মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

দরিয়া / নির্মল হালদার

দরিয়া / নির্মল হালদার


দরিয়ার মনটা আজ অস্থির হয়ে আছে। কলেজে বিহু মনে করে একজনের পিঠে থাপ্পড় মেরেছিল।
সে সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে বলেছিল,
ঠিক আছে ঠিক আছে-------তুমি এখন ফোন নাম্বারটা দাও। পরে কথা বলবো।
দরিয়া ফোন নাম্বার দেয়নি।

এখন সে ভাবছে------দিলেই বা কি হতো। বড়জোর প্রেমের প্রস্তাব করতো।
করলেই বা কি ক্ষতি ছিল।
বিহুর সঙ্গে প্রেম থাকলে অন্য কারো সঙ্গে কি কথা বলা যায় না?
প্রেমের প্রস্তাব নানা জনের কাছ থেকে আসতে পারে। তা গ্রহণ করা বর্জন করা তার হাতেই তো আছে। আর
কথা বলতে তো দোষ নেই। বন্ধুত্ব করতে দোষ নেই। তবে কেন আজ
ওই ছেলেটিকে ফোন নাম্বার দিলো না?
কিসের ভয়? কেন ভয়?
বিহুকে সে কি ভয় পায়?

শালের পাশে শিমুল তো দাঁড়িয়ে থাকে।

ছেলেটিকে কলেজে আর দেখতে
পায়নি।কাল খুঁজতে হবে । এই ভেবে
দরিয়া ঘর থেকে বাজার দিকে চলে এলো। 

মফস্বল শহর। ছোট।

এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে দরিয়া
এক জুতোর দোকানে দেখতে পায়,
সেই ছেলেটিকে। মনে হচ্ছে, জুতো কিনছে সে।
দু'জনের চোখ পড়ে যায় দু'জনের উপরে। ছেলেটা দরিয়াকে দোকানের ভেতরে ডাকে। জানতে চায়, তুমি কি জুতো কিনবে?
দরিয়া "না" করে। তখন ছেলেটি বলে,
আমি যদি তোমাকে এক জোড়া জুতো
উপহার দিই?
দরিয়া "না"করে আবার। সে বলে,
আমি বরং তোমার জুতো পছন্দ করে দিতে পারি। তুমি যদি চাও।
ছেলেটি বলে, অবশ্যই। মেয়েদের পছন্দ মন্দ হয় না।  তারপরেই ছেলেটি বলে, আমরা কিন্তু কেউ কারোর নাম জানি না। জানতেও চাই না। আমি তোমাকে ইমলি বলবো। তুমি আমাকে কি বলবে, তুমি ঠিক করো। 
দরিয়া বলে, তোমাকে আমি ভোঁদড় 
বলবো। রাজি তো?
ছেলেটি বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ। যে কোন একটা নাম। ছেলেটি কিংবা ভোঁদড় মনে করিয়ে দেয়,ইমলি জুতো পছন্দ করে দেবে।

ইমলির পছন্দ হয়না। সে  অন্য দোকানে যেতে বলে। সেখানেও
একই অবস্থা। ভোঁদড় বলে, আজ বাদ দাও। কাল আবার আসবো। জুতোর নামে দু'জনের দেখা হবে।
খুব ভালো না?
দরিয়া কিছু না বলে, হাসে শুধু। 

ভোঁদড়  ইমলিকে বলে, কলেজে
ফোন নাম্বার চেয়েছিলাম। পাইনি।
এবার কি দেবে?
ইমলি বা দরিয়া এবার বলে, ফোন নাম্বার যখন দিইনি, আর দেবো না।
আমাদের দেখা হবেই হাটে বাজারে।
কলেজ তো আছেই।
এবার ভোঁদড়ের কথা------হঠাৎ করে
রাত্রিবেলায় কথা বলতে ইচ্ছে করলে?
দরিয়ার কথা------ইচ্ছে করলেও দমন করবে। দেখো না, মনের কী অবস্থা হয়। দেখো না, মনকে তুমি বাঁধতে পারছো কিনা।

দু'জন  দু দিকে চলে যায়।

দরিয়া আবার ভাবতে শুরু করে, দেখা হওয়ার পরও কেন সে ফোন নাম্বার দিলো না? তবে কি সে বিহু বাদ দিয়ে
অন্য কোনো ছেলেকে ভয় পায়? কিসের ভয়? সব ছেলেই কি আলাপের পর পরই আক্রমণ করে?
শারীরিক আক্রমণ?

সে মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দেয়।
নিজেকে সংকীর্ণ মনে করে। সে মনে মনে বলেও--------একটি ছেলে যেমন মানুষ, তেমনি একটি মেয়েও মানুষ।
মানুষ মানুষকে আক্রমন করবে কেন?
কাল কলেজে দেখা হলেই ফোন নম্বরটা দিয়ে দেবে।

সে ঘরে ঢুকেও আনমনা হয়ে গেল।

চুল খুলতে খুলতে আয়নার মধ্যে দেখতে পায় ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।
সে ছেলেটির মাথার চুল ঘেঁটে দিয়ে বলে-------এই নাও আমার ফোন নাম্বার।

দরিয়া লিপস্টিক দিয়ে আয়নার মধ্যে লিখে দেয় নিজের ফোন নাম্বার-------
৬৯০৪৩১২২৫২।


----২৭ ভাদ্র ১৪২৮
----১৩----৯---২০২১






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ