বুধবার, ২১ জুলাই, ২০২১

ডাক / নির্মল হালদার

ডাক / নির্মল হালদার




ঠিক বাগান নয়, বাড়ির পিছন দিকে এক ফালি জমিতে লাউ--কুমড়া হয়ে থাকে। ঢেঁড়স হয়ে থাকে।  কিছু ফুলও ফোটে।

পিদিম পরিচর্যা করে। এই বাড়ির। প্রতিদিন সকাল সন্ধে সে আসবেই। যে গাছে জল দেওয়ার প্রয়োজন, জল দেয়। শুকনো জীর্ণ পাতা, ছেঁটে দেয়।  পরিষ্কার করে।

জবা গাছটার নিচেই ব্যাঙের সঙ্গে দেখা হয়। আজ দেখা পায়নি এখনও। কোথায় গেল?

পিদিমের মনে হয়, ব্যাঙটাই এই বাড়ির রাজা।সেইতো ফুল ফল গাছের দেখভাল করে। সারাদিন থাকে। রাত হলেই, ডাকাডাকি। মিলনের ডাক।

ডাকেরও রকমফের আছে। কোনো কোনো ডাক কর্কশ লাগলেও, আসলে সেও যে মিলনের ডাক, বুঝতে হবে।

এখন তো সকালবেলা। ব্যাঙটা চুপচাপ থাকে। একা থাকে। রাত হলেই ডাক। পিদিম অনেকবার ভেবেছে, ডাক শুনে সে যদি সাড়া দেয়? সে তো কোনো ঋতুতে কাউকেই ডাকতে পারে না। 

কাল রাতে সে মনে মনে ডাকছিল, শিমুল---- শিমুল ------ । কোনো সাড়াশব্দ আসেনি। কোকিলের ডাক কি মধুর। বসন্ত এলেই, ডাকাডাকি। এবার তো আষাঢ়েও কোকিলের ডাক শোনা গেল। আজ ব্যাঙটা গেল কোথায়? কার কাছে গেল? আজ রাতে কি আর ব্যাঙের ডাক শোনা যাবে না?

পিদিমের মনে হয়, ব্যাঙটার শরীর খারাপ। হয়তো কোনোখানে শুয়ে আছে। একবার দেখা হলে যে পিদিমের ভালো লাগতো খুব। তার সঙ্গে দেখা হলেই, সকলের সঙ্গে দেখা হয়। প্রতিদিন। এরকমই ভাবে সে। কিন্তু আজ কি হবে?

পরিচর্যা হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। টগর গাছটাতে জলও দিয়েছে। টগরটা ছোট আছে বলে, বেশি যত্ন করতে হয়। এবার স্নান করতে হবে। কিন্তু মন নেই পিদিমের। তার মনে হচ্ছে, সে অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে আজ।

শিমুলকে বলতে হবে। শিমুল জানে ব্যাঙের কথা। সে না দেখেও পিদিমের কাছে জানতে চায়,কিরে তোর ব্যাঙ কেমন আছে?

পিদিমের কাছে ব্যাঙ শব্দটা ভালো লাগে না সব সময়। সে তাই, শিমুলকে বলেছিল, ব্যাঙটার একটা নাম দিতে পারলি না?

মেঘও ডাকে। নানা দিকে নানা ডাক। কোনো কোনো ডাক কখনও আর্তনাদ মনে হয়েছে। কেঁপে উঠেছে বুক।

বর্ষার দিনে ব্যাঙের ডাক বিরহীর ডাক। বিষণ্ণ করে। 

পিদিম অফিস করবে না আজ। তার শরীর ও মন কোন কিছুই কাজ করছে না। সে ফুল-ফলের বাড়িতে কাদা মাটির মধ্যে শুয়ে পড়লো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সে দেখতে পেলো, দু'দিক দিয়ে দুটি ব্যাঙ আসছে। একটি ব্যাঙের পরনে লাল বেনারসি। কপালে চন্দন। আরেকটি ব্যাঙ ধুতি-পাঞ্জাবিতে
ঝলমল করছে। হাসছেও। পিদিমের দিকে চেয়ে চেয়ে। পিদিম গা ঝাড়া দিয়ে যে উঠবে কিন্তু উঠতে পারছে না। সে কেবলই মুদে ফেলছে চোখ। চারদিক অন্ধকার দেখছে। দেখছে, জবা ফুলের পাপড়ি কুঁকড়ে গেছে। লাউ কুমড়ো লতায়  সারি সারি মাছি। সে মাছিদের ওড়াতে গেলেও পেরে উঠছে না।

পিদিম একটা ডাক দিলো ব্যাঙের মতোই। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙটাকে দেখতে পেলো সে। এই তো আমার বন্ধু। আমার সখা। সে উজ্জীবিত হয়ে উঠলো। এই সঙ্গে বাড়ির সব গাছপালা ডেকে উঠলো।

ডাক দিতেই হবে। সব সময় ডাক দিতেই হবে। ডাক না দিলে, চারদিক মরুভূমি হয়ে উঠবে। ডাক না দিলে, শুকিয়ে যাবে আকাশের রঙ। ডাক দিতেই হবে।ডাকাডাকির মধ্যে যে স্বর লুকিয়ে থাকে, সেই তো মাধুর্য। সেই তো প্রেম। আলো অন্ধকারে সুখে দুঃখে
একটা ডাক। ব্যাঙের ডাক থেকে যে মিলন, সেই মিলন তো আবহমানের মিলন। পিদিম শুধু শুনবে সেই ডাক। শিমুলের সঙ্গে তার মিলন হোক বা না হোক, সে জানবে সে শুনেছে ব্যাঙের ডাক। সেই তো সৌন্দর্য।

চোখ লেগে গেছলো পিদিমের। ধড়পড় করে উঠে পড়ে সে। দেখতে পায়, বাইরে থেকে এসে ব্যাঙটা গাছপালার মধ্যে ঢুকে পড়ছে।


-----৪ শ্রাবণ ১৪২৮
----২১----৭---২০২১
-----নির্মল হালদার







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ