শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২

।। পূর্ব জন্মের স্মৃতি ।।

উপাসনা গৃহ//

আকাশ জুড়ে শুনিনু ওই বাজে
তোমারি নাম সকল তারার মাঝে।।

লতিকার ঝাড়ু থেমে যায়।
সে এই ধরনের গান আগে শোনেনি। তাদের গ্রামে নাম সংকীর্তন হয়। কীর্তন হয়।
তার সুর তার কথা এই গানের চেয়ে একদম আলাদা।

এইদিকে প্রতিদিন ঝাড়ু দেওয়ার কাজে লতিকা নিযুক্ত হয়েছে। কয়েকদিন হলো।
এইদিকেই এই কাঁচ ঘরটা। তার ভেতরে কয়েকজন নারী পুরুষ
সমবেত গান করে।

কোনো দেবদেবীর মূর্তি নেই। শুধুমাত্র নারী-পুরুষের সমবেত গান।

কিছুই বুঝছেনা লতিকা। সে
এখানে কাজে ঢোকার পর চারদিক থেকে শুনতে পায়, গান আর গান। সে শুনেওছে, এইসব গান ঠাকুরের গান।

কে ঠাকুর?

ওনার চেহারা কেমন? কোথায় থাকেন? গানের কথাগুলো এত
কড়া কড়া কেন?
কি যে কড়া কড়া করে বলেন,
লতিকা বুঝতে না--পারলেও
ঝাড়ু দিতে এসে তাকে থমকে দাঁড়াতে হয়।

এই কাঁচ ঘরে রোজ রোজ গান হয় না। বন্ধ থাকে ঘর। হপ্তায়
একটা দিন খোলা থাকে। গান হয়ে থাকে।
গানের সময় স্তব্ধ হয়ে থাকে চারদিক।
লতিকাকেও ঝাড়ু থামাতে হয়।
সে শুকনো পাতার উপরে বসে পড়ে। নানা রকম গাছ থেকে
কখনো কখনো বিচিত্র সব গন্ধ আসে। পাখির ডাক আসে।

পাতা ঝরে।

একদিন গান শেষের পর
এক মহিলা উপাসনা গৃহ থেকে
বাইরে এসে দেখেন, লতিকা
বসে আছে। মহিলার মনে হয়,
মেয়েটি বোধ হয়, গান শুনতে ভালোবাসে। তিনি লতিকাকে
জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি গান
শুনতে ভালোবাসো?

লতিকা সোজাসুজি বলে------
কীর্তন গান শুনি। তোমাদের গান শুনি নাই কখনো। বুঝতেও পারছিনা। তবে সুরের টানে টানে
বসে পড়ি।

মহিলা হাসেন। নিঃশব্দ।

লতিকা আবার ঝাড়ু দিতে শুরু করে। এবং ঝাড়ু দিতে দিতে শুকনো পাতার শব্দ ওঠে। এও যেন এক সুর।

সে আমলকি গাছের দিকে তাকিয়ে দেখে দুটো কাক
চুপচাপ বসে আছে।

গান শুনতে এসেছিল?

লতিকা শাল বীথিতে ঝাড়ু দিতে
দিতে শোনে-------
ভুবন জোড়া আসনখানি
আমার হৃদয় মাঝে বিছাও আনি।

সে ভাবে এখানে এইদিকে গান ছাড়া কি কিছুই নেই?
কারা করে এইসব গান? সেও
গুন গুন করে ওঠে-------
নিত্য তোমার ------
তারপর তারপর কি?
মনে পড়ছে না।

সে তো ছোট থেকেই তাদের গাঁয়ে
তাদের ঘরেও শুনে আসছে, শ্রী কৃষ্ণের অষ্টতর শতনাম।
সেই যে সেই যে,
যশোদা রাখিল নাম যাদু বাছাধন----। অথবা
তুলসী পাতার লিখি নাম
সখা হে, তোমারি নাম।

তোমারি নাম।।


-----বিকেল----৫/৫১
-----৬ চৈত্র ১৪২৮
-----২১---৩----২০২২
-----নির্মল হালদার






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ