মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১

সম্পর্ক / নির্মল হালদার

সম্পর্ক / নির্মল হালদার




কাঠবিড়ালিটা এসেই চলে গেল।

কাছাকাছি কোনো গাছ নেই যে গাছে উঠবে। কেবল ছাদের এই দেয়াল থেকে ওই দেয়াল অথবা ছাদের মেঝেতে খুঁজে বেড়াচ্ছে কোনো খাদ্য। আমার মনে হলো, মুড়ি দিলে এখুনি খাবে। আমি সাত-তাড়াতাড়ি দু'চার মুঠো মুড়ি ছড়িয়ে দিলাম ছাদে। সে দেখেই চলে গেল অন্যদিকে। পড়ে রইলো মুড়ি।

আমার ঘরে একটিও ফল নেই। কোনো ফলের সঙ্গে আমার ভাব ভালোবাসা নেই। তবে আম জাম কে আমি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। পছন্দ করে পেয়ারা। কিন্তু
কোনো ফল আমি খাই না।

আমার মনে হলো, কাঠবিড়ালিকে ভাতের নিমন্ত্রণ করলে ভালো লাগতো আমার। একসঙ্গে খেতে বসে গল্প করা যেতো। কাঠবিড়ালি ভাত না খেলে, তাকে
দুধ --মুড়ি দিতাম।

এখন মনে হচ্ছে, কাঠবিড়ালির ঘর আমার চেনা উচিত ছিল। তাহলে যে কোনোদিন গিয়ে তাকে নিমন্ত্রণ করা যায়। ঘরটা কোথায়? কত দূরে?

আজ বৃষ্টির পরে রোদ উঠেছে। মেঘমুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ায় পাখিরা। হাঁস কি আছে ওদের সঙ্গে? বক?

একদিন এক বকের কাছে মাছের গল্প শুনছিলাম। সে বলছিল------পুঁটি মাছ পেয়েছিল একদিন। নদী থেকে। ঠোঁট থেকে ফেলে দিতে হয়েছিল। কেননা, পুঁটি খুব ছোট। এইতো সবে সে জন্মেছে। আরো কিছুদিন সাঁতার কাটুক, তারপর না হয় বকের খাদ্য হবে।

বক ছেড়ে দিয়েছিল। পুঁটিও মনের আনন্দে অন্যান্য মাছের সঙ্গে খেলে বেড়াচ্ছে। হাঁসের কাছেও গল্প শুনেছি। সে বলেছিল------জলের পোকারা খুব চালাক হয়ে থাকে। সহজে ধরা দিতে চায় না। রোজ রোজ পাওয়া যায় না গেঁড়ি--গুগলি। অনেকদিন তাই হাঁসেদের পেট ভরে না।

কে আর হাঁসকে দুধ দিচ্ছে। জল মেশানো দুধও দিচ্ছে না।

আমাকেই বা কে দিচ্ছে চিঁড়ে ভাজা? 

কাঠবিড়ালিটা এসেছে আবার। একবার আমার দিকে চেয়ে চলে গেল। হয়তো আমার উপস্থিতির জন্য মুড়ি খেতে সাহস করছে না।

আমি নিচে নেমে এলাম। একটু পরে গিয়ে দেখি, মুড়ি নেই।

এবার থেকে সকালে ও দুপুরে কাঠবিড়ালির জন্য ছাদে মুড়ি রেখে আসবো। সবাইকে বাঁচতে হবে। ভালো থাকতে হবে।

এই পৃথিবী একা কারোর জন্য নয়। এই পৃথিবী সকলের। সকলেই নিজের মত করে বাঁচবে। কারো সঙ্গে কারোর কোনো বিবাদ নেই। বিবাদ থাকবে না। 

একটি তারা  আকাশ থেকে নেমে পাখির কপালে টিপ হতে পারে। একটি তারা আকাশ থেকে নেমে কারোর বুকে আলো হতে পারে। অথবা গলার হারে লকেট।


ভুল করে নয় যেকোনো দিন একটি হরিণ আমার ঘরে এসে জানতে চাইবে, আমি কেমন আছি। ভুল করে নয় যেকোনো দিন একটি পেঁচা দিনের বেলাতেই
আমার কাছে এসে জানতে চাইবে, আমি কেমন আছি।

কুশল জানার জন্য দিনরাত্রি বলে কিছু নেই। কুকুরের দল আমার বন্ধু দল। কি দিন কি রাত আমার দুয়ারে থাকে।

সকাল আর দুপুরে মুড়ি দিতে দিতে কাঠবিড়ালির সঙ্গে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। সে নিয়মিত আসে। আমার সঙ্গে বেশিরভাগ দিন দেখা হয় না। তবে দেখেছি তার জন্য রেখে দেওয়া মুড়ি খেয়ে গেছে সে।

একদিন মুড়ির সঙ্গে বিস্কুট ভেঙ্গে দিয়েছিলাম। স্বাদ পাল্টাবে।

দু'দিন ধরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ছাদে জমে যাচ্ছে জল। এই জল ফেলা যাবে না। কোনো পাত্রে তুলে রাখতে হবে। তাই, ইঁট-পাথর মাটি দিয়ে জলকে আটকাবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ দেখি, কাঠবিড়ালি নিয়ে আসছে ছোট ছোট পাথর। আমাকে সহযোগিতা করার জন্য।

আর কোনো জড়তা নেই তার। সে দিব্যি আমার হাতে তুলে দিচ্ছে ইঁটের টুকরো। মাটি। বাঁধতে পারবো জল। কাজে লাগাতে পারবো জল।

বাঁধতে পেরেছি কাঠবিড়ালির সঙ্গে আমার সম্পর্ক।

-----২৮আষাঢ়১৪২৮
-----১৩----৭---২০২১
-----নির্মল হালদার






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ