শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১

উল্কা / নির্মল হালদার

উল্কা / নির্মল হালদার




মেয়েটি একা একা হাঁটছে।

ভাবছিলাম, সামনে বা পিছনে কেউ আছে। অথবা আড়ালে আছে কোন এক কারণে।

অনেকক্ষণ আমিও ঘোরাঘুরি করছি, কাউকে দেখছি না।
মেয়েটি একা একাই ঘুরছে।
এই নির্জনে।

মেয়েটির সঙ্গে আমার আলাপ হচ্ছে না। জানতে পারছি না তার নাম। আমি মনে মনে তাই, নামকরণ করে ফেললাম, উল্কা।

এখানে নদী নেই পাহাড় নেই।

উল্কা কার সঙ্গে কথা বলছে?

কয়েকটা গাছপালা আর একটি জলাধার। এদের সঙ্গে কথা বলা যায়?

আমার ইচ্ছে করছে উল্কার
কাছে যাই। কথা বলি।

এইতো এইতো আপনি-----

----আপনার পরিচয়?
----আমি বৃক্ষ। বন্ধুরা মজা করে বলে, আমি ভিক্ষুক।
আপনি যে কোন নামে ডাকতে পারেন।
----আমি বৃক্ষ বলব। ভারী সুন্দর নাম। শব্দটা উচ্চারণ করলেই, গাছপালার নিবিড়তা। বন্ধুত্ব। ভালোবাসা।

----আপনি একা একা ঘুরছেন সঙ্গে কেউ নেই?
-----আমি একা ঘুরতে ভালোবাসি। আর শুনুন, আপনি আমাকে তুমি করে বললেই ভালো লাগবে।

----আচ্ছা আচ্ছা।
তোমার বাড়ি?

-----এটা জানা কি খুব জরুরী?

-----না জরুরী নয়। তবু তো আমরা একটা ঠিকানা চাই।

-----ঠিকানা?
আমি যে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, এই তো একটা বড় ঠিকানা।

-----তুমি সুন্দর সুন্দর কথা বলো দেখছি।

-----নির্জনের কাছে এলে
কথারা সুন্দর হয়ে যায়।
------মানুষও সুন্দর হয়।
-----সবাই হয় কি?
------সেভাবে সমীক্ষা করে দেখা হয়নি কোনদিন।
-----তর্ক বাদ দিলেই ভালো. এই নির্জনতা তর্কের রব পছন্দ করেনা।
-----তোমাকে নিশ্চয়ই করে।
----আমি দেবদ্যুতি নই। আমি সামান্য একজন মানুষ। আমাকে বড় করে দেখবেন না।
-----তোমার অন্তরের সৌন্দর্য
তোমাকে বড় করে দেখাচ্ছে।
আমি কি করতে পারি।

-----মনে হচ্ছে, আপনিও অন্তর থেকে একজন বড় মাপের মানুষ।
----না না একদম না।
আমার কোন অস্তিত্ব নেই কোথাও। অস্তিত্ব নিয়ে থাকলে
নিজের মধ্যে অনেক টানাপোড়েন চলে। কে মূল্য দিলো কে মূল্য দিলোনা , সব সময় হিসেবে থাকতে হয়।
হিসেব কি সবাইকে মানায়?

---এই কথাটা অমূল্য।
অস্তিত্বের যা জটিলতা তা নিয়ে চিন্তা করা উচিত নয়। বরং প্রকৃতির অস্তিত্বকে নিয়ে
আমরা চিন্তাভাবনা করবো।
কিভাবে প্রকৃতিকে রক্ষা করা যায়।

একি, উল্কা দাঁড়িয়ে পড়লো কেন? হঠাৎ তার মুখ থমথম করছে। কি হলো?

আমি বিচলিত হয়ে মুখোমুখি হই। প্রশ্ন করি, কি হল তোমার? শরীর খারাপ লাগছে না তো?
উল্কা চুপ করে আছে। আমিও
নীরব থাকি।

কিছুক্ষণ পর সে বলে ওঠে, চলুন একটা চায়ের দোকান খুঁজি।

খুঁজতে খুঁজতে এই কথা সেই কথা। এলোমেলো কথারাও আমাদের চারপাশে ঘুরতে থাকে।
দোকান খুঁজে না পেয়ে উল্কা বসে পড়ে একটা পাথরে। সঙ্গে আমিও।

তারপর, রোদ পড়তে থাকে।
হেমন্তের হাওয়ায় শিরশিরানি।
ঠান্ডা। রং পাল্টে যাচ্ছে আকাশের। হঠাৎ উল্কা
আমার পিছনে এসে কাঁধে
মুখ রাখে।

সে কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।
তার চোখের জল আমার কাঁধ 
বহন করতে পারবেতো?



----১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৭
----২৬---১১---২০২০
------নির্মল হালদার






ছবি : সন্দীপ কুমার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ