পানকৌড়ির ডুব / নির্মল হালদার
১.
হাঁসটাকে দিয়ে এসো জলে
গরুটাকে খুলে দাও
দুয়ারে দাও মাড়ুলি
ঘরটাকে ঘর বলবে
ছিরিছাঁদ আসবে
লক্ষ্মী আসবে তবেই
মানুষকে ছুঁয়ে থাকো
আত্মীয়তা পাবে
মনের টান
মনটাই তো আসল
মনটাকে জাগিয়ে রাখো
হৃদয় থেকে সাড়া পাবে
সাড়াশব্দ পাবে ঘর ও বাইরের।
২.
খুঁটে বাঁধা পান দোক্তা খুলে মা মুখে নিয়েছে। পান চিবোচ্ছে মা।
নইলে ঢুল আসবে।
মহাভারতের কথা শোনাই হবে না।
মহাভারত পড়ে শোনায় দত্ত বাড়ির মেজ বউ।
একটি কাকও ডাকছে না।
গ্রীষ্ম দুপুরের স্তব্ধতায় অভিমন্যু বধ হয়ে গেল।
মা--খুড়ির চোখে জল।
আমি ঘুমিয়ে পড়েছি মায়ের কোলে।
-----২১ শ্রাবণ ১৪২৮
----৭---৮---২০২১
৩.
এসেছি যখন দু'দণ্ড থেকে যাই
ঢালা--মাড় নাই বা দিলে
দুটো কথা দিও।
নুনের কথা না হোক গুড়ের কথা না হোক
শুকনো কথা দিও।
চোখের হাসি না হোক
দৃষ্টি তো দিবেই।
আসন না দাও দু'দণ্ড বসতে দাও
এসেছি যখন।
এসেছি যখন এক ঘটি জল চাইবো
চোখ মুখ ধুয়ে দেখতে চাই,
সজনে গাছ টা আছে তো?
কালো গাইটা?
আগের মতই কি পায়ে শব্দ ওঠেনা?
আগের মতই কি ঘুমাও বেশি?
চুড়ির ঝন ঝন শুনতে পাবো তো?
পড়তে পারবো তোমার মন?
মনের কোথায় ফুল ধরেছে না ফল
আমাকে না বলো,তবে বলতে দোষ নেই
তুমি কেমন আছো?
----২২ শ্রাবণ ১৪২৮
-----৮---৮---২০২১
৪.
কাঁখে কলসি টলমল করছে
মেঘ টলমল করছে
রাস্তা টলমল করছে
পায়ে কাঁটা ফুটলো।
ভেজা শাড়ি থেকে জল ঝরছে
নাকছাবিতে রোদের ঝিলিক
ভেজা চুল থেকেও জল ঝরছে
পায়ে কাঁটা ফুটলো।
কাছে আসছে ঘরের দুয়ার
ছেলের মুখ
রান্নাঘর
রাস্তার পরে রাস্তা খালি পা।
৫.
ধূলায় লুটালেও বাঁশি বাজে
বাঁশির ভিতরে আসা-যাওয়া করে হাওয়া
ধূলায় লুটালেও বাঁশি বাজবে আর
বাঁশির সুর ধরে ধরে
আমিও যাচ্ছি
আমি যাচ্ছি
চাষী বউয়ের কথার দিকে
ভুট্টা ক্ষেতের দিকে
অফলা জমির দিকে
আমি যাই
রাহেড়ের দানা বেড়ে উঠছে
বিরি শাক সবুজ হয়ে উঠছে
বর্ষার জলে ভরে উঠছে বাঁধ
আমি যাই
মেঘের ওড়না উড়ছে বালিকার বুকে।
-----২৩ শ্রাবণ ১৪২৮
----৯---৮---২০২১
----নির্মল হালদার
৬.
দেয়ালচিত্র আড়াল করে দেয়াল লিখন।
দেয়ালে হেলানো গরুর গাড়ির চাকা
ঘুন ধরেছে চাকাতেও।
আগাছা জন্মায়
বিনবিন করে পোকা
খড়ের চালা উড়ে যায়
ছাই উড়ছে ভাঙ্গা উনুনের
উইঢিবিতে কে ঢুকবে?
আমার দুয়ার নাই।
৭.
গাছের গায়ে আঁচড়
ফড়িংয়ের ছেঁড়া ডানা
গরু চলেছে একা একা
জমিতে পড়ে আছে হাল
কাকের মুখে রা নাই
আলপথ ভাঙাচোরা
নদী করছে ধু ধু
মাছের সংসার উৎখাত
বালি পাথরের হাঁ
কুকুরের শুকনো মুখ
মাঠে-ঘাটে গর্ত
সাপের খোলস
এই কথা বলতে দেরি হয়ে যায়।
-----২৪ শ্রাবণ ১৪২৮
----১০---৮---২০২১
৮.
ধীবরের জালে ছটপট করছে মাছ
আঁশটে গন্ধ
কোলাহল।
নদী আপন মনে চলেছে
নদীর জলে লাফায় ছেলে
একটা ডাক।
আখের ক্ষেতে ঢুকলো একটা লোক
আখের পাতায় ঝিলমিল
ধানগাছ মাথা কাঁপায়
উড়ছে কাশ ফুলের রেণু
বুনো লতায় নীল রঙের ফুল
কেন্নো হাঁটছে
আল কোপায় এক রমণী
যুবকের কোমরে হাঁসুয়া
বট গাছের ঝুরি
চকচকে শালপাতায় কে রাখবে অন্ন?
৯.
পড়লো একটা তাল
ধুলো উড়লো
ভাদুরে হাওয়া
চার্চের মাঠ
ভেড়া চরছে
ডোবার জলে শালুকের রঙ
পায়ে চলা পথে স্বর্ণলতা
পড়লো আরো একটা তাল
ছুটে গেল ছেলে
খাটাল থেকে দুধ দোওয়ার শব্দ
শালুক পাতায় রোদের কিরণ
ঘন্টা বাজছে
প্রার্থনা গান
চিরজীবীতের সুর।
১০.
তাল গাছের তলে রসের হাঁড়ি
মাছিরা উড়ছে।
তালপাতাও পড়ে আছে শুকনো।
থালা বাটি হাতে পুকুরে যায় বউ
পিছনে পিছনে কাঁদছে ছেলে
রাস্তায় খালডোব।
আস্তাকুড়ে মুরগির লাফালাফি
মুরগির ছানারা আহার খুঁজছে
খসে গেল মুরগির পালক।
আমি আসছি একটু দাঁড়াও
-----২৫ শ্রাবণ ১৪২৮
-----১১----৮----২০২১
----নির্মল হালদার
ছবি : আলোকচিত্রী সন্দীপ কুমার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন