বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১

মৌমাছিরা / নির্মল হালদার

মৌমাছিরা / নির্মল হালদার



একেকদিন ক্লান্ত লাগে খুব। ঘুম আসে। আর ঘুম এলেই , এসে দাঁড়ায় অবন্তিকা। সে মাথার চুলে বিলি কাটতে থাকে। তখন আমার মনে হয়, আমবাগানে ছুটে যাই। মৌমাছিদের সঙ্গে খেলা করবো।

ঘুম তো ভাঙ্গে না।


ঘুম ভাঙলেই, আমি চলে যাবো মৌমাছিদের কাছে।
ডাকলেই কাছে চলে আসে। কি সুন্দর যে তাদের নাচ। কি মধুময় তাদের গুঞ্জন। আমি নেচে নেচে উঠি।

কি সকাল কি দুপুর যখনই যাই কাছে পাই মৌমাছিদের। ওদের ডানায় ডানায় আমার স্পর্শ রেখে
আমি ওদের নাচ করতে বলি। আমি ওদের গান করতে বলি।
ওরা শোনে আমার কথা। আম হলে কতটা পেকেছে আমাকে জানায়।আমে রঙ এলেই ওদের ফুর্তি। ওরা জানে , আমের মধু। যা আমিও পাই ওদের কাছ থেকে। গাছে মুকুল এলেই ওরা আমাকে ঘরে এসে খবর দেয়। আমিও ছুটতে থাকি আম বাগানের দিকে।

অবন্তিকা এলেই আমি ঝামেলায় পড়ি। সে বলবে, পার্কে গিয়ে বসতে। যদিও পার্কে কিছুই নেই। দুটো দোলনা দুলছে শিশুদের জন্য। এ বাদে একটিও গাছ নেই।

আমি তাকে আম বাগানের কথা বলি। মৌমাছিদের কথা বলি। সে বলে, আমি নাকি রূপকথা শোনাচ্ছি। রূপকথা যে নয় সে না গেলে কি করে বুঝবে। তাকে দেখাতেই পারি, মৌমাছিরা আমার কাঁধে উঠে নাচে। আমার হাতে উঠে নাচে। মনে হবে মৌমাছিদের নাচের সঙ্গে গানের সঙ্গে আম গাছ নেচে নেচে উঠছে।

অবন্তিকার কাছে নাচ মানে মানুষের নাচ। অবন্তিকার কাছে গান মানে মানুষের গান। সে তো আছেই। থাকবেও। তারপরও দেখতে হয়, মৌমাছিদের নাচ।

আম যখন থাকে না তখন মৌমাছিরা আমাকে বলে, জাম বাগানে চলো-----জাম রঙ দেখলেই ভালবাসতে ইচ্ছে করবে।

মৌমাছিদের সঙ্গে অপরাজিতার কাছেও গেছি।শিউলির কাছেও গেছি। আর অবন্তিকার সঙ্গে হোটেল রেস্তোরাঁ। অবন্তিকার সঙ্গে মেলায় মেলায়। চাপ চাপ
ভিড়ে।

মৌমাছিদের সঙ্গে নির্জনতায়।

মন যেখানে সুস্থ হয়। মন যেখানে প্রাকৃতিক হয়। মন যেখানে আলোকিত হয়ে ওঠে। এই কথা বলার পরেও অবন্তিকাকেও আমার চাই।

কখনো কখনো সেও আমার শুশ্রূষা। আম পল্লব মাথায় ছোঁয়ালে যে শুশ্রূষা আসে, সেইরকম শুশ্রূষা না হলেও মানবিক শুশ্রূষা বলতে পারি। যেমন আমার মাথা ধরেছে। অবন্তিকাকে ডাকতেই হবে। কিংবা  ব্যাঙ্গালোর যাওয়ার টিকিটটা সেই মোবাইল থেকে কেটে দেবে। আমি তো প্রযুক্তির কিছুই বুঝি না এখনো। আমার কাছে মৌমাছির আলোবাসা।

মৌমাছিরা একদিন আমাকে বলেছিল আমাকে দেখাবে মৌচাক। আমি দেখেছি। আমি গন্ধ নিয়েছি মধুর। ওরা আমার বাড়ির জন্য মধু দিতে চেয়েছিল।

না, আমি নিইনি।

মৌচাকে মধু থাকুক। জীবন্ত হয়ে।

আজ আমবাগানে এসে আমি হতাশ। দেখতে পেলাম একটা মৌমাছির একটা ডানা ভাঙ্গা। কী করে ভাঙলো? কে ভাঙলো? কার কাছেই বা খোঁজ করবো? আমি মৌমাছিকে কাছে ডেকে জানতে চাইলাম, এই দুর্ঘটনা কি করে ঘটলো? সে চুপচাপ থাকে। সে যে যন্ত্রণা পাচ্ছে, আমি টের পাই। আমি দেখতে পাই, ভাঙ্গা ডানার একটি অংশ মাটিতে পড়ে আছে।

আমি হাতে নিয়ে ডানার সঙ্গে জোড়া লাগাতে চাই। জোড়া লাগে না। আমার কষ্ট হয়। মনে হয়, এ জীবনে কিছুই পারলাম না।

-----২৭ শ্রাবণ ১৪২৮
----১৩---৮---২০২১
-----নির্মল হালদার





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ