আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া
----------------------------------
ভাত
-------
উনুনে আবার পা লাগবে কী?
উনুন এক খিদে,
সারাদিন।
খিদের গায়ে পা লাগলে,
খিদের অপমান।
ভাতের গায়ে পা লাগলে,
অন্নের অপমান।
রুটি
--------
রাত তো এই,
আগুনে ফুলে যাওয়া রুটি
একটার পর একটা রুটি
মায়ের স্নেহের মত উষ্ণতা।
চাঁদ এসে খোঁজে, একা একা।
আদুরে ছেলের মতো।
-----২৩ মাঘ১৪২৮
-----৬----২-----২০২২
আহার
-------------
দুপুর বেলার সূর্যের আলো
হাঁড়ি থেকে ফ্যান গড়ানো আলো।
যে যে টুকু পারে ধরে রাখে।
যে যেটুকু পারে আহার করে।
দিন কাটে।
নুনের মতো গলতে গলতে।
ঘাম
--------
যেটুকু মাটি আছে বিলাতি বেগুনের চাষ।
ঘরে রান্না হয়, বাজারেও বিক্রি হয়।
গতরের ঘাম ছেটাতে পারলেই,
ভালোবাসবে ভুঁই।
------২৪ মাঘ ১৪২৮
------৭-----২-----২০২২
ঝাঁটা
---------
ঝাঁটার কাঠি ক্ষয়ে গেলেও
ঝাঁটা পড়ে আছে আকাশের এককোণে
ধুলো জমে ছিল তারায় তারায়।
ঘটি
--------
একবার যখন এসেছে, আপন করতে হবে।
একটা ঘটি হলেও ঘরে থাকবে।
এক ঘটি জলেইতো সন্তুষ্ট একটা তুলসি গাছ।
কুটুমকেও দেখাতে হয় এক ঘটি জল।
মাঝলা বউ শুনে যা, ঘটিটাকেও মাজতে হবে,
মাটির আদর মাখাতে হবে।
লঙ্কা ফুল
----------------
লঙ্কা ঝাল হোক আর লাল হোক
লঙ্কা ফুলেও মধু আছে।
লঙ্কা ফুল এসেও পড়েছে, আইবুড়ো মেয়ের
নাকের ছেঁদায়।
-----২৫ মাঘ ১৪২৮
-----৮----২----২০২২
নাকছাবি
----------------
মুসুরির ডালের মতো নাকছাবি
সাধের ননদ লোভ করে, হাত বাড়ায়
হলুদ দিতে হবে না।
ঘাস
---------
কোন্ চাষী লাগিয়েছে ঘাস?
মাঠে মাঠে ঘাস
ফাগুনে --শ্রাবণে ঘাস
ঘাসে ঘাসে পা ফেলতেই, বেজে উঠছে
নূপুর।
খুঁটি
---------
ঘরের চালা ধরে রাখা নিম গাছের খুঁটি
বিক্রি করবে না, বাঁধাও দিবেনা
খুঁটিটাইতো বংশের শিরদাঁড়া
আকাশকেও ধরে রেখেছে।
-----২৬ মাঘ১৪২৮
-----৯----২-----২০২২
জাঁতি
------------
একটা জাঁতি এসে কাকে যে কাটে!
সুপারিতো নেই।
পান দোক্তাও নেই।
শুধু পান পাতার মতো মুখ চেয়ে থাকে
অন্ধকার থেকে।
কাজললতা
------------------
কাজললতা নেই
ঘরে এসেছে কাজললতা পাখি
শিশুকে পরাবে কাজল।
বাজার
-------------
কে জানে কে চেয়ে আছে
কপালের ঘামের দিকে।
কেঁপে কেঁপে ওঠে পায়ের তলা।
বিক্রি হয়ে যাবে,
গরুর শিঙে লেগে থাকা মাটিও।
-------২৭ মাঘ ১৪২৮
------১০----২----২০২২
ভার
--------
ঘরের চারটে খুঁটি চার ভাই
চারজনের কাঁধেই, ঝড় জল রোদের ভার।
থালা
-------
বাঁধের জলে পড়ে আছে থালা
কার ঘরের থালারে ভাই
কে মাজতে এসে ফেলে গেল?
থালা থেকে
আশীর্বাদ ও স্নেহের গন্ধ আসছে
যেনবা অন্নপ্রাশনের থালা।
সোনার দুল
-----------------
বালতিতে উঠে আসছে বালি কাদা
বালতিতে উঠে আসছে জল
বালতিতে উঠে এলো কানের দুল
কার কানের দুল কবে পড়ে গেছলো?
ও ছোট বউ শুনলো,তোর কানটা আছে ফাঁকা।
------২৮ মাঘ ১৪২৮
------১১----২----২০২২
জিইয়ে থাকা
-----------------
আর কতদিন?
আর কতদিন
আধপেটা হয়ে থাকবে নুনা নুনিরা?
এ যে এক হাঁড়ি জলে
মাগুর মাছকে জিইয়ে রাখার মত
জলে হাত নেড়ে নেড়ে দেখতে হয়
মাছটা খেলছে তো?
বিছে
-----------
যে যার আব্রু নিয়ে থাকে।
যেমন রূপার বিছা
কোমরেই থাকে
কেউ দেখতে পায়না।
-------২৯ মাঘ১৪২৮
-------১২-----২----২০২২
যে জীবন জটিলতার দিকে
-----------------------------------
১:
হাঁড়ি থাপড়ালে ফাঁকা আওয়াজ ওঠে
মাটি থাপড়ালে ধুলো ওড়ে
কপাল থাপড়ালে ঠক্ ঠক্
আকাশ থাপড়াবে কী, নাগাল পায় না।
২:
জল হাৎড়ালে শুধু জল
তৃষ্ণা মিটে যায়।
মাটি হাৎড়ালে শুধু মাটি
পেট ভরে না।
দিনশেষে
মাঠে মাঠে ইঁদুরের গর্ত হাৎড়ানো
যদি ধান-চাল মেলে।
-----৩০ মাঘ১৪২৮
-----১৩----২----২০২২
-----নির্মল হালদার
শিখা
--------
সারাদিনের কাজ শেষে
হ্যারিকেনের কাঁচ মুছতে হবে।
হ্যারিকেনের শিখাইতো সংসারের আয়ু।
২:
হ্যারিকেনের কাঁচ মুছলেও
আকাশকে মুছতে হবে না, শুধু
হ্যারিকেনের শিখা উসকে দিলেই
চাঁদ--তারা জ্বলবে।
চোরকাঁটা
----------------
ব্লাউজটা ছিঁড়ে গেছে
আঁচলে ঢেকেছে গা।
কাঁখের ঝুড়িতে তুলছে গোবর।
শাড়িতে লাগছে চোরকাঁটা
শাশুড়ির গঞ্জনার মত।
-----১ ফাগুন ১৪২৮
-----১৪ ----২---২০২২
সম্পর্ক
---------
একটাই শাড়ি শুকাতে হয় পরতে হয়
যেমন
একটাই মরদ
শুকাতে হয় পরতে হয়
নইলে
সম্পর্ক যে থাকে না মান থাকেনা
যেমন
পান থেকে চুন খসলে সম্পর্ক কি থাকে?
বাঁশি
----------
বাঁশি আর কী শুনবে !
কাঠের চুলহা নিভে গেলে
বাঁশিতে ফুঁ দিয়েই আগুন জ্বালানো
বাঁশিটাই যে ফুকলন।
------২ ফাগুন ১৪২৮
-----১৫----২----২০২২
উকুন
----------
মাথায় মাথায় তারা ওঠে তারা কামড়ায়
উকুনও কামড়ায়
তারা থেকে উকুন বেছে
দু আঙুলের নখে টিপে মারে
আদ্যিকালের বুড়ি।
জল
--------
একলা রাস্তায় হেঁটে যায় যুবতী
ভেজা শাড়ি
পিঠে ছড়ানো চুল থেকে জল ঝরে
দু এক বিন্দু জল রোদে শুকায়
কুঁদরি লতে শিশির শুকায়।
------৩ রা ফাগুন ১৪২৮
-----১৬----২----২০২২
মাড়
--------
বাসি মাড়ে কি আর সুয়াদ আছে!
মাড়ের মতই শাদা শাদা মেঘ
সব সময় টাটকা,
চুমুক দিতেই পারো।
মশলা
----------
ভুঁইয়ে কী আর মশলা বাটাবাটি?
শিল--নোড়াতে পস্তু বাটলে
শাঁখা--চুড়ি ধোওয়া জল
জননী ও জায়ার শাঁখা-- চুড়ি ধোওয়া জল।
-----৪ ফাগুন ১৪২৮
----১৭---২---২০২২
চিকন
----------
বাঁধের ঘাটে
গায়ে সাবান ঘষে মেয়েরা
চেকনাই হবে গা।
মাথায় মাটি মাখছে মাহাত বুড়ি
চেকনাই করবে মন।
স্বাদ--আস্বাদ
---------------------
চাল--গম এক হয়ে গেলে
চন্দ্র-সূর্য এক হয়ে যাবে।
দাদারে, চাল থেকে গম
আলাদা করতেই হবে।
চাল আমাদের মা হলে
গম যে আমাদের মাসি।
বসন্ত
-----------
টেঁস ফুল ফুটে নাই।
আজও
গা ঘেঁষে দাঁড়ালেই ঘামের গন্ধ
চিরকালের মধুর গন্ধ
প্রতিদিনের বসন্ত।
------৫ ফাগুন ১৪২৮
----১৮-----২----২০২২
বড়ি
--------
জ্যোৎস্নার আলোয় বড়ি শুকায়
এতো এতো বড়ি
বিউলি ডালের বড়ি
কে দিয়েছে?
একা একা হেঁটে যায়
শাদা থান পরা বটুর মা।
নিসর্গ
-----------
কোথায় যাওয়া?
কদ্দুর যাওয়া?
আকাশের এক কোণে পস্তু বাটার মত
ঝকঝক করছে চাঁদ
শুধু চেয়ে চেয়ে থাকা
রাঁধুনির নাকফুলও জ্বলে জ্বলে উঠছে।
------৬ ফাগুন ১৪২৮
-----১৯----২----২০২২
-----নির্মল হালদার
সুন্দর বনের ছবি : সৌজন্যে-দীপংকর রায়

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন