সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১

হাতের লেখা / নির্মল হালদার

হাতের লেখা / নির্মল হালদার






বৃষ্টির সুবাস আসছে। সঙ্গে আছে কারোর গায়ের গন্ধ।গন্ধটা চেনা চেনা লাগছে। কার গায়ের গন্ধ? ইরার কি?

ইরা ছিল পাড়ার মেয়ে। কেবল বলতো-------আমাকে বৃষ্টি এনে দে------আমাকে বৃষ্টি এনে দে। আমার খুব গরম করছে। অনিকেত তাকে বলতো ,আমি তো এসে গেছি আর বৃষ্টির কি দরকার! তুই মনে কর তুই ভিজে
উঠছিস। মনে আছে অনিকেতের, সেদিন ছাদে উঠেছিল। শ্রাবনের দিন। রোদ্দুর ছিল খুব। সঙ্গে গরমের তীব্রতা। ইরা অনিকেতকে কাছে পেয়ে মুখে মুখ ঘষতে ঘষতে বললো------আমাকে বৃষ্টি এনে দে ----আমাকে বৃষ্টি এনে দে-----তারপর শুরু করলো কাঁদতে। এত কান্না এত চোখের জল বৃষ্টি এসে মিলে মিশে গেল। দুজনেই ভিজতে ভিজতে শুরু করলো গান -------- শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে --------

সেই গান শুনতে পেয়ে বৃষ্টি আর ধরে না। ইরার মাও চলে এসেছিলেন ছাদে। বলেছিলেন----- সম্পর্কটা তোরা কোথায় নিয়ে যাবি? দুজন দুজনকে বিশ্বাস করিস তো? একটা কথা শুনে রাখ----সম্পর্ক শক্ত হয়  বিশ্বাসের উপরে।

ইরা ও অনিকেত  মুখ নিচু করে ছিল। কিছুই বলতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর তারা নেমে গেছলো নিচে।

দুজন একই পাড়ায় থাকে বলে, ঘন ঘন দেখা হয়। কেউ কাউকে একদিন না দেখে থাকতে পারে না।
অনিকেত কাছে এলেই, ইরা হাত বাড়িয়ে দেয়। বলে -----আমার হাতে কিছু একটা লেখ। একেক দিন অনিকেত কি লিখবে কিছুই খুঁজে পায় না। রোজ রোজ তো লেখা যায় না-----ভালোবাসি ভালোবাসি।

একদিন লিখেছিল------- ভালোবাসি ভালোবাসি---- ও আমার সর্বনাশী। ইরা ছদ্ম রাগ দেখিয়ে বলেছিলো ---কিরে আমি সর্বনাশী? তুই তাহলে আমার সর্বনাশা। 

তারপরেই দুজনের হাসি। যে হাসি থেকেও একটা গন্ধ আসে। মন কেমন করা গন্ধ। বিষণ্ণতা।


ইরা একদিন অনিকেতের হাতে লিখেছিল------ তুই বড় রঙিণ আমার। তুই বড় নবীন আমার। সেই নবীনতা খুব তাড়াতাড়ি  বিচ্ছেদে পরিণত হলো।বিয়ে হয়ে গেল ইরার। যেহেতু বেকার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবে না মেয়ের বাবা। অনিকেত তাই বলেছিল ------ হাতের লেখা সব মুছে গেছে। আমি বুঝতে পারছি, তোর বুকে কিছুই লিখে উঠতে পারিনি। আমার দুর্ভাগ্য।

অনিকেত নিজেই নিজের হাতে প্রতিদিন লেখে ----- দূরত্বই প্রেম। নৈকট্য নিরাশার। কিংবা,হে বিরহী ধুলাতে গড়াতে গড়াতে ধূলি হও। পথ খুঁজে পাবে। প্রেম খুঁজে পাবে।

নিজেই তারপর মুছে দেয়। কেউ কেউ হঠাৎ দেখতে পেলে বলে-----কিরে  হাতে উল্কি নাকি? কেউ কেউ তার হাত টেনে দেখতে চায়,কি লেখা আছে।

একবার লিখল সে------সুন্দরের সঙ্গে দেখা করতে নেই। সুন্দর বড় স্বার্থপর। ইদানিং সে গাছের কাছে দাঁড়িয়ে পাতায় পাতায় লেখে মনের কথা মনের রঙে। একটুও দাগ পড়ে না।

বিয়ের পর ইরার সঙ্গে একবার দেখা হয়েছিল। দুজন দুজনের সঙ্গে কথা বলেনি। অনিকেত ভেবেছিলো, ইরার হাত টেনে বলবে-----চল  এবার বৃষ্টি আনতে যাই। আমার খুব গরম করছে। কিন্তু বলেনি। একবার যে পর হয়ে যায় সে কি আর নতুন করে নতুন হয়ে আপন হতে পারে?

অনিকেত এই কাল রাতে হাতের শিরা কেটে রক্তে রক্তে দেওয়ালে লিখেছে------জীবন ও মরণের সীমানা ছাড়ায়ে/বন্ধু হে আমার/রয়েছো দাঁড়ায়ে------

আমার মনে হলো, আকাশের শিরা-উপশিরা থেকে টপ টপ করে রক্ত ঝরছে।

-----২৭ আষাঢ় ১৪২৮
-----রথযাত্রা
-----১২----৭----২০২১
-----নির্মল হালদার











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ