বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১

পানকৌড়ির ডুব//নির্মল হালদার

পানকৌড়ির ডুব//নির্মল হালদার



১১.
গরুর কাঁধে হালের দাগ
গাছে কুড়ুলের দাগ
পাতায় পাতায় পোকায় কাটা দাগ

শুয়োর চরছে
শুয়োর ছানারাও আছে
ঝোপ জঙ্গলে মাকড়সা

রাস্তায় পিঁপড়ের বাসা
মাটি তুলছে কেঁচোরা
ছাগল চিবোয় ঘাসপাতা

মাথায় কাঠের বোঝা
সাইকেলে সবজি যায়
হাটবার

আমার সবকিছু আমার নয় কিছু।



১২.
পাহাড়তলীর ঘর
পাখির কলরব।
পাহাড়তলীর ঘর
পত্র পল্লব।

আলো হাওয়া
মেঘের আসা যাওয়া
আকাশ ঝুঁকে পড়ছে
শিকড়ের রস।

ধারালো টাঙ্গি
চকচকে কুড়াল
মহুলের গন্ধ
হাঁড়িয়ার সুবাস

মাদলের বোল
বাঁশির সুর
নাচ-গান পরব
শুয়োরের মাংস

থৈ থৈ প্রাণ।


-----২৬ শ্রাবণ ১৪২৮
----১২---৮----২০২১



১৩.
কী দেখবো আর এই তো সকাল

শিশিরের নিঃশব্দ মুখ
পাতায় পাতায় স্তব্ধতা
ফুলে ফলে ধরিত্রী নীরব

কী দেখবো আর এই তো সকাল

পাখিদের ডাকাডাকি
সূর্যের কিরণ
লাঙ্গল কাঁধে একজন

কী দেখবো আর এই তো সকাল

মাটি থেকে ওল খুঁড়ছে
মান পাতায় একটা মাছি
বাদামের ছোট ছোট গাছ

কী দেখবো আর এই তো সকাল

রাস্তায় চলাচল
নিম দাঁতনের গল্প
ভাঙ্গা টিউকল

আমার আগেই এসেছে সকাল অনেক আগে।



১৪.
আমবাগান
মৌমাছিরা উড়ছে।
আমবাগান
মৌমাছিরা উড়বেই।

আমবাগান।

আমের বোঁটা ছিঁড়লেই
আমের মধু।

মধু।

মধুমঙ্গল।

----২৭ শ্রাবণ ১৪২৮
----১৩---৮---২০২১



১৫.
কিছুই তো নেই অনেক কিছুই আছে

ভাঙ্গা মন্দির
দেয়ালে শ্যাওলা
বুড়ো বেল গাছ

বটতলে তাসের আসর
শিশুদের ধুলো খেলা
সাইকেলে ফেরিওয়ালা

মাথায় ঘাসের বোঝা
দড়ি ছেঁড়া বাছুর
পায়রা উড়লো

কিছুই তো নেই অনেক কিছুই আছে

বালিকার কোলে হাঁস
জল ছাপ ছপ পা
পুকুরে সিনান করছে বউ

জামবাটিতে মাড়ভাত
সজনে শাকের সুয়াদ
হাঁড়িতে জনার সিজছে

কুলুঙ্গিতে আয়না
কাঠের কাঁকই
ঝুলছে ময়লা কাঁথা

কিছুই তো নেই আলোছায়া খেলছে




১৬.
ওইতো দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা

রাস্তা যায় 
লোক যায়
গোধূলির আলো

ওইতো দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা

শাঁখ বাজে
সন্ধ্যা তারা আসে
ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বলে

ওইতো দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা

কপালে টিপ
মলিন মুখ
আঁচল টানে ছেলে

ওইতো দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা

কবে আসবে?
কখন আসবে?
কতদূরে কাজের দেশ?

অপেক্ষা ভেঙে পড়ছে কান্নায়।


-----২৮ শ্রাবণ ১৪২৮
----১৪---৮---২০২১



১৭.
স্তব্ধ জবা থেকে ফেটে পড়ছে রঙ
অপরাজিতাও ফুটছে
রঙের স্রোত

টগরের পাশে টগর ফুটছে
মাধবীলতায় ফুলের গৌরব
রঙের স্রোত

শিউলির গন্ধ উড়ছে
মৌমাছির গুঞ্জন
প্রাণের স্রোত

কে আসছো ফুল তুলতে?




১৮.
পুঁইলতায় জড়িয়ে আছে শিশির
ঝিঙেলতায় শিশির
ভোরের হাওয়া

আকাশ জুড়ে আলো
গাছে গাছে কানাকানি
বুয়ান ডালে চড়ুই

লঙকা ফুটেছে লাল
কাঁটা বেগুনের জমি
কাকতাড়ুয়া

কোদাল কাঁধে চাষী
ভেঙ্গে গেছে আল
অড়হরের পাতা কাঁপছে

তুলসীর ঝোপ
কল্কে ফুলের মধু
ফনিমনসা

আর আছে সকল প্রাণের আনন্দ

----২৯ শ্রাবণ ১৪২৮
----১৫---৮---২০২১



১৯.
অন্ধকার রাত্রি
একলা মানুষ
লন্ঠন এগিয়ে আসছে না

নির্জন পথ
হু হু করছে হাওয়া
জ্বলছে নিভছে তারা

কাছে দূরে আত্মীয়তা
কাছে দূরে ঘুম
নিদ্রাহীনতাও

কুকুর ডেকে উঠলো
ঝিঁঝিঁপোকার সুর
জোনাকি এগিয়ে আসছে না

গাছপালা অন্ধকার
একলা মানুষ
রাতচরা পাখির ডাক

সাড়া শব্দ নেই
নিঝুম চারপাশ

নিঃসঙ্গতা।


----৩০ শ্রাবণ ১৪২৮
----১৬---৮---২০২১



২০.
আলতা পরা পা
শাড়ির রঙিণ পাড়
হাতে চুড়ি রুণুঝুনু

উঠোনে ঝাঁট
গোয়াল পরিষ্কার
গরু গেল গোঠে

ন্যাংটো শিশুর কান্না
চালে ঝুলছে কাঁথা
লাউ লতের বেড়ে ওঠা

উনুনে আধপোড়া কাঠ
দড়ির খাটিয়া
হেলানো সাইকেল

বেলা বাড়ছে
সজনে গাছে রোদ
মাড়ুলি শুকায়

ভুবনের এক কোণে মায়ের সংসার



২১.
ভিজতে ভিজতে আসছে ছাগলের পাল
গাছপালাও ভিজছে
বৃষ্টির অন্ধকার।

এ অন্ধকারে মেঘের মাদল বাজে
কে বাজায়?
বিদ্যুৎ ঝলকে কার মুখ দেখি?

ব্যাঙ চলে যায়
কয়েকটা শামুক
বকের উড়াল

ধানের মাথা কাঁপছে
জলে জলে গলে যায় মাটি
খালডোবে জল

পুকুরে লাফায় মাছ
ঘাটে পড়ে আছে দাগ
চেয়ে আছে পাকা ডুমুর

বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় প্রাণের শব্দ।


----৩১ শ্রাবণ ১৪২৮
----১৭---৮---২০২১



২২.
ঝিরিঝিরি নাচ
ঝিরিঝিরি গান
মেঘ ও রোদের খেলা

শিউলি ঝরছে
অপরাজিতার নীল
কল্কে ফুলের হলুদ

ধানক্ষেতে ছুটে বেড়ায় মাছ
ফেটে পড়া তাল
কাশবনে হুটোপুটি

মাঠে-ঘাটে আগাছা জন্মায়
ঘাস কাটছে বুড়ো
ফড়িঙের ডানা

বিরি-কলাইয়ের সবুজ
বাদাম ফুলের মধু
মৌমাছির ডাক

কী ভাষায় কথা বলব আর।



২৩.
মাটি কাটছে
গাঁইতি-কোদাল
মাটি কাটছে
এক চৌকা দু চৌকা।


ঝুড়ি ঝুড়ি মাটি
বালি কাঁকুরে মাটি
মাটি কাটছে
ঘাম

পিপাসা জাগছে
ছায়া নেই কোথাও
বাতাসেও উষ্ণতা
মরীচিকা

মেয়ে মরদের কাম
পুকুর খনন
কাছে দূরে গ্রাম
পাহাড়ের আভাস

দিনমজুরের গল্পে আমলকি নেই।



-----১ ভাদ্র ১৪২৮
-----১৮---৮----২০২১
----নির্মল হালদার










কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ