছবিটা ভাঙতে ভাঙতে ধুলো হয়ে গেছে।
শিল-নোড়া পড়ে আছে একা। শিল খোদাই করার লোকও একা হয়ে গেছে। শিল-নোড়ার বিক্রি নেই আর।
হ্যারিকেনও নিভে গেছে।
----৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
----১৮--৫--২০২৩
-----নির্মল হালদার
মাটিতে রামধনু ওঠে
কাজললতাকে মনে আছে?
মাছের মত রূপ। রূপের ঝলক।
লোহা বা অন্য কোনো ধাতুতে তৈরি কাজললতাকে দেখেছি, দরজার আংটায় ঝুলে থাকতে। ঝুলে থাকতে দেখেছি শিশুদের শোবার খাটে। দড়ির খাটে।
মনে পড়ে?
হিন্দু বাঙালি মেয়ে বিয়ের সময় লোকাচার মেনে হাতে রাখে কাজললতা। এ বাদে আর কোথাও কাজললতার ব্যবহার দেখি না।
আমার মনে পড়ে, প্রাইমারি বয়সেও আমাকে কাজল পরিয়ে আমাকে স্কুল পাঠাতো আমার দিদিরা। সহপাঠীরা হাসাহাসিও করেছে।
কৃষ্ণ যাত্রায় কৃষ্ণের কাজল পরা নিয়ে রাধার সন্দেহ। বৃন্দা দূতির গান। এ সমস্ত মনে পড়লে, আমার ছোটবেলা। আমার মন খারাপ হয়ে ওঠে কাজললতার মতোই কালো।
বর্তমান চিকিৎসা বিদ্যায় শিশুদের কাজল পরানো নিষেধ হয়েছে। যদিও রূপপ্রসাধনে মেয়েরা কাজল পরে আজও। নানা কোম্পানির নানারকম পেন্সিল বাজারে পাওয়া যায়।
সেই আমলে কাজল তৈরি করাও ছিল মায়েদের একটি কাজ। গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে ভুষো কালি মিশিয়ে তৈরি করা হতো কাজল। সেও ছিল ক্ষুদ্র কুটির শিল্প।
ঘরের কাজল হারিয়ে বাইরের কাজল। কোম্পানির ঘরে টাকা যায়। একা হয়ে যায়, একা হয়ে গেছেও কাজললতার মতো আদুরে একটি নামও।
প্রাইমারিতে আমার সঙ্গে পড়তো কাজল নামে একটি মেয়ে। আমার এক আত্মীয়ার নামও কাজল।
মায়াময় ।
কাজল পরা চোখের চাহনি নির্জন ও গভীর বনের ডাক।
-----৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
-----১৯---৫---২০২৩
----নির্মল হালদার
৩৭:
মাটিতে রামধনু ওঠে
উৎসর্গ : দীপাংশু মাহাত
একজন যুবক এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতে একটা ফাঁকা মাঠে। দগদগে রোদ্দুর। পুড়ে যাচ্ছে চরাচর। শুধুমাত্র গাছের দিকে চাইলে, উপশম হয়ে ওঠে শরীর ও মন।
গাছেরা নবীন। গাছেরা সবুজ।
যুবকটি হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকের রাস্তায়। রাস্তা যেখানে ঢালু হয়ে আবার উপর দিকে উঠছে, সেদিকেই একটা জোড়। এই জৈষ্ঠের দাবদাহে এখনো অল্প জল আছে।
যুবকটি নেমে গেল। চোখে মুখে জল নিয়ে পকেট হাৎড়ে খুঁজে পায় না রুমাল। সে পাঞ্জাবির হাতায় মুছে নেয় চোখ মুখ। তারপরেই দেখতে পায়, দূরের পলাশ জঙ্গলে একটি লাল রেখা।
শাড়ির আঁচল কি?
এই যুবক কবি। যদিও সে নিজেকে কবি বলতে নারাজ। সে বরং মোষের পিঠে কাক হয়ে অনেক দূর চলে যেতে চায়।
ভালোবাসতে চায় তোকেই।
তুই যে পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আছিস, তোর নিঃশ্বাস পাহাড় থেকে ঝর্ণা হয়ে নামছে।
ছুঁতে পারবে না এই কবি।
দৃশ্য --২
যুবকের গলায় একটি গামছা। সে বারবার মুখ মুছতে মুছতে হেঁটে যাচ্ছে।
নির্জন রাস্তা। আলোছায়া। কোথাও কোথাও অন্ধকার।
যুবক উপর দিকে মুখ করে কি যেন খোঁজে।
এই যুবককে কেউ যদি প্রশ্ন করে তুমি কবিতা লেখো? সে হাসে। কোথাও কোথাও সে বলেওছে ----সে কবিতা লেখে না। অনুভূতি লেখে।
আজ সে একটা রাস্তার ধারের এক পাথরে বসে ঝোলা থেকে বের করে একটি কবিতার বই। সে নিঃশব্দে পড়ে। এবং পড়তে পড়তে সে বইটি উপর দিকে ছুঁড়ে হাঁটতে থাকে।
দৃশ্য--৩
দরজা-জানলা বন্ধ।
মেঝেতে পাতা বিছানায় শুয়ে আছে যুবক। আরেক যুবক দরজাতে শব্দ করতেই, দরজা খুলে যায়।
যুবক প্রশ্ন করে যুবককে---- এত দেরি করলি? উত্তর নেই। যুবক ভিতরে এসে বোতল তুলে গলায় ঢালে।
যুবক চিৎকার করে বলে------পিপাসা হায় নাহি মিটিল।
দৃশ্য----৪
যুবক কবির সঙ্গে, না না ভুল হচ্ছে আমাদের। কবি যুবক হয় না। বৃদ্ধ হয় না। বালক হয় না। কবি শুধু কবি। তার কোনো বয়স নেই। তার কোনো সময় নেই। এবং সে যেকোনো সময় যেকোনো কাউকে প্রশ্ন করতে পারে-----তুমি কি মানুষ? সে রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছেও কবি। প্রশ্ন করতেই পারে-----দিন দিন মানুষ কেন ছোট হয়ে যাচ্ছে?
সে হঠাৎ করে কোনো যুবককে প্রশ্ন করতেই পারে----তুমি কি মৃগাঙ্ক আমলকি?
দৃশ্য---৫
একটা চায়ের দোকান।
রাস্তায় জনস্রোত। সন্ধ্যেবেলা। স্রোতের সঙ্গে চলেছে কোলাহল। গাড়ি ঘোড়া ছুটছে। নানান শব্দ।
চায়ের দোকানে কবি। একা।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে চেয়ে দেখছে চারদিক। কবির পায়ে কীসের যেন ছোঁয়া লাগলো। কবি নিচু হয়ে দেখে নেয় একটি কুকুর এসে বসে পড়েছে বেঞ্চের তলায়। সে চা দোকান থেকে বিস্কুট কিনে কুকুরটিকে দেয়। উঠেও পড়ে। হাঁটতে থাকে।
দৃশ্য---৬
দু' একটা পাখি ডাকছে। পরিষ্কার হয়ে উঠছে আকাশ। ভোরের হাওয়া।
কাক ডাকছে কোথাও।
কবিও তো ডাকছে---পালক পালক---আ-এ আমটি খাব পেড়ে।
দৃশ্য----৭
একটা পুরনো ডাইরি। পুরনো ঘর। কবি কিন্তু পুরনো নয়। সে প্রতিদিন নতুন। কেন না, কবির জন্ম প্রতিদিন।
কবির বন্ধুরা নতুন। চারপাশ নতুন। তবু সে একলা হয়ে ঘুরে বেড়ায়। এই এখন সে ছাদে উঠলো। নেমেও গেল সঙ্গে সঙ্গে। ঘরে ঢুকলো। ঘরের চারদিক চেয়ে থাকতে থাকতে সে একটা কলম নিয়ে ডাইরি নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করে।
আমি উঁকি দিয়ে দেখি সে লিখেছে------নির্জন নিঃসঙ্গতা তুমি আমার কে?
-----৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
-----২১---৫---২০২৩
------নির্মল হালদার
৩৮:
মাটিতে রামধনু ওঠে
উৎসর্গ : রামানুজ মুখোপাধ্যায়
কুচকুচে কালো। আমাদের কাক। কৃষ্ণকলি নামে আমরা তাকে আদর করি না। বরং দূর দূর করি। ঘেন্না করি।
পায়রাকে ডেকে ডেকে চাল-গম খাইয়ে থাকি। আর কাকের জন্য এঁঠো কাঁটা। সেও তাদের উদ্দেশ্যে নয়, যদি খেয়ে যায় তো যাবে। এইতো উঠোনে ফেলে দিয়েছি।
যদিও কেউ কেউ কাককে বলে, ঝাড়ুদার পাখি। যা বইয়ের মধ্যেই থাকে। লোকসমাজে প্রচলিত নয়।
একটা গাছের ডালে এক পাখির পাশে কাক এসে বসলে, পাখি উড়ে যায়। অথচ, কাক একটি পাখি।
আমাদের জীবনে প্রতিদিনের পাখি। আমরা তো ভোর বেলায় প্রথম শুনি কাকের ডাক।
কাকের ডাক শুনতে শুনতে জেগে ওঠে গাছপালা। তারপর মানুষ। এই মানুষের বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতা বোধ নেই কাকের প্রতি।
কোকিলেরও নেই। কোকিল তো কাকের বাসায় ডিম পেড়ে যায়। কাক কোকিলের ছানাকে খাইয়ে-দাইয়ে বড় করে ছেড়ে দেয়। তারপরও কাকের কোনো বন্ধু নেই।
আকাশ আছে তো?
--------৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
-------২২---৫---২০২৩
------নির্মল হালদার
৩৯:
মাটিতে রামধনু ওঠে
কতগুলো সংখ্যা আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। খুঁজেই চলি প্রতিদিন। অবিরাম।
অনেক কিছু হারিয়ে যায়, জানি। সংখ্যাও হারিয়ে যাবে? কলম তো হরদম হারায়। আকাশ হারিয়ে যায় কখনো কখনো। দিনের পর দিন মন খারাপ হারিয়ে যায়। তখন অস্থির লাগে।
দু'চোখ ভ'রে জল না এলে অন্তরে কি আনন্দ থাকে? উৎসর্গ করার মত চোখের জল আমার সম্বল।
উৎসর্গ করব কাকে?
এই আপোড়া পৃথিবীতে আমার কেউ আছে? যাবতীয় সজীবতা ওইদিকে। আমার দিকে বেড়ে ওঠা আগাছা।
আগাছার নিকটেও ফড়িং আসে। প্রজাপতি ওড়ে। আগাছা নিংড়েও রঙ-রসের উল্লাস।
কখনো কখনো ঘরের রাস্তা হারিয়ে যায়। আমি অন্য ঘরে ঢুকেও খুঁজে পাই না আমার ঘরের ঠিকানা।
এক জোড়া জুতোর এক পাটি হারিয়ে গেলে আরেক পাটি ফেলে দিতে হয়। খালি পায়েও খুঁজে পাইনা আমার রাস্তা।
কোন্ রাস্তায় দেখা হবে তোর সঙ্গে? কোন্ রাস্তায় ফলের মত ঝুলে আছে আমার সংখ্যাগুলি?
নখের রক্তাভা যখন গোধূলি হয়ে ওঠে তখন সংখ্যাগুলি পাবো? আমাকেই তো দিয়ে গেছে সে। আমি কি যত্ন করতে পারিনি? সংখ্যাগুলি মুখস্ত থাকলেও সামনে দেখতে পাইনা।
আমি যে নিরাকারের কাছে খুঁজে পাই না আমাকে। আমি যে রূপ চাই। এই যে আরেকটি রূপ, সংখ্যার রূপ-----৮০০১৭৫১৭৬৫ আমাকে ধ্যানের কাছে নিয়ে যায়। আমার ধ্যান আমার ছটফটানি। আমি কাব্যের কাছে দাঁড়াই। সাহস পাই।
এখন কি তবে সাহসে ভর করে দাঁড়াতে পাচ্ছিনা? আমার নিজের কাছে কোনো উত্তর নেই।
আমার ঘুম আসে।
ঘুমও তো হারিয়ে যায়। না দিনে না রাত্রে খুঁজে পাই না ঘুম। যেদিন পাই হারিয়ে যায় আমার কথা।
একটা নিটোল ঘুমের প্রয়োজনে তোকে চাই পাশে। সেদিন হয়তো খুঁজে পাবো-------আমার হীরক-দ্যুতি---৯৪৩৪২৪৬৬৭৭---------
-----৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
-----২৩---৫---২০২৩
-----নির্মল হালদার
৪০:
মাটিতে রামধনু ওঠে
উৎসর্গ : দূর্বা মুখোপাধ্যায়
রাস্তায় - ১
হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার রোদ্দুরে। ঘেমে উঠতে উঠতেও দেখতে পেলাম, একটি মেয়ের রাঙা ঠোঁট। ইচ্ছে করছিল ছুঁতে।
এই জ্যৈষ্ঠেও তো পাকা আম।
রাস্তা জুড়ে টোটোর আনাগোনা। জ্যাম- জট। বিরক্ত হয়েও মনে হলো, একটা টোটো কিনলে হয়। রোজগার হবে। ওই তো পান দোকান, বিড়ি কিনবো নাকি? ঘরে বিড়ি আছে তো? অনেক সময় বিড়িতে টান দিলে উদ্বেগ কেটে যায়। এখন তো, বিল্টু, বিল্টুর দিকে যাচ্ছি। ওকে পাবো তো?
সে আমাকে কতদিন ছেড়ে গেছে? কেনই বা ছেড়ে গেল? আমি তো তার কোনো ক্ষতি করিনি। নাকি করেছিলাম আমার অজান্তে? তার সঙ্গে দেখা হলে জেনে নিতেই হবে। আমার সঙ্গে দেখা করবে বিল্টু? যদি চিনতে না পারে?
মধ্যবাজারের দুর্গা মন্দির কি পার হয়ে এলাম? আর কত দূরে বিল্টু? তার চেহারা কি পাল্টে গেছে?
পিছন থেকে একটা বাইকের চাকা। আমার পা ছুঁয়ে বললো---রাস্তায় চলতে জানেন না?
রাস্তায়---২
প্রতিদিন ফোনে কথা বলেছি। বিল্টু তখন কলকাতায়। চাকরির পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। ছুটি ছাটায় তার গ্রামের বাড়িতে এলে, মাঝপথে আমার সঙ্গে একটা দিন কাটিয়ে যাওয়া। সেই আবেগ উত্তেজনা তার ভেতরে আছে তো? যদিও এখন রাস্তায় উত্তেজনা। প্রখর রোদে চিড়বিড় করছে সবাই। ও এইতো এইতো ঠেলাগাড়িতে লিচু বিক্রি করছে। পালকের জন্য নিতে হবে। কিন্তু টাকা তো নেই।
বিল্টু আছে।
এই মুহূর্তে শুধু বিল্টু।
আর কত দেরি?
বিল্টু যদি বলে---আপনাকে চিনি না। তখন কোন্ পাতালে প্রবেশ করবো আমি?
রাস্তায়---৩
কলকাতা থেকে এলেই, বিল্টু আমার জন্য গান নিয়ে আসতো। কুটুম যেমন মিষ্টি নিয়ে আসে। পুজোর সময় উপহার। একবার নীল ও সবুজে মাখামাখি একটা শার্ট আমাকে দিয়েছিল।
সেই শার্ট কোথায় উড়ছে?
রাস্তায়--৪
সবই গতানুগতিক। মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে হয়। ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে হয়। রাত্রে ঘুমোতে হয়। সকালে উঠতে হয়। রোজগার করতে হয়। সন্তান উৎপাদন করতে হয়।তার সঙ্গে পঠন পাঠন। সামাজিক শিক্ষা ও নিয়ম-কানুন।
কাঠামো ভাঙ্গে না।
কোনো আমন বাবন কোনো ইমলি তিতলি সদর দুয়ারে কামান দাগে না।
আশা করেছিলাম কি অভির কাছে? আজও কি আশা করছি আমলকির কাছে? অবিনের কাছে?
সবাই দেখে নদীতে সমুদ্রে নৌকা চলে। ধুলোবালির রাস্তায় চলতে পারে না?
ধুর্ ধুর্----মাথাটা বোধহয় গরম হয়ে গেছে। বিল্টুর সঙ্গে আমার সংলাপ অসংলগ্ন হয়ে গেলে?
সে তো তার অফিসে। ঝামেলা হয়ে যাবে খুব।
আচ্ছা, তার সঙ্গে প্রথম কথা কি বলবো? ঝুপ্পির কাছে জেনে নিলে হয়। সে কি ফোন ধরবে? ফোন ধরার মতো মুড আছে কি? এখন তো আবার রান্নার সময়।
শুনেছি বিল্টুর বিয়ে হয়ে গেছে। যেমন সবার হয়। বিল্টু তো তার বাইরে নয়। বাইরে গেলেই তো, নির্মলদার মত কেউ ছেঁকে ধরবে।
ছেঁকে ধরবে না জোঁকে ধরবে?
আজও কি আমি জোঁক? পুরনো ভালোবাসার খোঁজে রাস্তায় রাস্তায়। রোদে রোদে ঘামছি?
আমি নিজেকেই কি চিনতে পারছি? হ্যাঁ পাচ্ছি। আমি তো শুধু আজও ভালোবাসার লোভে। না না, লোভ বলবো কেন? আকাঙ্ক্ষা বলতে পারি। আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে কি? বিল্টু যদি বলে--আপনি আমার অফিস আসবেন না আর! তখন কোথায় লুকাবো আমার মুখ?
অফিস--১
এই প্রথম এই অফিসে। প্রথমই তো হবে, অফিসে অফিসে ঘোরা আমার কাজ তো নয়। ঢুকতে ঢুকতেই সেই মুখ। বিল্টুর মুখ। টেবিলের সামনে। আমার কাছে এগিয়ে এলো।
কে এগিয়ে এলো? কে? বিল্টু না বিলটু সোনা? আমি কাকে হারিয়েছি? কী হারিয়েছি?
অফিস---২
প্রশ্নটা অবান্তর। অভদ্রতাও। তবুও প্রশ্ন করে বসলাম--তুই তো এখানে অফিসার?
আসলে, কথা বাড়িয়ে না গেলে কিংবা প্রশ্ন না করলে বিল্টুর তরফ থেকে কথা আসবে না। এজন্যেই, প্রশ্ন। সে উত্তর দিলেই, আরো কথা। আমি তাকে আমার বাড়িতে আসতে বললাম। সেই বাড়ি যদিও আমার নেই। অন্য এক বাড়ি। যেখানে বিল্টু এলে আমার কাছে আর থাকবে না।
যদি বলি ভালোবাসা যদি বলি আচ্ছন্নতা, আজও তো আছে। আমার গভীরে। বিল্টুর অন্তরে কী আছে? আমার ধারনা নেই। হঠাৎ বলে ফেললাম, তোর বয়স তো ছাব্বিশ। সে খাতায় কলম ঠেলতে ঠেলতে হাসলো। মৃদু। তারপর আমাকে জানালো, তার বয়স পঁয়ত্রিশ।
এতগুলো বছর কিভাবে কোথায় গেল? কত বছর পর আমার সঙ্গে দেখা হলো তার?
ইচ্ছে করছিল, বিল্টুর সঙ্গে একটা নিজস্বী। পর মুহূর্তেই মনে পড়লো, এইটে অফিস।
আচ্ছা, অফিসটাকে দুমড়ে মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলা যায় না? এখুনি কি নামানো যায়না রাত্রি? নামানো গেলেও আমি বোধহয় খুঁজে পাবো না, দুটো সমান সমান গেলাস।
রাত্রির গেলাসেইতো চাঁদ তারা নামে।
-------৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
------২৪---৫---২০২৩
------নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন