জাল / নির্মল হালদার
পাহাড়টা উড়ছিল। হাত পেতেছি যেই, আমার হাতে
দাঁড়িয়ে পড়লো। আমাকে প্রশ্ন করে, কী চাই?
কী চাই? নিজেকে প্রশ্ন করি এবার। কিছুই তো চাই না। পাহাড় আমাকে চুপচাপ দেখে, উড়তে শুরু করে।
এই অবধি লিখে ডাইরিটা বন্ধ করে কবীর।সে ঘরের সিলিংয়ে চোখ রাখে। দেখতে পায়, একটা মাকড়সা। জাল বুনছে। এবং সে উপর দিকে উড়তে থাকে। আস্তে আস্তে জালে আটকে যায়। ছটফট করে। চিৎকার করার চেষ্টা করে, স্বর বেরোয় না। তার জল তেষ্টা পায়।
কোথায় জল পাবে? কে দেবে জল? তার কণ্ঠস্বর কোথাও পৌঁছয় না। সে মাকড়সার জালে জড়িয়ে জড়িয়ে শেষে কাঁদতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হয়,
চোখের জল তাকে মানায় না। সে দাঁত দিয়ে ছিঁড়তে থাকে সমস্ত জাল। জালের জটিলতা।
এত কঠিন জাল সহজে ছেঁড়া যায় না। সে প্রাণপণ চেষ্টা করে। দাঁতে দাঁত ঘষে। কিন্তু জাল ছেঁড়েনা। যদিবা জাল থেকে বেরিয়ে আসে শরীর, মাথা আটকে যায়। দম বন্ধ হয়ে যায় কবীরের। সে বুক ফাটিয়ে ডাকতে থাকে। মৃত্যু চিৎকার করতে থাকে ------ রুমেলা ------ রুমেলা ------। রুমেলা ----- ।
অনেক ডাকাডাকির পর রুমেলা এসে দাঁড়ায়। সে কবীরের অবস্থা দেখে মাথায় হাত রাখে। সে বলে,
মাকড়সার জাল থেকে কিভাবে তোমাকে মুক্ত করবো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিনা। কবীর বলে,আগে এক গ্লাস জল দাও------তারপর দেখছি, কিভাবে কি করা যায়।
বেশি দেরি করা যাবে না আর। আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। আমার মুখের থুতুও শুকিয়ে গেছে।
কবীর হাত--পা ছুঁড়তে থাকে। সে ঘরের সিলিং এ নোখ আঁচড়ায়। সিলিং এর রঙ ঝরতে থাকে। কিছুতেই কিছু হয়না। রুমেলা বলে, তুমি উপর দিকে উঠলে কেমন করে? তুমি উড়ছিলে নিশ্চয়ই। কবীর বলে, এখন প্রশ্ন করার সময় নয়। তুমি চিন্তা করো আমাকে কিভাবে বাঁচাবে। রুমেলা উত্তর দেয় ------ বাঁচাবো বাঁচাবো। দাঁড়াও আমি যাচ্ছি তোমার কাছে।
রুমেলাও উড়তে উড়তে সিলিং এর কাছে। সে হাঁ করে মাকড়সার মাথা মুখের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলে। আর চিবোতে থাকে। ক্রমশ জাল ছিঁড়তে ছিঁড়তে কবীরকে মুক্ত করে।
দু'জনে নেমে আসে নিচে। যেন বা এই প্রথম প্রাণ পেলো কবীর।
-----৯ শ্রাবণ ১৪২৮
----২৬---৭---২০২১
----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন