কবিতা /নির্মল হালদার
১৫৩.
শাক তুলতে গিয়ে মনে হলো আমার
এও আমার দেশ। শাকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে
আমার ঘাম আমার আকাঙ্খা।
শাক তুলতে গিয়ে মনে হলো আমার
শাকের সঙ্গে কান্নাও আছে, আমি দু হাতে
নিয়ে যাচ্ছি।
১৫৪.
একটি নক্ষত্রের জন্ম হলে
আমি জন্মের কাছে যাই।
আমারই জন্মের কাছে যাই।
আকাশেও জন্ম আমার, মাটিতেও।
গাছেও জন্ম আমার, জলেও।
বাতাসেও আমার বীজ।
তুমি ধারণ করো।
একটি নক্ষত্রের জন্ম হলে
শাঁখ বাজে ঘরে ঘরে। শাঁখের ফুঁ হয়েও
আমার প্রকাশ।
আমি শব্দ আমি ধ্বনি।
-----৩০ আষাঢ়১৪২৮
----১৫----৭----২০২১
১৫৫.
সূর্য তারা এসেছে আমাদের করবে লালন
সূর্য তারার সঙ্গে জোনাকিও আছে
আমাদের করবে আলো। ডুবতে ডুবতে
পানকৌড়ি আমাকে দেখছে, আমি কেমন আছি
আমি যাই
আমার ছেঁড়া ছেঁড়া দুঃখকে ঢেকে রাখবো
শাল--শিমুলের ছায়ায়।
১৫৬.
বিরহ যদি খুদকুড়ো হয়, অভিমান তবে
ভাঙ্গা থালা। প্রেম তবে এক রাস্তা
হেঁটে যেতে হয়।
অনেক দূরের যাওয়া, যেখানে ভিখারির পাতে
রাজার আহার।
----৩১আষাঢ়১৪২৮
-----১৬----৭----২০২১
১৫৭.
বট গাছের নিকটে গিয়ে মনে পড়লো,
অশথ গাছও আছে। তার এক কোটরে
বাসা বেঁধেছে সাপ আর সাপিনী।
ওদের সংসারেও ছানাপোনা আছে, যদি
খোঁজ করো। খোঁজ করেই তো জেনেছো,
আমরা আট ভাই বোন, হরির লুটের বাতাসা কুড়াতে
রাস্তায় এসেছি।
সম্পর্কের রাস্তায়।
রাস্তাও রক্তের সম্পর্কে আমার আত্মীয়।
৩২ আষাঢ়১৪২৮
১৭----৭----২০২১
১৫৮.
বটফল যেই মাটিতে পড়লো
আমি কুড়িয়ে নিয়েছি। আমার জন্য সে
টুকটুকে, রাঙা। অনেকদিন গাছে ছিল
এবার আমার কাছে সে, আমারই মুখে
মুখ দেখবে
ভালোবাসার অনেক মুখ
আমি বাক্স-প্যাটরা গোছালেও আমার সঙ্গে থাকবে না।
১৫৯.
যে হাত রুইছে ধান
সেই হাতের কাছে দাঁড়াবো
যদি আমাকে রোপন করে
আমিও ধান।
ধানের গৌরব।
ধানতো মান নিয়ে আসে
আর আমার জীবনে যে শুধুই অপমান।
----১ শ্রাবণ ১৪২৮
----১৮---৭----২০২১
১৬০.
আমি অর্ধেক মানুষ
একটি ফল পেয়েছি, যে ফলের ভিতরে
বীজ আছে। যে ফল সম্পূর্ণ
যে ফল স্বাধীন।
আমি তো স্বাধীনতাহীনতায় নুব্জ
হয়ে গেছি।
আমি কথাবার্তাতেও পরাধীন।
১৬১.
যে স্বরেই কথা বলো
তুমি একজন মানুষ।
বাতাসে সাঁতার কাটতেই পারো
জলে আঁক কষতেই পারো
এক পায়ে দাঁড়ালেও তুমি একজন মানুষ
তুমি তাল গাছে উঠতেই পারো অথবা
চাঁদ পাড়তে পারো
তুমি যে তোমারই ভাষায় স্বপ্ন দেখো।
স্বপ্ন দেখার অধিকারে তুমি স্বাধীন
তুমি সুন্দরও।
তোমাকে বাদ দিয়ে ফুটবে না একটি চালের দানা।
----২ শ্রাবণ ১৪২৮
----১৯----৭----২০২১
১৬২.
চলো এক গ্রামের দিকে
ধানের চারা কি বলছে শুনবো।
এতদিন তো আমরাই কথা বলে এসেছি,
দুয়ারে দুয়ারে টাঙিয়েছি,
আমাদের গৌরব গাথা। এবার না হয়
জল কাদা মাখামাখি
ধানের চারার কথা শুনবো।
গল্পে গল্পে উঠে আসবে আমার প্রাচীনা ঠাকুমা।
জ্যোৎস্না রাতে শুকাতে দিয়েছিল সেদ্ধ করা ধান।
-----৩ শ্রাবণ ১৪২৮
----২০----৭----২০২১
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন