এই তো গল্পের শুরু / নির্মল হালদার
প্রাঙ্গণ রাস্তায় যেতে যেতে দেখতে পেলো,২১ শে জুলাই ময়দান চলো------ চলো বললেই কি যাওয়া যায়?
অন্য কেউ বলতে পারে, ২২শে অগাস্ট চলো গান্ধী মূর্তির পাদদেশে।
যে যখন বলবে, যেতে হবে নাকি?
আজ যেমন প্রাঙ্গণ চাচার দোকান যাবে না। কালকেও যায়নি সে। সে বলতে চায়, আমার যখন ইচ্ছে হবে, আমি যাবো।
রাজনৈতিক দলগুলি জনগণকে কি পেয়েছে কে জানে। হঠাৎ হঠাৎ গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়।মিটিং মিছিল করে। সভা-সমিতি করে।
জনগণের কিছু লাভ হয় না।
প্রাঙ্গণ বলে-----কাল যদি আমি বলি, চলো পুকুর খনন করতে। সবাই যাবে কি? যদিও সে জানে, তার কোনো দল নেই। ক্ষমতা নেই। তবুও তার ইচ্ছে হয়, চারপাশের মানুষজনকে বলবে, চলো যাই-----জঙ্গল পরিষ্কার করতে।
২১শে জুলাই বা ২৩শে জুলাই যেতে হবে বললেই যাবো কেন? আমি বরং ২২শে শ্রাবণ যাবো, কাছে পাবো আরেক জনকে।
প্রাঙ্গন এসমস্ত কথা বললে, বন্ধুরা বিগড়ে যায়। তারা প্রাঙ্গণের মতো সপ্রতিভ নয়। প্রাঙ্গণ যেমন বলে, মানুষকে ঠকানো হচ্ছে। সব সময় ঠকানো হচ্ছে। মানুষ সহ্য করছে মুখ বুজে। এ জন্যেই, এই দেশটা
পিছিয়ে পড়ছে।
নীলাম্বরী প্রাঙ্গণকে অনেকবার বলেছে, তোর মুখে কাঁটাখোঁচা নেই, যখন যা পারিস বলে দিস। তোকে এজন্যেই লোকজন ভুল বোঝে।
ভুল বুঝলে কি আর হবে! আমার সঙ্গে কথা বলবে না এই তো। না বলুক, আমি সত্যিটা বলতে ছাড়বোনা।
জনগণকে ভেড়া করে ছেড়েছে, রাষ্ট্র শক্তি। তাই, যে কোনো বিষয়ে আমাদের সরকার ক্ষমতা প্রদর্শন করে জনগণের উপরে।
নীলাম্বরী বলে-----তুই নতুন একটা দল কর। তুই নেতা হয়ে জনগণকে বোঝাবি, ক্ষমতা কি? দেখা যাবে, তুই নেতা হয়ে ক্ষমতার অধিকারী হয়ে, জনগণের মাথার উপরে ছড়ি ঘোরাচ্ছিস। ক্ষমতা খুব খারাপ, এটা তুই ভালই বুঝিস। নীলাম্বরীর মুখের দিকে চেয়ে কোনো উত্তর করে না প্রাঙ্গণ। হাত পাতে। বলে------দশটা টাকা দে। সিগারেট খাবো। নীলাম্বরী বলে, চাচার দোকান চল্, চা সিগারেট বাদেও সিঙ্গাড়া খাওয়াবো।
প্রাঙ্গণ এই মুহূর্তে চাচার দোকান যাবে না। যাবে না মানে যাবেই না। সে চেয়ে আছে ২১ শে জুলাই
লেখাটার দিকে। লেখা না বিজ্ঞাপন? সে রেগেমেগে নীলাম্বরীকে বলে, চল্ বিজ্ঞাপনটা মুছে দিয়ে আসি।
নীলাম্বরী "না" করে। সে আরো রেগে যায়------বলতে থাকে আরো কথা----এই দেশটার কিছু হবে না। তখন নীলাম্বরী বলে, চারদিকে আরও কুৎসিত বিজ্ঞাপন। তুই মুছতে পারবি? সমস্ত বিজ্ঞাপনেই একটি মেয়ে আছে। একটা ব্লেডের বিজ্ঞাপনেও নারীর শরীর। আমাদের সভ্যতা মেয়েদের অধিকারের কথা বলেও শেষ অব্দি মেয়েদের করেছে পণ্য সামগ্রী।
তুই চিৎকার করেও মুছে দিতে পারবি ঐ সব বিজ্ঞাপন? এবারে প্রাঙ্গণ রাস্তায় বসে পড়ে। সে জানে বিজ্ঞাপনের গিমিক। বিজ্ঞাপনের নোংরামো। আসলে
সে এও জানে, সবই পুঁজির খেলা। পুঁজি যা বলবে তাই হবে। এই পুঁজির কাছে প্রাঙ্গণ নিজেও পুতুল। সে মাথার চুলে আঙ্গুল চালাতে চালাতে মনে হচ্ছে, এবার ছিঁড়ে ফেলবে। রেগে গেছে খুব।
নীলাম্বরী সামনের দোকান থেকে এক বোতল ঠান্ডা জল এনে তাকে দেয়। সে প্রথমে ছুঁড়ে ফেলে। তারপর নিজে গিয়ে বোতলটা নিয়ে এসে গলায় ঢালতে থাকে।
বোতলের জল চোখেমুখেও নেয়।
প্রাঙ্গণ উঠে দাঁড়িয়ে নীলাম্বরীকে বলে, আজ যে ১লা শ্রাবণ সবাইকে বলে আসি। চল্। অন্তত একটা দেওয়ালে যদি লিখতে পারতাম,আজ১ লা শ্রাবণ
সকলের জন্মদিন। সকলের শুভ হোক। কিন্তু লিখে উঠতে পারলাম না। এ আমাদের ব্যর্থতা নীলা। সমস্ত ব্যর্থতার মাঝেও তোর হাতে তুলে দিচ্ছি,আজকের এই ১লা শ্রাবণ। তুই বিলি করে দে।
না না তুই একা বিলি করবি কেন? আমরা দুজনেই বিলি করবো ১লা শ্রাবণের শুভেচ্ছা।
আজ যে সবার জন্মদিন। আজকের এই জন্মদিন যাবতীয় কুৎসিত বিজ্ঞাপনকে ঢেকে ফেলবে নিশ্চয়। আজকের এই জন্মদিনে মানুষ মানুষকে ভালবাসবে।
চল্-------।
নীলাম্বরী ও প্রাঙ্গন হাত ধরাধরি করে হাঁটতে থাকে।
-----১লা শ্রাবণ ১৪২৮
-----১৮---৭---২০২১
-----নির্মল হালদার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন