শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

হোয়াটসঅ্যাপ / নির্মল হালদার

হোয়াটসঅ্যাপ / নির্মল হালদার




আমি কি মহিলার কাছে জানতে চাইবো, আপনি কী ফুল পছন্দ করেন? আমি কি জানতে চাইবো,
কী রঙ আপনার প্রিয়?

না না,কোনো কিছুই জানতে চাইবো না। চুপচাপ থাকাই সহজ উপায়। ঘনিষ্ঠ হলেই যত বিপদ।

মহিলা আমার কাছে আমার ফোন নাম্বার চেয়েছিলেন------আমাকে ফোন করবেন। আমি ফোন নাম্বার দিইনি। যদি মহিলার কাছাকাছি চলে আসি, ঝামেলায় পড়তে পারি। জটিলতায় পড়তে পারি। এই ভয়ে 
আমি মহিলার নাম জানতে চাইনি।
শুধুমাত্র হোয়াটসঅ্যাপে সুপ্রভাত শুভ রাত্রি। এর বাইরে যেতে চাই না। খামোকা বিপদ ডেকে আনার দরকার কি? মহিলা যেখানে আছে থাক। আমিও যেখানে আছি থাকবো। বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া ঠিক কাজ হবে না।

মহিলা আমাকে মাঝে মাঝেই রবীন্দ্র নাথের গান পাঠিয়ে থাকেন। আমি শুধু পরিবর্তে ধন্যবাদ পাঠাই। বেশি কথা বললে যদি জড়িয়ে পড়ি, যদি
কাছাকাছি চলে আসি, আমার খুব ভয় করে।

আমার স্ত্রী ছাড়া আমার জীবনে ঘনিষ্ঠ
কোনো মহিলা নেই। মা ছিল একসময়। গত হয়েছে অনেককাল আগে। তা বাদে পাড়া-প্রতিবেশী মহিলাদের সঙ্গে আমি তেমন কথাই বলি না।
আমার কেবলই ভয় করে। পাছে
কারো সঙ্গে জড়িয়ে--মড়িয়ে উঠি।
কী হবে তখন?
আমার দুটি ছেলে মেয়ে। তারা স্কুলে যায়। তারা আমার কাছে ছুটে আসে
বাবা বাবা করে। তাদের আমি কোনো
কারণে উপেক্ষা করতে পারবো না।

মহিলা একদিন হোয়াটসঅ্যাপে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কটার সময় ঘুম থেকে উঠি। কটার সময় ঘুমোতে যাই।
আমি উত্তর দিলাম না। উত্তর দিলে
যদি নৈকট্য বাড়ে? যদি কাছাকাছি চলে আসি?
এই কাছাকাছিকে আমি খুব ডরাই।

একদিন ভাবছিলাম, হোয়াটসঅ্যাপে
সুপ্রভাত জানাবো না। শুভরাত্রি
জানাবো না। কী দরকার? সম্পর্ক বজায় রাখা, কী দরকার? সম্পর্ক মানেই তো ভালোবাসা। সম্পর্ক মানেই তো সহানুভূতি। সম্পর্ক মানেই তো আদান-প্রদান।

কী দরকার?

মহিলা দূরে আছে দূরে থাকুক।

তিনি যতই লিখুন, আজকের দিনটা খুব ব্যস্ততায় কাটলো। অথবা তিনি যতই লিখুন, আমার মন খারাপ করছে।
আমি উত্তর করবো না। কথা বাড়তে বাড়তে অনেক কথা। বেড়ে যাবে স্বাভাবিক নিয়মে। আমি কোনো দিক থেকেই এগিয়ে যাব না।

আমি যেমন দশটা পাঁচটা অফিস করি, আমি যেমন স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে নিয়ে সংসার করি, করে যাব। নতুন কোনো সম্পর্কে নিজেকে জড়াবো না আর।

মহিলার কি উদ্দেশ্য আমিতো জানিনা। মহিলা কি চাইছে আমার জানা নেই। এমনকি মহিলাকে এখনো দেখিনি আমি। হঠাৎ যদি আজ বাদ
কাল দেখতে ইচ্ছে করে ?

না বাবা দেখা দেখিতে আমি নেই।
যদি নতুন করে আমার গাছে মুকুল আসে? সেই আতঙ্কে আমি কাছে যেতে নারাজ। যদি কাছে যাই যদি
এক কাপ চা এগিয়ে দেয়? তাহলেই তো হয়ে গেল।
না বাবা, আমি ওসবে নেই। একদম নেই।
আমার স্ত্রী আমার মাটি ও আকাশ।
আমি দুবেলা মাটির দিকে তাকাই।
আকাশের দিকে তাকাই। এই আমার সুখ। অন্য কোনো অসুখ নিয়ে আমি বাঁচতে পারবো না। এবং আমার স্ত্রী
আমার সন্তানদের মা। আমি তাকে
অগ্রাহ্য করতে পারি না।

আমি তাই মহিলার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার উড়িয়ে দেবো। কি করে যে আমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার পেয়েছেন আমি জানি না। তিনি তাই প্রথম থেকে নিজেই এগিয়ে এসেছেন। এক্ষেত্রে আমার কোনো দোষ নেই।

আমি ছাপোষা মানুষ। আমি একজন
হরিপদ কেরানি। আমার কোনো বিষয়ে কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। উচ্চাশা নেই। লোভ নেই। ছেলে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দেবো-------এরকমই মনের সাধ।

মহিলা দূরে আছেন দূরেই থাকুন।
তাকে কোনোদিন বলবো না, আমি র চা পছন্দ করি। আমি চারবার চা খাই।
চা আমাকে এনার্জি দেয়।
তাকে কোনোদিন বলবো না, চুনো মাছ আমার পছন্দের তালিকায়। বলতে গেলেই তো, ছোঁয়া ছুঁয়ির জায়গায় চলে আসতে পারি।
বাবারে, আমি মরে যাব।  
তিনি তার মত একা একা জীবন যাপন করছেন, করুন। আমি আমার মতো যাপন করছি জীবন, এইতো বেশ।

মহিলার কত বয়স আমার জানার আগ্রহ নেই। মহিলা চাকরি করেন, নাকি শুধু ঘরকন্না করেন, আমার জানার আগ্রহ নেই।
তবে জেনে ফেলেছি, মহিলা বিধবা।

এক্কেবারে একা থাকেন।

তার নিসঙ্গতার কাছে আমি পৌঁছোতে চাই না।

-------১৮ ভাদ্র ১৪২৮
------৪----৯----২০২১
------নির্মল হালদার








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ