মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১

পানকৌড়ির ডুব / নির্মল হালদার

পানকৌড়ির ডুব / নির্মল হালদার



২৪.
রাস্তা চলে যায়
সোজা যায় বেঁকে যায়
সরু হয়ে যায়

রাস্তায় পায়ের শব্দ
যান চলাচল
ধুলো বালি , পাথর

রাস্তায় হোঁচট
ভিড়-ভয়--ভালোবাসাও
দেখা সাক্ষাৎ

রাস্তায় আলো অন্ধকার
বয়ে যায় জল
উঁচু নিচু খাল ডোব

হঠাৎ একটা গাছ
হাওয়া আসছে পথিকের।



২৫.
দুই পারে দুটি নৌকা
পারাপারের যাত্রি নেই
মাঝে নদী ছল ছল

নৌকা ঘরে উনুন জ্বলে
তেল হলুদের গন্ধ
চড়চড় করে দুপুরবেলা

জল ছুঁয়ে উড়ে গেল বক
পানা ভাসছে শ্যাওলা ভাসছে
পাতা আছে ধীবরের জাল

নৌকার পাল নড়ে উঠছে
মাথার উপরে স্তব্ধতা
নদীর বালিও চুপচাপ

দূরে কোথাও ধোঁয়া উঠছে
ঝমঝম করে ট্রেন চলে যায়
ঝনঝন করে ব্রিজ

একটা ডাক নদীর এপার ওপার।



-----২ ভাদ্র ১৪২৮
----১৯---৮---২০২১



২৬.
শিশু কোলে মা হাঁটছে

খাঁ খাঁ করছে চারদিক
রোদ পুড়ছে রোদের গায়ে
পড়ে আছে পাহাড় ভাঙা পাথর
দেখা যায় বনের পথ

মায়ের কোলে শিশুর হাসি

একটা গরুর গাড়ি আসছে
চাকায় জড়িয়ে আছে কাদা
গাড়োয়নের মুখে ক্লান্তি
মধ্য গগনে সূর্য

মায়ের দুধ টানছে শিশু।




২৭.
ঘর থেকে চলে যাচ্ছে টিনের তোরঙ্গ

দরজার মাথায় সিঁদুরের দাগ
দুয়ারে ঝুলছে আম পল্লব
ঘরের ভিতরে ঘুমিয়ে আছে শিশু
কুলুঙ্গিতে ফটো প্রতিমা

পিলসুজ দাঁড়িয়ে আছে একা
এক কোণে একটা কলসি
থালা-বাটিও সাজানো
আলনায় জামা কাপড়

ঘর থেকে চলে যাচ্ছে টিনের তোরঙ্গ

দেয়ালে ক্যালেন্ডার
দেয়ালে আঙুলের দাগ
এক কোণে কাঁথাকানি,হাঁড়িকুড়ি
ভেঙ্গে গেছে জানলার শিক

আকাশ ঢুকে পড়ছে।



-----৩ ভাদ্র ১৪২৮
----২০---৮---২০২১



২৮.
ধার বাকি করতে নেই

যা আছে যেটুকু আছে খাও পরো
চাল থেকে বেছে নাও কাঁকর
কচু শাক রান্না করো
ওল খুঁড়ে নিয়ে এসো

ধার বাকি করতে যেও না

ধার বাকি শোধ করতে না পারলে
এক জন্মের পাপ
ঋণের বোঝা সব সময়
মাথা থেকে নামিয়ে রাখো

ঘটি বাটি যা আছে বন্ধক দিতেও যেওনা।



২৯.
আম খেয়ে আমের আঁঠি পুঁতি মাটিতে

বীজ ফেলতে নেইরে ভাই
মাটি থেকে এসেছে তাকে মাটিতেই রাখি
ফলে ফলে শোভা পাবে ঘর

ফলের রঙ ফলের আলো সন্তানের মুখে পড়বে

সন্তান আমাদের শ্রী।


-----৪ ভাদ্র ১৪২৮
----২১---৮--২০২১



৩০.
বড়ি শুকানো রোদে
মা--খুড়িরা চুল শুকায়
বাপের ঘরের গল্প করে

সেই যে সেবার এক গাছ কুল
সেই বারেই তো গোপাল হয়েছিল
ঘরে প্রথম পুত্র সন্তান
শাঁখ বেজেছিল

মা---খুড়িদের গল্পে কাক ঢুকে পড়ে
খুঁটে দিয়ে গেল বড়ির মুখ
শীতের বেলা সূর্য ঢলে পড়ে

মায়ের চুলে চিরুনি চালায় খুড়ি।



৩১.
কে ডাকছে ধরণীকে?

মাঠে কাজ করছে একজন
দূরের শালিক কাছে আসে
ইঁট পাঁজায় উড়ছে নিশান

বুড়ি শাক তুলছে
ঝুড়ি ভর্তি রোদ
পাথরের খাঁজে শুকনো মাটি

কে ডাকছে ধরণীকে?

বুনো ফুলের বাহার
বাঁধের জলে শালুক পাতা
বেড়ে উঠছে আখের রস

জনার বীজের আভা
কাশের রেণু উড়ছে হাওয়ায়
কাঁটা ঘাসে বুনছে ঝাঁটা

কে ডাকছে ধরণীকে?

ধরণী দু ফাঁক হলে বীজের রোশনাই।



----৫ ভাদ্র ১৪২৮
----২২---৮---২০২১



৩২.
একটা নিম গাছ
দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষা।
একটা কুল গাছ
দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষা।

কে অপেক্ষা?

একটা কুয়াশা
দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষা।
একটা রোদ
দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষা।

কে অপেক্ষা?

একটা শুকনো হাঁড়ি
দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষা।
একটা শুকনো কলসি
দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষা।

কে অপেক্ষা?

অপেক্ষার কোনো নাম নেই।




৩৩.
শাল পাতায় পিঠে বেঁধে দাও।
যেখানে যে কুটুম আছে দিয়ে আসবো।
আমার সুখ দুঃখ দিয়ে আসবো।
পেঁপে গাছটা যে বড় হয়ে গেছে বলে আসতে হবে।

ইঁদুরে ধান চুরি করলেও চালে কম পড়বে না।
ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি কম পড়বে না।
আলুও হয়েছে দেদার, বাদাম ও বিক্রি করেছি।
হাত পাততে হবে না কোথাও কারও কাছে।

কুটুম কে সব কথা না বললেও
বলে আসতে হবে, ঘরের দিকে যাবে হে।

ঘরের দিকে যাবে গো, ছোটটার মুখেভাত দিব।



----৬ ভাদ্র ১৪২৮
----২৩---৮---২০২১



৩৪.
কালি লেগে আছে থাক-----
তবে তো বুঝবে হাঁড়ি চড়েছিল উনুনে।
তবে তো বুঝবে রাঁধাবাড়া হয়েছিল।
পাত পড়েছিল।

গেরস্থের ঘরে উনুন টাও মঙ্গলের চিহ্ন।
উনুন জ্বললেই দুয়ারে দাঁড়ায় কাক ও কুকুর।
ভুলে গেলে চলবে না,
ওরাও আমাদের সংসারের

শুভকামনায় আছে।



৩৫.
একটা বাঁধেই সিনান করো।
জলের ভালো-মন্দ বুঝবে।
একটা ঘাটেই নামো, তোমাকে চিনবে
বাঁধের ঘাট

তুমিও চিনবে ঘাটের পাথর।

যে পাথরে পা ঘষতে ঘষতে
মনে পড়বে না, কে বহন করেছিল পাথর।
ডুব দিতে দিতেও মনে পড়বে না
কারা খুঁড়েছিল বাঁধ।



৩৬.
এক মুঠি চালের সঙ্গে দুটো আলু দাও।
যদি পারো একটু নুন দাও।
যদি ইচ্ছে করে শুনে নাও হরিনাম।
তুলসী গাছটাও খুশি হবে সকালের হরিনামে।

তুলসী গাছে জল দিয়েছো?

কপালে রসকলি না আঁকো মাথায় ঠেকিয়েছো ধূলা?



----৭ ভাদ্র ১৪২৮
----২৪---৮----২০২১
----নির্মল হালদার








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ