আমবাগান / নির্মল হালদার
আমবাগানে মালি আছে। তার ইয়া গোঁফ, দেখলেই সবাই ভয় পেয়ে পালায়। এই কারণে আম চুরি হয় না।
আমের যা রঙ যা সুবাস দেখলেই লোভ হয়। আমের যা গড়ন দেখলেই কাছে যেতে ইচ্ছে করে।
মালির ভয়ে বাগানের ধারে কাছে কেউ যেতে পারে না। একবার এক বালক ধরা পড়তে বেঁধে রেখেছিল মালি। বালকের বাবা এসে ক্ষমা চাওয়ার পর বালককে ছাড়া হয়েছিল। সেই থেকে বালকের দলের মালির উপরে খুব রাগ।
আম বাগানের পাশেই বড় একটা মাঠ। ফুটবল হয়। ক্রিকেট হয়। অন্যান্য খেলাধুলাও হয়ে থাকে।
বালকরা এই মাঠেই খেলতে আসে।
খেলতে খেলতে বল গিয়ে পড়ে আমবাগানে।বালকদের ক্যাপ্টেন ঠিক করে দেয়, কে যাবে বল কুড়াতে। দুইদলের ২২টা ছেলে ২২বার বল কুড়াতে যাবে। কারণ একটাই, ২২টা ছেলেই আম পকেটে করে নিয়ে আসবে। মালি টের পাবে না।
বালকরা ইচ্ছে করেই খেলতে খেলতে বল পাঠায় আমবাগানে। আর বল খুঁজতে গেলে মালি কিছু বলতে পারেনা। এদিকে ভেতরে ভেতরে লুকিয়ে একটা দুটো আম বালক পকেটে ঢুকিয়ে নেয়।
গাছে কম পড়ে না আম। মালি বোঝে না বলেই, সে স্বার্থপর । সে ছোটদের ভালবাসে না। সে একদিন ধরে ফেলেছে এক বালককে। বালক মালির হাত কামড়ে, দে ছুট। একেবারে মাঠের দিকে।
মালি বলে, তোদের চালাকি বুঝতে পেরেছি। দাঁড়া, কি করছি আমি দেখতে পাবি। বালকের দল হাসে।
এবার বাগানে বল পড়লেই, মালি ফুটো করে দেয় বল। বল খুঁজতে এসে বালক হতাশ হয়ে পড়ে। তখন আর আম চুরির ইচ্ছে মনে জাগে না। দলের ক্যাপ্টেন বুদ্ধি করলো, বাগানে বল পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে একজন নয় দুজনকে ছুটে যেতে হবে। মালি যেন সুযোগ না পায় বল ফুটো করে দেবার। একজন বল খুঁজলে আরেকজন লক্ষ্য করবে মালি কোথায় কি করছে।
মালি বালকদের সঙ্গে পেরে ওঠে না। বালকদের পকেটে আম আসতেই থাকে। খেলা শেষে মহানন্দে তারা আম খায়। আমের আঁঠি চুষতে থাকে। এবং সেই আঁঠি বালকরা ছুঁড়ে দেয় বাগানেই। ক্যাপ্টেন বলেছে, আঁঠি থেকে আবার গাছ হবে। তাই, আঁঠি নষ্ট করো না।
মালির নাতি আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে। সে ঘর থেকে দেখতে পায় মাঠের খেলা। তার মনে সাধ হয়,
সেও খেলবে। নাতি দাদুর কাছে আবদার করে, তাকে মাঠে নিয়ে যেতে হবে। সে খেলবে সবার সঙ্গে।
মালি দাদু খেলার সময় মাঠে গিয়ে ক্যাপ্টেনকে বলে-------তার নাতিকে খেলাও। ক্যাপ্টেন জানায়
নিশ্চয়ই খেলাবো। তবে আমাদের দিতে হবে আম। মালি রাজি হয়ে যায়। কেন না, মালির নাতি একটাই।
মালি যখন নাতিকে মাঠে নিয়ে যায় খেলাতে তখন সঙ্গে নিয়ে যায় আম। সবার হাতে হাতে আম দিয়ে মালি নিজেও খেলা দেখে।
দেখতে থাকে, তার একটা নাতি নয় তার অনেক নাতি। অনেক মুখ। অনেক আলো ছুটছে।
------১০ ভাদ্র ১৪২৮
-----২৭----৮----২০২১
-----নির্মল হালদার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন